রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৫, ০৭:৩৭

খাল খননের নামে যখন পুকুর চুরি নয়, সাগর ডাকাতি!

অনলাইন ডেস্ক
খাল খননের নামে যখন পুকুর চুরি নয়, সাগর ডাকাতি!

‘পুকুর চুরি’ একটি বহুল প্রচলিত বাগধারা। এর অর্থ বেপরোয়া চুরি বা বড়ো ধরনের চুরি। কিন্তু চাঁদপুর কণ্ঠের দুদিনের সংবাদে দেখলাম ‘সাগর ডাকাতি’ নামে নূতন বাগধারা প্রবর্তনের প্রয়াস চালিয়েছে একটি সংগঠন। সংগঠনটির নাম সিআইপি কৃষক সংগ্রাম কমিটি। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থেকে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রবীর চক্রবর্তী পাঠিয়েছেন একটি সংবাদ। এই সংবাদে লিখা হয়েছে, প্রবল ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনিয়মের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামলেন সাধারণ কৃষকরা। বৃহস্পতিবার (২৯ মে ২০২৫) দুপুরে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে চাঁদপুর সিআইপি কৃষক সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে তারা মানববন্ধন করেন।

সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নামে এবং সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহের সহযোগিতায় খাল খনন ও ড্রেন সংস্কারের নামে সরকারের বরাদ্দকৃত টাকার হরিলুট থামানো এবং যথোপযুক্ত তদন্তের দাবিতে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সিআইপি কৃষক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন দুলাল বলেন, ফরিদগঞ্জের সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নে খাল খনন ও ড্রেন সংস্কারের নামে সাগর ডাকাতি হয়েছে। ওই ইউনিয়নের কয়েকটি খালে ২৮০০ মিটার খাল খননের জন্যে ৫৯ লাখ টাকা ও একটি ড্রেনের সংস্কারের জন্যে ৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও মাত্র ৬ লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা হরিলুটের ব্যবস্থা হচ্ছে। আমরা সিআইপি কৃষক সংগ্রাম কমিটি এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনো ভাবেই মেনে নেবো না। এই মানববন্ধন থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে এই বিষয়ে সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। কারণ চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের খাল খনন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন নিজেরা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় কিছু খাল খনন করার ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু একটি ইউনিয়নে খাল খননের নামে ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে এসেও যদি কাজের নামে লুটপাট হয়, তাহলে আমরা তা মেনে নিবো না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে অবিলম্বে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কথিত সমিতির কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ সময় আরো ক’জন বক্তব্য রাখেন।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মে ২০২৫ দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে ফরিদগঞ্জের সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের খাল খননের নামে ৬৩ লাখ টাকার প্রকল্প ৬ লাখ টাকায় শেষ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। যাতে রাজনৈতিক কিছু নেতাসহ অনেকেরই ঘুম হারাম হয়ে যায়। বিগত সরকারের এক সমর্থক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে ফি বছর লাখ লাখ টাকার বরাদ্দ এনে নয়ছয় করে নিজের পকেট ভারি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সমবায় সমিতির নাম করে এসব কাজ গুটি কয়েক ব্যক্তিই করছেন। যদিও বিগত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এই গোষ্ঠীটি রাজনৈতিক চাপের কারণে কিছুটা চুপসে গেলেও খোলস বদলে বা সহযোগিতা নিয়ে আবারো স্বরূপে ফেরার চেষ্টা করছেন। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের কাজ শেষ না করেই পুরো অর্থ লোপাটের ধান্দায় রয়েছেন। যদিও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানান, কাজের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। তাই বিলের একটি অংশ এখনো দেয়া হয়নি।

খাল খননের জন্যে যতো টাকা এলজিইডি ইতোমধ্যে পরিশোধ করেছে, সেটা কি সরজমিনে কাজ দেখে ও ভালো করে বুঝে নিয়ে করেছে, না পার্সেন্টেজ বুঝে নিয়ে করেছে, সেটা কিন্তু তদন্ত করা দরকার। এই তদন্ত এলজিইডি না করে অন্য কাউকে দিয়ে করানো দরকার। ফরিদগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তারা অপ্রয়োজনীয় ব্রীজ ও আরো কিছু প্রকল্প দেখিয়ে যেভাবে টাকা-পয়সা ভাগ-বাঁটোয়ারায় আত্মসাৎ করেছেন, হাজীগঞ্জ ও সদর উপজেলায় ব্রীজ না বানিয়ে যেভাবে টাকা পকেটে পুরেছেন, হাইমচর ও কচুয়ায় খাল ছাড়া মাঠে ব্রীজ বানিয়ে এবং লালমাই পাহাড়ে ব্রীজ বানিয়ে প্রকল্পের টাকা জায়েজ করেছেন, তাতে ‘পুকুর চুরি’ বাগধারাকে যথার্থ নয় বলেই মনে হয়েছে। একে ‘নদী চুরি’ বা ‘সাগর চুরি’ বলাটাই সংগত। কিন্তু ফরিদগঞ্জের সিআইপি কৃষক সংগ্রাম কমিটি খাল খনন ও ড্রেন নির্মাণের ৬৩ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকায় কাজ শেষ করে ৫৭ লাখ টাকা হরিলুটের প্রয়াসকে সাগর চুরি বলতেও নারাজ। তারা এমন প্রয়াসকে ‘সাগর ডাকাতি’ বলে মানববন্ধন করেছে। আমরা এই কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই এজন্যে যে, তারা নিজ এলাকার স্বার্থে ধান্ধাবাজদের দ্বারা ম্যানেজড্ হননি। তাদের সাথে সচেতন ও প্রতিবাদী চেতনার মানুষ মাত্রকেই সহমত পোষণ করা দরকার বলে মনে করি। কেননা গেলো বছর চাঁদপুর সেচ প্রকল্প (সিআইপি) অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতা থেকে যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, তার প্রধান কারণ ছিলো খননের অভাবে খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণ করতে না পারা। সেই খাল খননের নামেই যদি বাস্তবে খরচ করা ৬ লাখ টাকার সাড়ে ৯গুণ অর্থাৎ ৫৭ লাখ টাকা হরিলুটের প্রয়াস চালানো হয়, তাহলে তাকে ‘সাগর ডাকাতি’ বললেও তো কম হয়ে যায়, কেননা এমন অপপ্রয়াস তো ‘মহাসাগর ডাকাতি’র সমতুল্য।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়