রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:১২

নেপথ্যে জমি নিয়ে বিরোধের জের!

ভাবীর ধর্ষণচেষ্টার মামলায় কারাগারে প্রবাস ফেরত দেবর

স্টাফ রিপোর্টার।।
ভাবীর ধর্ষণচেষ্টার মামলায় কারাগারে প্রবাস ফেরত দেবর

আপন বড়ো ভাইয়ের স্ত্রীর দায়ের করা ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় কারাগারে গেছেন দেবর মো. নূর নবী (৪১)। যদিও ঘটনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নূরু নবীর বাবা, স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যরা। তাদের দাবি, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই নিরাপরাধ নূর নবীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদী ভাবী রোমানা বেগম জমি সংক্রান্ত বিষয় সুরাহা করতে আপসের অংশ হিসেবে আদালতে অভিযুক্তের জামিনে অনাপত্তি দিয়েছেন। তাতেই বিবাদীর পরিবারের সদস্যদের স্পষ্ট ধারণা, এই মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কবি রূপসা গ্রামের ঘটনা এটি।

জানা যায়, ভুক্তভোগী মো. নূর নবী দীর্ঘ ১৪ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে কাজ করছেন। ভাই-বোনসহ পরিবারের সকলকে সচ্ছল করতে প্রবাসে অর্জিত সকল টাকা পরিবারকে দিয়েছেন। সেই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মো. নূর নবীকে তার বাবা মো. হারিছ চলতি বছরের ২৬ আগস্ট ১৭ শতক সম্পত্তি সাফকবালা রেজিস্ট্রি করে দেন। কিন্তু দেবরকে সম্পত্তি লিখে দেয়ার বিষয়টি মো. নূর নবীর বড়োভাই আব্দুল কাদেরের স্ত্রী রোমানা বেগম মেনে নিতে পারেন নি। সেই থেকে শুরু হয় তাদের পরিবারে সম্পত্তিগত বিরোধ।

এক পর্যায়ে বৃদ্ধ মো. হারিছ নিজে বাদী হয়ে বড়ো ছেলে আব্দুল কাদির ও পুত্রবধূ রোমানা বেগমের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ফরিদগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং ৫০১) করেন। পরবর্তীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধ উল্লেখ করে রোমানা বেগম বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মো. নূর নবীকে অভিযুক্ত করে। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই আহাল উল্লাহ সরজমিনে তদন্ত করে চলতি বছরের ১৬ অক্টোবর ফরিদগঞ্জ থানায় একটি সমাঝোতা বৈঠক ডাকেন। উল্লেখিত ঘটনার সাথে বাস্তবিক মিল না থাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যে উভয়কে অনুরোধ করে সমাঝোতা বৈঠকে উপস্থিতরা সমঝোতা করে দেন।

এরপর রোমানা বেগম দেবর মো. নূর নবীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করে (গত ২৮ নভেম্বর ২০২৫, দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিট নিজের শয়ন কক্ষে ঘটনার বিবরণ দেখিয়ে) বিজ্ঞ আদালতে গত ১ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করলে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ খ্রি. (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৯ (৪) (খ) ধারার অনুপাতে গত ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ মামলা নং (০৭) রেকর্ড করে মো. নূর নবীকে গ্রেপ্তার করে গত ৭ ডিসেম্বর আদালতে পাঠায় পুলিশ।

ভুক্তভোগী মো. নূর নবীর বৃদ্ধ বাবা, ভাই-বোন ও স্ত্রী বলেন, আমাদের বসতঘরে ধর্ষণচেষ্টা ও ধর্ষণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। জমি-জমার বিরোধ মেটাতে কৌশল হিসেবে মিথ্যা গল্প বানিয়ে নির্দোষ মো. নূর নবীকে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীর দৃৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ইতোমধ্যেই বাদী রোমানা আদালতে নূর নবী জামিন আবেদনে অনাপত্তি দিয়েছেন।

এদিকে মামলায় উল্লেখিত (৪ রুম বিশিষ্ট) ঘটনাস্থলে পরিবারের সদস্য ৭ জন থাকলেও কেউ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না। অন্যান্য বাড়ির বাসিন্দা ও বিভিন্ন এলাকার কতিপয় ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করায় ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার বাদী রোমানা বেগম জানান, আমার স্বামী এ পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছে। আমার শ্বশুর দেবর মো. নূর নবীকে সম্পত্তি লিখে দিয়ে অন্যায় করেছে। আদালতে মামলা দিয়ে পুলিশকে বলেছি আসামী না ধরার জন্যে। কিন্তু পুলিশ আমার কথা না শুনে নূর নবীকে ধরে আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন পরিবার থেকেই জমি সংক্রান্ত বিরোধ মেটানোর আশ্বাস পেয়েছি। তাই নূর নবীর জামিন হলে আমার কোনো আপত্তি নেই।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন জানান, ভাবীর দেয়া ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় প্রবাস ফেরত দেবর মো. নূর নবীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জমিসংক্রান্ত বিরোধের তথ্য উঠে এসেছে। মামলায় উল্লেখিত ঘটনার তদন্তপূর্বক সত্য-মিথ্যা যাচাই করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়