প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৫, ১৯:৫৪
চট্টগ্রামে যানজটমুক্ত ভবিষ্যতের স্বপ্ন!
চট্টগ্রামে দেশের প্রথম মনোরেল: যানজট নিরসনে নতুন দিগন্তের সূচনা

|আরো খবর
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যানজট নিরসনে এবার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। নগরীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম মনোরেল, যা চট্টগ্রামের পরিবহন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর
রোববার (১ জুন) সকালে নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চসিক, জার্মান-মিশরীয় যৌথ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওরাসকম কনস্ট্রাকশন ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ-এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি (MoU) স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠান দুটি আগামী তিন মাসের মধ্যে চট্টগ্রামে মনোরেল নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করবে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্পটি ২০২৬ সালেই বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মনোরেল প্রকল্পের খসড়া পরিকল্পনা:
- মোট দৈর্ঘ্য: ৫৪ কিলোমিটার
- স্টেশন সংখ্যা: ৩২ থেকে ৩৩টি
- সময়সীমা: পুরো নগর ঘুরে মনোরেলে সময় লাগবে মাত্র ৩০–৪০ মিনিট
- প্রযুক্তি: অত্যাধুনিক স্মার্ট মনোরেল ট্র্যাক
- কার্যক্রম শুরু: সম্ভাব্য ২০২৬ সালের শুরুতেই নির্মাণ কাজ শুরু
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে
সড়ক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, মনোরেল একটি উন্নত প্রযুক্তির পরিবহন মাধ্যম, যা স্থাপনে মেট্রোরেলের তুলনায় অর্ধেক ব্যয়ের প্রয়োজন হয় এবং শহরের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী তুলনামূলকভাবে সহজে স্থাপনযোগ্য।
“চট্টগ্রামের মতো সংকুচিত ও জনবহুল নগরীতে মনোরেল হতে পারে ট্রাফিক জ্যামের টেকসই সমাধান। এটি কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।”— বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মাহমুদুল হক
চট্টগ্রামের বর্তমান চিত্র
নগরীর দৈনন্দিন ভোগান্তির মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যানজট। কর্ণফুলী নদীর পাড়ঘেঁষা এই নগরীতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের চলাচল হয়, যেখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সংকট ও অপরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের সমস্যা।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি
চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ওরাসকম ও আরব কন্ট্রাক্টর গ্রুপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অবকাঠামো নির্মাণ কোম্পানি। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে এদের সফল মনোরেল ও রেল প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
“আমরা আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি এনে চট্টগ্রামের জনজীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে চাই। এটি শুধুমাত্র একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, বরং একটি আধুনিক নগরী নির্মাণের অংশ।”— চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
জনমত ও প্রত্যাশা
নগরবাসীরা এই উদ্যোগে ব্যাপক আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স ও স্থপতি ইনস্টিটিউট এর মতে, মনোরেল নগরীর অর্থনীতিতেও গতি আনবে।
“সকাল সন্ধ্যা যানজটে আটকে থেকে জীবনের কত সময় নষ্ট হয়! মনোরেল হলে অন্তত সময় বাঁচবে, মানসিক চাপ কমবে।”— বহদ্দারহাট এলাকার এক কলেজ শিক্ষক
চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ
তবে মনোরেল বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন:
- জমি অধিগ্রহণের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
- পুরাতন অবকাঠামোর সঙ্গে মনোরেল নেটওয়ার্কের সমন্বয়
- যাত্রী পরিবহনে ভাড়া নীতিমালা নির্ধারণ
- রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি
চট্টগ্রামে মনোরেল শুধু পরিবহন নয়, এটি উন্নত নগর জীবনের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। — নগর পরিকল্পনাবিদ আতিক রহমান
ডিসিকে/এমজেডএইচ