প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ০৮:৩৮
চাঁদপুর পৌরসভায় শুদ্ধি অভিযানে বিলম্বিত পদক্ষেপ

চাঁদপুর পৌরসভায় একযোগে পাঁচজনের বদলির আদেশ হয়েছে। এর আগে বদলিকৃত স্থানে যোগদান করেছেন দীর্ঘ দু যুগ ধরে এ পৌরসভায় থাকা দোর্দণ্ড প্রতাপশালী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন হাওলাদার। গত ১৯ মে ২০২৫ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত এক আদেশে চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও পৌর কর্মচারী সংসদের সভাপতি মফিজউদ্দিন হাওলাদারকে বদলিকৃত স্থানে যোগদানের নির্দেশ দেন। ওই আদেশের পর মফিজউদ্দিন হাওলাদার নতুন বদলিকৃত কর্মস্থল কক্সবাজারের মহেশখালী পৌরসভায় যোগদান করেন। এর আগে তিনি চাঁদপুর পৌরসভায় দীর্ঘ দু যুগ ধরে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের নানা অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চাঁদপুর জেলা কার্যালয় তাকে পত্র প্রেরণ করে। তিনি সশরীরে হাজির হয়ে দুদক কার্যালয়ে তার যাবতীয় তথ্য দাখিল করেন বলে স্থানীয় দুদক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়। অপরদিকে চাঁদপুর পৌরসভার উচ্চমান সহকারী মো. রিয়াজ উদ্দিনকে মতলবের নারায়ণপুর পৌরসভায়, নিম্নমান সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক কামাল হোসেন ও সহকারী বাজার কর আদায়কারী এমদাদ হোসেন মিলনকে মতলব উত্তরের ছেঙ্গারচর পৌরসভায়, অফিস সহায়ক মো. শাহজাহান প্রধানিয়া ও মালী মুক্তার আহমেদকে মতলব দক্ষিণের নারায়ণপুর পৌরসভায় বদলি করা হয়। ২৮ মে ২০২৫ (বুধবার) চাঁদপুর জেলার স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক ও চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া তাঁর স্বাক্ষরিত এক পত্রে এই আদেশ দেন। আগামী ৪ জুনের মধ্যে তাদেরকে বদলিকৃত স্থানে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, বেশ ক’জন কর্মকর্তা-কর্মচারী চাঁদপুর পৌরসভায় চাকরির কয়েক বছরের মধ্যে বিশাল বিত্ত বৈভবের মালিক হন। এদের মধ্যে এখানে কেউ এক যুগ, দেড় যুগ, দশ বছর, পনেরো বছর ধরে চাকুরি করে আসছেন। এই বদলির পর চাঁদপুর পৌরসভায় দীর্ঘ বছর ধরে থাকা অনেকের মাঝে এখন বদলি আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এই আতঙ্ক কেটে যেতো যদি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি (মেয়র ও কাউন্সিলর) এবং রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় থাকতো। মেয়র/কাউন্সিলর ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের কাউকে না কাউকে যে করেই হোক ম্যানেজ করে অতীতে যারা যুগের পর যুগ, বছরের পর বছর, এমনকি পুরো চাকুরি জীবন একই কর্মস্থলে কাটিয়ে দিয়েছেন, বর্তমানে কর্মরতরা একই তরিকা অবলম্বন করতেন।
চাঁদপুর পৌরসভার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সোচ্চার হলে এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। সেজন্যে এদের বিরুদ্ধে অনেক বিলম্বে পদক্ষেপ হিসেবে শাস্তিমূলক বদলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদের কারো কারো নিয়োগই তো হয়েছে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে, যারা পৌরসভায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চলতো। এই পৌরসভায় প্রকৃত যোগ্যতায় কতোজনের চাকুরি হয়েছে সেটা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। কেননা কাউন্সিলরদের/ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলে-মেয়ে/ ভাতিজা-ভাতিজিসহ অন্য আত্মীয়-স্বজন কিংবা বিরাট অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে কিংবা ঊর্ধ্বতন কারো সুপারিশে অন্য অযোগ্যরাই বারবার চাকুরি পেয়েছে এই পৌরসভায়। যার ফলে লোকদেখানো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিরীহ সাধারণ চাকুরি প্রার্থীদের সাথে করা হয়েছে প্রহসন। অপ্রয়োজনীয়/অতিরিক্ত নিয়োগের অভিযোগও রয়েছে অতীতের চেয়ারম্যান/ মেয়রদের বিরুদ্ধে। সেজন্যে চাঁদপুর পৌরসভায় বর্তমানে কর্মরতদের মধ্যে দুর্নীতিবাজ যারা রয়েছে, তাদেরকে নানাভাবে শায়েস্তা করতেই হবে, যেমন-সাময়িক বরখাস্ত, তদন্তে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে চূড়ান্ত বরখাস্ত, শাস্তিমূলক বদলি, ইনক্রিমেন্ট হেল্ডআপ ইত্যাদি। আশা করি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো নিয়ে ভাববে এবং অবিলম্বে চাঁদপুর পৌরসভায় শুদ্ধি অভিযান চালাবে।