সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যানজটে নাকাল চাঁদপুর ॥ শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই

নিয়ম না মেনে পিক আওয়ারে ভারী যানবাহন শহরে প্রবেশ

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥
যানজটে নাকাল চাঁদপুর ॥ শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই

চাঁদপুর শহরের যানজট দিনের পর দিন প্রকট হচ্ছে। এই যানজটে শহরের অবস্থা নাকাল। তীব্র এই যানজটে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শহরবাসীর জীবনযাত্রা। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত পুরো শহরজুড়ে থাকে এই যানজট। পৌরসভার উদ্যোগে রাস্তা প্রশস্ত করার পরও যানজট থেকে মুক্তি মিলছে না শহরবাসীর। কিন্তু মানুষ পরিত্রাণ চায় এই যানজট থেকে। ভুক্তভোগী জনগণের খেদোক্তি-প্রশাসন বলি আর পৌরসভা বলি কেহই বোধহয় ভাবছে না এই যানজট নিয়ে। যত ভোগান্তি জনগণের। সড়কে নেই কোনো শৃঙ্খলা। নিয়ম কানুনের কোনো বালাই নেই। পিক আওয়ারে শহরে কোনো ভারী যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও না মানা হচ্ছে না।

চাঁদপুর শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমে বড় স্টেশন পর্যন্ত। এই এলাকার মধ্যে রয়েছে জেলার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ, পৌরসভা, রেজিস্ট্রি অফিস, রাষ্ট্রায়ত্ত সকল ব্যাংক, বড় বড় প্রাইভেট ব্যাংক, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, হাসান আলী প্রাইমারি ও হাই স্কুল, মাতৃপীঠ স্কুল, লেডি প্রতিমা স্কুল, শহরের একমাত্র পাইকারি বাজার পালবাজার আড়ত, সবচেয়ে বড় মার্কেট রেলওয়ে হকার্স মার্কেটসহ আরো বেশ কটি বড় মার্কেট ও বিপণী বিতান, রেলওয়ে বড় স্টেশন, কোর্ট স্টেশন, তিনটি জ্বালানি তেল কোম্পানির ডিপো, জেলার একমাত্র লঞ্চ ঘাটসহ আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও স্থাপনা। এর বাইরে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র পুরানবাজার যেতে হলেও বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে শপথ চত্বর, কালীবাড়ি ও পালবাজার পার হয়েই যেতে হয়। গুরুত্বপূর্ণ এ সকল স্থানের কথা ভাবলে বুঝা যায় এসব এলাকায় জনসাধারণ ও যানবাহনের কতটা চাপ পড়ে। এসব এলাকা যে কতটা ব্যস্ততম তা ধারণারও বাইরে। এসব এলাকার কেনো সড়কই ওয়ানওয়ে নয়। এমনকি তেমন একটা প্রশস্তও নয় সড়কগুলো। সকাল ৮টা থেকেই সরগরম হয়ে ওঠে এসব এলাকা। অসংখ্য অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা বেলা বাড়ার সাথে সাথেই পুরো শহর দখলে নিয়ে নেয়। এই দুটি যানবাহনের নেই কোনো নির্ধারিত স্ট্যান্ড। যার কারণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এবং যত্রতত্র অটোবাইক ও সিএনজি অটোরিকশা পার্কিং করে রাখা হয়। গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের রাস্তার অর্ধেকই থাকে সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইকের দখলে। এমন নাজুক অবস্থায় যদি পিক আওয়ারে ভারী যানবাহন শহরে প্রবেশ করে এবং শহর থেকে বের হয়, তখন যে যানজট কী ভয়াবহ অবস্থায় গিয়ে পৌঁছে তা ভুক্তভোগীরাই অনুভব করে। তখন আর মানুষের ভোগান্তির কোনো সীমা থাকে না।

দেখা গেছে যে, শহরের এইসব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল কোম্পানির ডিপোতে তেলের লরি লোড আনলোড হতে সকাল থেকেই শুরু হয় শহরের উপর দিয়ে তেলের লরির আসা-যাওয়া। শুধু তেলের লরিই নয়। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিয়ে আসে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং রড, সিমেন্ট, টিনসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী লোড আনলোড হয় এই পিক আওয়ারে অর্থাৎ সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এসব তেলের লরি এবং মালামাল বহনকারী বড় বড় ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান যদি দিনের এই সময়ে শহরের ব্যস্ততম এসব সড়কে প্রবেশ করে তখন পুরো শহর স্তব্ধ হয়ে যায়। অথচ নিয়ম রয়েছে তিন টনের উপরে কোনো যানবাহন পিক আওয়ারে অর্থাৎ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরে ঢুকবে না। বড় বড় শহরগুলোতে এই নিয়ম রক্ষা করা হয়। ব্যতিক্রম দেখা যায় চাঁদপুরের ক্ষেত্রে। এই শহরে এই নিয়ম মানা তো হচ্ছেই না, এমনকি নিয়ম মানার জন্য কোনো সংস্থাকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা বা ভূমিকা রাখতেও দেখা যাচ্ছে না। পিক আওয়ারে ভারী যানবাহন শহরে প্রবেশ করছে বিনা বাধায়।

গতকাল সকালে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সামনে এ বিষয়ে কথা হয় ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মাহফুজ মিয়ার সাথে। তিনিই জানালেন তিন টনের উপরে কোনো যানবাহন পিক আওয়ারে শহরে প্রবেশ করার নিয়ম নেই বড় বড় শহরে। কিন্তু চাঁদপুরে এই নিয়ম মানা হচ্ছে না এবং লোকবল সংকটের কারণে তা বাস্তবায়নও করা যাচ্ছে না। তিনি ট্রাফিক সংকটের কথাই বললেন।

জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়রের কাছে জনগণের জোর দাবি- জনগণের চরম ভোগান্তির কথা ভেবে দয়া করে আপনারা দিনের বেলা তেলের লরি, কাভার্ড ভ্যান, বড় বড় ট্রাকসহ ভারী যানবাহন শহরে প্রবেশ করাটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন। এতে শহরের যানজট অর্ধেক কমে যাবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরে যেনো কোনো ভারী যানবাহন প্রবেশ করতে না পারে এটি অন্তত নিশ্চিত করুন। তাতে জনগণ অনেকটা স্বস্তি পাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়