সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ৩২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বছর শেষে ঘুরবো কোথায়?

বছর শেষে ঘুরবো কোথায়?
নাদিয়া রওশন

বছর প্রায় শেষ হয়ে এলো, কয়েক দিন পর বাচ্চাদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। শুরু হবে ঘুরাঘুরির তোড়জোর। কেউ নানার বাড়িতো কেউ দাদার বাড়ি। দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোও আছে কারো কারো ঘুরাঘুরির তালিকায়। সারাবছর ধরে অনেকেই একটু একটু করে টাকা জমিয়ে দূরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। অনেকের সাধ থাকলেও সামর্থ্যের অভাবে কাছাকাছি ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন।

তবে ভ্রমণ যেখানেই হোক না কেন, সেটি যেনো আনন্দদায়ক, কমফোর্টেবল আর স্মরণীয় হয়ে থাকে তার জন্য কিছু মানসিক প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন। দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে কেবল দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু। কবির কবিতার ভাষায় বলতে হয় ভ্রমণ মানেই কেবল দূরে কোথাও ছুটে যাওয়া নয়, বাড়ির পাশের ধানের ক্ষেতের শিশির কণা দেখাও উপভোগ্য বিষয় যদি মন উজাড় করে সেটি দেখা হয়।

প্রতি বছর হাজার হাজার টাকা খরচ করে দেশ, বিদেশের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরে বেড়ানো যেমন আনন্দময় তেমনি কাছাকাছি কোথাও যাওয়া, কিংবা গ্রামের পরিবেশে কদিন কাটিয়ে আসাটাও উপভোগ্য হতে পারে যদি প্রস্তুতি সঠিক থাকে। আমাদের শহুরে ছেলেমেয়েরা আজকাল গ্রামের পরিবেশ, ধান ক্ষেত, পুকুর, নদীতে ঝাঁপিয়ে বেড়ানো দিনগুলো ছাড়াই বেড়ে উঠছে। নিতান্তই এ বছর আর্থিক সামর্থ্য কম থাকলে পরিকল্পনা করুন গ্রামে যাবার। আপনার শৈশব যদি গ্রামে কাটিয়ে থাকেন, বাচ্চাদের সাথে সেসব স্মৃতি শেয়ার করুন। সম্ভব হলে আপনার শৈশবের খেলার সাথী, সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ করুন, একই সময়ে তাদের ও সেখানে আসতে বলুন।

বাচ্চাদের সাথে নিয়ে সেসব জায়গায় যান যেখানে আপনারা খেলতেন, সময় কাটাতেন, পুকুরে ওদের নিয়ে গোসল করুন, যেমনটা আজকাল বিভিন্ন রিসোর্ট কিংবা হোটেলের সুইমিং পুলে সবাই করে। খোলা মাঠে নিয়ে ওদের ছেড়ে দিন, নিজের মতো করে দৌড়ে বেড়াতে দিন, কাছাকাছি নদী থাকলে নৌকা ভ্রমণে নিয়ে যান। বাচ্চাদের এই সুযোগে সাইকেল চালানো ও শিখিয়ে নিতে পারেন। গ্রামের বাড়ি হলে সবাই মিলে বাগানে বা খোলা জায়গায় পিকনিক খেলতে পারেন। বাড়ির ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কিছু প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলার আয়োজন করতে পারেন। এতে বাচ্চারা আনন্দ পাবে। কিংবা ছেলেবেলায় ভিসিআর বা সিডিতে যেমন সবাই মিলে ছবি দেখতেন, তেমনি করে সবাই মিলে ছবি দেখতে পারেন।

সামর্থ্য যদি কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসার মতো হয় তাহলে নিজ জেলার বিভিন্ন উপজেলা বা আশেপাশের জেলাগুলোর দর্শনীয় স্থান কম খরচে ঘুরে আসতে পারেন। আজকাল ছোট বড় প্রতিটি জেলা, উপজেলাতে কম বেশি ঘুরাঘুরির জায়গা আছে। ঐতিহ্যবাহী কিছু জমিদার বাড়ি, মসজিদ, কিংবা ছোট বড় কিছু পার্ক থাকে।

নিজ জেলা বা পাশের জেলার ঐতিহ্য সম্পর্কে ও আমরা সবাই সবসময় জানি না। এক বছর না হয় সেগুলো জানতে পারেন। আর বাজেট নিতান্তই কম হলে নৌকা ভ্রমণে সারাদিনের জন্য বেরিয়ে যেতে পারেন। বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার রান্না করে নিয়ে গিয়ে নৌকায় বসে খাওয়া, নদীর চারপাশ দেখা ,এ এক অন্য রকম আনন্দ।

আর যদি দূরে কোথাও যাবার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে ও কিছু প্রস্তুতি নিলে ভ্রমণ হবে নিরাপদ ও আনন্দের। কোথায় যাচ্ছেন, কতজন মানুষ যাচ্ছেন সে হিসেবে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান রাখা, কিছু অতিরিক্ত টাকার ব্যবস্থা রাখা, যেন একান্ত বিপদাপদে কারো কাছে হাত পাততে না হয়। সম্ভব হলে একা পরিবার নিয়ে না গিয়ে সাথে আরও দু একটি পরিবার সাথে নেওয়া,যাতে আনন্দ দ্বিগুণ হবার পাশাপাশি একাকী না অনুভব হয়।

যেখানে যাচ্ছেন সে জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া। কোথায় থাকবেন, কিভাবে যাবেন, নির্দিষ্ট হোটেল ছাড়া আর কোথায় খাবার খাওয়া যেতে পারে, হোটেলের ভাড়া, যাতায়ত খরচ কত তা জেনে নেওয়া। আজকাল ইউটিউবে প্রতিটি দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা, হোটেল, যাতায়াতের খরচসহ ভিডিও ব্লগ পাওয়া যায়, সেগুলো দেখে নেয়া। যে এলাকায় যাচ্ছেন, সেখানে আগে থেকেই পরিচিত বা স্বল্প পরিচিত কেউ থাকলে তার সাথে যোগাযোগ করে যাওয়া, যেন বিপদে তার সাহায্য নিতে পারেন।

আপনার ঠিকানা, যেখানে যাবেন তার ঠিকানা, নিকটতম কোনো বন্ধু অথবা আত্মীয়স্বজনের নম্বর আপনার পকেট বা মানিব্যাগে রাখতে পারেন।

ভ্রমণে সারাদিন কী করবেন তার একটি পরিকল্পনা করুন। তাতে সারাদিনের সময় কিছু বাঁচবে এবং সব রকম পরিস্থিতির জন্যও মোটামুটি প্রস্তুত থাকবেন। যে এলাকায় যাচ্ছেন সেখানকার পুলিশ স্টেশনের নম্বর টুকে রাখা,যেন প্রয়োজনে তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করতে পারেন। যে এলাকায় যাবেন সেখানকার আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন।

এক শহর থেকে আরেক শহর বা দূরের পথ ট্রেনে যাওয়া সম্ভব হলে ভ্রমনে খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। ট্রেন বা গাড়ি যেভাবেই যান, তাহলে তা অবশ্যই রাতে করুন। এতে আপনার রাতে থাকার হোটেলের খরচও বেঁচে যাবে, আবার আপনি একটু অভ্যস্ত হয়ে গেলে গাড়িতেই ঘুমিয়ে নিতে পারবেন। তবে নিজের ব্যাগ ও মূল্যবান জিনিসপত্র সাবধানে রাখবেন।

অব্যশই ফোনের জায়গা খালি করে নেবেন। নয়তো স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ওখানে গিয়ে বেশি ছবি তুলতে পারবেন না।

চেষ্টা করুন এক দুদিন আগে সুটকেস গুছিয়ে ফেলার। তারপর সবকিছু গোছানো শেষ হলে এবার একটু মনে মনে চিন্তা করুন লাগেজে কী কী নিতে ভুলে গেছেন! দেখবেন কিছু না কিছু মনে পড়বেই। অনেক ছোটখাটো প্রয়োজনীয় জিনিস আমরা ভ্রমণে নিতে ভুলে যাই যেমন টুথ ব্রাশ, পেস্ট, শেভিং ক্রিম, রেজার, ফোনের চার্জার, ক্যাপ/হ্যাট, ছোট্ট ছাতা, এগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী সঙ্গে নিন। রুমাল, ওয়েট টিস্যু খুবই কাজে লাগে, তাই সঙ্গে রাখুন। হালকা শুকনো খাবার ও পানি রাখা অত্যন্ত জরুরি।

প্রয়োজনীয় ওষুধ অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।পানির বোতল সঙ্গে রাখুন এবং রেস্টুরেন্ট বা হোটেল থেকে এই বোতলে পানি রিফিল করে নিন। আপনার সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি আপনার ভ্রমণকে করে তুলতে পারে অর্থবহ ও স্মরণীয়।

নাদিয়া রওশন : উদ্যোক্তা, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়