বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৫, ০৮:৪২

বড়ো দুর্ঘটনার আগেই সেতুটির সংযোগ সড়কের দ্রুত মেরামত চাই

অনলাইন ডেস্ক
বড়ো দুর্ঘটনার আগেই সেতুটির সংযোগ সড়কের দ্রুত মেরামত চাই

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন ফরিদগঞ্জের ‘নিকলি হাওরে’র খ্যাতিতে বেশ পরিচিত ডাকাতিয়া নদীর গাজীপুর-ধানুয়া সেতুর সংযোগ সড়কে বড়ো ধরনের ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুর গাজীপুর অংশের সংযোগ সড়কের নিচের বালি সরে গিয়ে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর হাট ও যানবাহনের বাড়তি চাপে এবং বৃষ্টি বাড়লে এই ভাঙ্গন বেড়ে সেতু থেকে সড়ক আলাদা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যদিও উপজেলা প্রকৌশলী দ্রুত ভাঙ্গন স্থান মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।

জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের গাজীপুর ও গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর ওপর ৬ কোটি ২২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৯ মিটার লম্বা সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসে সেতুটির কাজ শেষ হয়। দুপাড়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও সেতুর নির্মাণশৈলীর কারণে এটি দ্রুত ধানুয়ার ‘নিকলি হাওর’ নামে পরিচিতি পায়। প্রতিদিন বিকেলে জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন স্থানের হাজারো দর্শনার্থী বিনোদনের আশায় এই সেতুটিকে বেছে নেয়। দুই ঈদসহ বিভিন্ন বড়ো ধরনের ছুটির সময়ে ভ্রমণপিপাসুদের আড্ডার স্থান হিসেবে এখনো জনপ্রিয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এবং অপরিকল্পিত মৎস্য চাষ ও অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে সেতু উদ্বোধনের পূর্বে সংযোগ সড়কের ধানুয়া অংশে ভাঙ্গন দেখা দেয়। ওই সময়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত মেরামত করে। কিন্তু এ বছর সেতুর গাজীপুর অংশের সংযোগ সড়কে বড়ো ধরনের ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এছাড়া নির্মাণের পর থেকে সেতুর দুপাশের সড়কে আর কোনো মেরামত ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কোনো কাজ হয়নি। ফলে সেতুকেন্দ্রিক এক সময়ের উপচেপড়া ভিড় এখন অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। যদিও ছুটির দিনগুলোতে বিনোদনপ্রিয় মানুষের অন্যতম আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু এখনো এই সেতু।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম, গাড়ি চালক মফিজুল ইসলাম, স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী আল আমিনসহ আরো অনেকেই জানান, ভাঙ্গনের কারণে ইতোমধ্যে বেশ ক’টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দিনদিন ভাঙ্গনের পরিধি বাড়ছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে সেতু থেকে সড়ক আলাদা হয়ে যাবে। ফলে ডাকাতিয়া নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দা ছাড়াও সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও এই অঞ্চলের লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে বাড়বে। গাজীপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, সেতুর কারণে তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি হলেও সেতুর দুুই পাড়ের রক্ষণাবেক্ষণ ও দৃষ্টিনন্দন করার জন্যে কর্তৃপক্ষকে আরো উদ্যোগী হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আদতে কেউই আর উদ্যাগ না নেয়ায় ক্রমেই সেতুৃটি তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বেশ কয়েকজন জানান, সেতুর দু পাশে অপরিকল্পিত মৎস্য চাষ ও অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে সেতুর সংযোগ সড়কের নিচের বালি সরে গিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ বলেন, ধানুয়া-গাজীপুর সেতুর পূর্ব তথা গাজীপুর অংশের সংযোগ সড়কে ধসের কথা জেনেছি। আমরা দ্রুত তা মেরামতের জন্যে ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। এর আগেও সেতুর অপর অংশে ভাঙ্গন দেখা দিলে আমরা দ্রুত মেরামত করেছি।

এলজিইডির মাধ্যমে নির্মিত সেতু আমাদের দেশের গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে অনেক স্থানেই। এর মধ্যে ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিত শাহরাস্তির সূচীপাড়া সেতুর কথা বলতে হবে সপ্রশংসভাবে। কয়েক যুগ আগে নির্মিত সেতুটি যেমন টেকসই হয়েছে, তেমনি বিভক্ত শাহরাস্তিকে এক করেছে। সে আলোকে ফরিদগঞ্জের গাজীপুর-ধানুয়া সেতুর কাজ তেমন টেকসই হয়নি বললেই চলে। এই সেতুর দু পাশের সংযোগ সড়ক তথা অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে। সেতুটি উদ্বোধনের পূর্বে ধানুয়া অংশের অ্যাপ্রোচ রোডে ভাঙ্গন দেখা দেয়া এবং সেটি দ্রুত মেরামতেই তখন আন্দাজ করা যায় যে, কাজ খুব ভালো হয় নি। সেই আন্দাজের বাস্তবতা এই সেতুর গাজীপুর অংশের অ্যাপ্রোচ রোডের সাম্প্রতিক ভাঙ্গনেই প্রমাণিত হলো। নির্মাণের অর্ধ যুগ তথা ছয় বছর সময় না পেরুতেই সেতুটির অ্যাপ্রোচ রোডে ভাঙ্গন উদ্বেগজনক। উপজেলা প্রকৌশলী এই রোডের দ্রুত মেরামতের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সে মেরামত কি টেকসই হবে?

গাজীপুর-ধানুয়া সেতু গোড়াতেই গলদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এটি ফরিদগঞ্জ উপজেলাবাসীসহ সন্নিহিত উপজেলাগুলোর বাসিন্দা, এমনকি চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী ক’টি জেলার বাসিন্দাদের হাওরের ন্যায় সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ এনে দেয়। এই সেতুটি পারাপারের সময় দুপাশের বিস্তীর্ণ জলরাশি কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওরের সৌন্দর্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। যারা দূরবর্তী সেই হাওরে যাওয়ার সুযোগ পান নি, তারা এই সেতু এলাকায় এসে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর উপলব্ধিতে আনন্দিত হন। চাঁদপুর জেলার অন্য কোনো সেতু পার হতে গেলে যে আনন্দ উপভোগ করা যায় না। তাই গাজীপুর-ধানুয়া সেতু নিয়ে সকল গণমাধ্যমে সাড়া জাগানো সুন্দর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই আলোকে এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক শ্রীবৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নেয়া দরকার ছিলো। কিন্তু সেটি আর না হওয়ায় সেতুটি এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। সেজন্য এই সেতুর গাজীপুর অংশের অ্যাপ্রোচ রোডের মেরামত শুধু নয়, সেই সাথে প্রয়োজনীয় আরো কিছু সম্পাদনের কথা ভাবার জন্যে আমরা এলজিইডির সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানাতে চাই। সাথে সাথে সেতুর নিকটবর্তী স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হবার তাগিদ দিতে চাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়