শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১৮:২৬

প্রশাসনে 'মনিটরিং কালচার': লাইক-কমেন্টও 'দ্রোহ' গণ্য, বাড়ছে আতঙ্ক

‘স্যাড’ রিঅ্যাক্টই শাস্তিযোগ্য অপরাধ? ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দেওয়ায় শোকজ ৫ কর্মকর্তাকে, প্রশাসনে তোলপাড়

বিশেষ প্রতিবেদক: মো.জাকির হোসেন
প্রশাসনে 'মনিটরিং কালচার': লাইক-কমেন্টও 'দ্রোহ' গণ্য, বাড়ছে আতঙ্ক
ছবি : প্রতীকী

"একটি নিরীহ ‘স্যাড’ রিঅ্যাক্টেই যদি শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে সরকারি কর্মকর্তা মানেই কি এখন ডিজিটাল নিঃস্বতা?"

— একজন সিনিয়র আমলা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

বাংলাদেশের প্রশাসনে আবারও আলোচনায় এসেছে সরকারি কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারসংক্রান্ত শৃঙ্খলা ও স্বাধীনতার সীমারেখা

এবার ‘স্যাড’ রিঅ্যাক্ট ও একটি পোস্টে লাইক ও কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে শোকজ করা হয়েছে মৎস্য অধিদপ্তরের পাঁচজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে সরকারি মহলে দেখা দিয়েছে বিতর্ক, আর সামাজিক মাধ্যমে উঠেছে স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রশ্ন

ঘটনার সূত্রপাত কোথায়?

১৪ এপ্রিল সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি অনুসন্ধানী পোস্ট দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্বে) মো. তোফাজ্জেল হোসেন অতীতে আওয়ামী লীগের দুইজন মন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলেন এবং পরবর্তীতে সচিব পদে পদোন্নতির জন্য একটি ডিও লেটার দিয়েছেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

ওই পোস্টে ‘স্যাড’ রিঅ্যাক্ট, লাইক ও কমেন্ট দেন মৎস্য অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তা। এরপর ৪ মে তাঁদের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ জারি করে অধিদপ্তর

শোকজ পাওয়া কর্মকর্তারা কারা?

  • এএসএম সানোয়ার রাসেল – সহকারী পরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর
  • আবু মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান – সহকারী প্রধান
  • মো. ফরিদ হোসেন – সহকারী প্রকল্প পরিচালক, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প
  • সালমুন হাসান বিপ্লব – সিনিয়র সহকারী পরিচালক, মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর
  • রওনক জাহান – সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, আখাউড়া

কী আছে শোকজে?

সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশাসনিক বা রাজনৈতিক বিষয়ে মতামত বা প্রতিক্রিয়া জানানো সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এতে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে এবং দপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে

প্রতিক্রিয়া কী বলছে প্রশাসনে?

একজন যুগ্ম সচিব বলেন— "এটা এক ধরনের মনিটরিং কালচার, যেখানে ‘লাইক’, ‘স্যাড’ রিঅ্যাক্ট বা মন্তব্যকেও ‘দ্রোহ’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।"

একজন সিনিয়র ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন— "মতপ্রকাশের অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে। এতে সরকারি কর্মচারীরা আতঙ্কে থাকছেন।"

বিশ্লেষকদের মত কী বলছে?

সাবেক সচিব আবু হেনা মোরশেদ বলেন— "একজন কর্মকর্তা নাগরিক হিসেবেও ফেসবুক ব্যবহার করেন। ইমোজিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।"

ব্যারিস্টার আহসান কবির বলেন— "শৃঙ্খলার নামে ডিজিটাল অধিকার সংকুচিত হচ্ছে, যা সংবিধান পরিপন্থী।"

সরকারি বিধিমালার দোহাই

সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০১৮ অনুসারে সরকারি কর্মকর্তারা এমন কিছু করতে পারবেন না, যা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। তবে ‘ইমোজি’ বা ‘রিঅ্যাক্ট’-এর মতো বিষয় সেখানে স্পষ্ট নয়, ফলে এটিকে অনেকেই "মতপ্রকাশের ওপর নজরদারি" বলছেন

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ ও সমর্থন

এক শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা লেখেন— "স্যাড রিঅ্যাক্ট দিলেই যদি শোকজ হয়, তাহলে কেউ অসুস্থ সহকর্মীর খবরেও হয়তো রিঅ্যাক্ট দিতে ভয় পাবে।"

এবার কি নতুন গাইডলাইন আসছে?

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সংক্রান্ত একটি নতুন গাইডলাইন প্রস্তুত হচ্ছে। এটি আরও কঠোর হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।

শেষ কথা

প্রযুক্তির যুগে সরকারি কর্মকর্তা মানেই কি ডিজিটাল নীরবতা? ‘স্যাড’ রিঅ্যাক্ট কি সত্যিই প্রশাসনিক শিষ্টাচার ভঙ্গ? এই প্রশ্নগুলো এখন বাংলাদেশের প্রশাসনে আলোচিত।


DCK/MZH

আপনার মতামত দিন:

আপনি কি মনে করেন ফেসবুকে স্যাড রিঅ্যাক্ট দেওয়া প্রশাসনিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন? মন্তব্য করুন নিচে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়