শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫, ১১:১৭

ডিবি, ডিএমপিকে ধন্যবাদ

অনলাইন ডেস্ক
ডিবি, ডিএমপিকে ধন্যবাদ

‘চাঁদপুরের তাজা ইলিশ বিক্রি’র ফাঁদ, ডিবির জালে ধরা ৮’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে প্রতিজন পাঠক সন্তুষ্ট হয়েছেন। কেননা এমন প্রতারকদের অপতৎপরতায় চাঁদপুরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছিলো দীর্ঘদিন। এর ফলে চাঁদপুরের সুনাম কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার হবে এবং প্রতারকদের তৎপরতা অনেক কমবে, ক্রমশ নির্মূলও হতে পারে।

সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, অনলাইনে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে ‘চাঁদপুরের তাজা ইলিশ বিক্রি’র প্রতারক চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। বুধবার (২৮ মে ২০২৫) ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর অনলাইন শপ’, ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজার’, ‘চাঁদপুর ইলিশ ঘাট’ ইত্যাদি নামে পেজ খুলে অনলাইনে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে অভিনব কৌশলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন : আনাছ শেখ (২১), কামাল শেখ (২১), ইয়ানুর মোল্লা (২১), জোবায়ের হোসেন (২৩), রুবেল শেখ (২৯), সাগর হোসেন (২৩), মো. আলীনূর ইসলাম (১৮) ও শরিফুল ইসলাম (২১)। সোম ও মঙ্গলবার ( ২৬ ও ২৭ মে) খুলনা, নড়াইল ও যশোরে বিশেষ ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

ডিবি-সাইবার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর জনৈক মো. মাসুম বিল্লাহ ‘চাঁদপুর ইলিশ বাজার’ নামক ফেসবুক পেজে সুলভ মূল্যে ইলিশ বিক্রির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে ইলিশ অর্ডার দেন এবং তাদের দেয়া একটি বিকাশ নম্বরে ১৫ হাজার টাকা অগ্রিম পাঠান। কিন্তু তিনি কোনো ইলিশ পাননি। এ ঘটনায় মো. মাসুম বিল্লাহর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়।

মামলাটি পরবর্তী সময়ে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তাধীন এই মামলায় তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে ডিবি। পরে সোম ও মঙ্গলবার খুলনা, নড়াইল ও যশোরে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের আট সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ডিবি-সাইবার সূত্রে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন শপের ছবি ব্যবহার করে পেজ খুলে চাঁদপুরের তাজা ইলিশ সুলভ মূল্যে সরবরাহের বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলো। তারা ইলিশ সরবরাহের অর্ডার নিয়ে অগ্রিম টাকা গ্রহণ করতো। টাকা নেয়ার পর তারা গ্রাহকদের ইলিশ মাছ বুঝিয়ে দিতো না এবং কোনো যোগাযোগ রাখতো না। চক্রটির মূল হোতা আনাছ শেখ ও শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে তারা বিভিন্ন ব্যক্তির এনআইডি সংগ্রহ করে মোবাইল কোম্পানি, বিকাশ ও নগদের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় ভুয়া সিম ও অ্যাকাউন্ট খুলে এই অভিনব প্রতারণা চালিয়ে আসছিলো। তারা দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে এই অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তাদের প্রতারণার শিকার অসংখ্য ভুক্তভোগী ডিএমপির বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগ করেছেন, যার অনেকগুলো ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগে তদন্তাধীন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন এবং চক্রটির সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে ডিবির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আট ইলিশ প্রতারককে ধরে কার্যত চাঁদপুর জেলাবাসীকে স্বস্তি উপহার দিয়েছে। জাতীয় মাছ ইলিশের প্রাচুর্য আগের মতো না থাকায় চাঁদপুরে এর দুর্মূল্য লেগেই আছে। এমন বাস্তবতায় অনলাইনে ইলিশের লোভনীয় বিজ্ঞাপন ও সুলভ মূল্য দেখিয়ে ক্রেতা আকর্ষণ করে এবং অগ্রিম টাকা আদায় করে ইলিশ আর সরবরাহ করে না। অথচ এসব প্রতারকের অবস্থান চাঁদপুরে নয়, অন্যত্র। যেটি ডিবি, ডিএমপির জালে ৮জন ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা চাঁদপুর জেলা ডিবিকেও ডিবি, ডিএমপির মতো তৎপরতা চালানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

আমাদের জানা মতে, অনলাইনে ইলিশ বিক্রিতেই কেবল প্রতারণা হয় না, দেশের অন্যতম বৃহৎ ইলিশ অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটেও ইলিশ বিক্রিতে প্রতারণা করা হয়। বঙ্গোপসাগরে কিংবা অন্যত্র ধরা পড়া ইলিশকে চাঁদপুরের ইলিশ বলে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা হয়। তবে এই অসাধু কাজে কিছু লোভী ব্যবসায়ী জড়িত, সব ব্যবসায়ী নয়। এ ব্যাপারে সাদা পোশাকে এই মাছঘাটে ডিবির পর্যবেক্ষণ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান দরকার। আমরা বারবার এই সম্পাদকীয় নিবন্ধে উপরোল্লিখিত পর্যবেক্ষণ ও অভিযানের কথা লিখলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রায় নীরবতাই পালন করে, তবে মাঝেমধ্যে লোকদেখানো তৎপরতা চালায়। অবশ্য এর পেছনে মুখরোচক নানা কথা ওয়াকিবহালের মুখে মুখে ফিরে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়