প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২২:২২
রায়পুরে মেঘনার পাড়ে ৫টি ঘাটে মা-ইলিশ ধরার মহোৎসব

৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মা-ইলিশ আহরণ, বিক্রয় ও মজুদ করার সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরার মহোৎসব চলছে। এসব আবার অবাধে বাজারে বিক্রিও করা হচ্ছে। গত ৪ মাস সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ও ২ বছর সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় এবং কোস্টগার্ড এখন পর্যন্ত না দেয়ায় অভিযান পরিচালনা করছেন না মৎস্য বিভাগ। জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের এমন ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সচেতন জেলেরা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশ সংকটে পড়বে এবং জেলে পল্লীতেও অভাব দেখা দেবে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) বিকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়পুরের মেঘনা নদীর চরবংশী হাজিমারা স্লুইস গেট, আলতাফ মাস্টার মাছ ঘাট, পুরাণ বেড়ি, চান্দারখাল, সাজু মোল্লার মাছঘাট সহ বিভিন্ন এলাকার মেঘনা নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে কারেন্ট জাল দিয়ে অবাধে ইলিশ ধরছেন। এসব ইলিশ মৎস্য ঘাটে প্রকাশ্য ডাকে বিক্রিও করা হচ্ছে। এসব ঘাট থেকে মা ইলিশ কিনে জেলা শহরসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলেরা বলেন, ইলিশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগের কোনো ভূমিকা না থাকায় এসব হচ্ছে। আবার সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে অনেক জেলে মা ইলিশসহ জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় ও আইনের কথাও জানেন না।
হায়দরগঞ্জের শহরআলীর মোড় এলাকার মেঘনা নদীর জেলে মো.আবুল মাঝি ও খায়রুল আলম বলেন, আমরা প্রতিনিদিনই নদীতে মাছ ধরছি। বড়ো মাছের আশায় নদীতে জাল ফেলি। জালে জাটকার সাথে মা ইলিশও ধরা পড়ছে। আমরা তো বড়ো মাছের জন্যে জাল ফেলি, কিন্তু এ এলাকায় হাজার হাজার জেলে রয়েছে যারা কারেন্ট জাল দিয়ে শুধু জাটকা ধরছেন। মৎস্য কর্মকর্তারা এখানে আসেন না।
চান্দারখাল এলাকার জেলে মো. মহিউদ্দিন ও হাসিম খান বলেন, ৪ অক্টোবর থেকে মা ইলিশের অভিযান শুরু হলেও মৎস্য কর্মকর্তারা ও কোস্টগার্ড না থাকায় বিকেল থেকে নদীতে ইলিশ ধরা হচ্ছে। এছাড়াও অনেক ধার-দেনা ও ঋণে জর্জরিত আছি। নদীতে ইলিশের সাথে অন্য মাছও আমরা ধরতেছি।
তারা জানান, অন্য তিনটি ইউনিয়নে নিবন্ধন থাকলেও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে তাদের কোনো জেলে নিবন্ধন নেই। এছাড়াও জাটকা আইন সম্পর্কে কেউ তাদের কখনও বলেনি। তাই তাদের কোনো ধারণাও নেই।
উত্তর চরবংশীর খাসেরহাট ও নাইয়াপাড়া এলাকার কয়েকজন মাছ বিক্রেতা বলেন, জেলেরা নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে ছোট ছোট জাটকার সাথে মা ইলিশও ধরে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। বাধ্য হয়ে তা কিনে নিচ্ছি। কারণ জেলেদের কাছে আমাদের দাদন দেয়া।
সাজু মোল্লারঘাট এলাকার সতেচন জেলে মালেক খান সহ একাধিক জেলে বলেন, অসাধু জেলেরা সরকারি কোনো আইন না মেনে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকার পাশাপাশি মা-ইলিশও ধরছে। তা আবার মৎস্য ঘাট, হাট-বাজার ও আড়তদারদের কাছে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। রায়পুরে কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ ফাঁড়ি নেই। রয়েছে চাঁদপুরের চরভৈরবী এলাকায়। তদের সদস্যরা মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে ওই ইলিশ জব্দ করলেও মৎস্য বিভাগ অভিযান চালাচ্ছে না। এতে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশের মহাসংকট দেখা দেবে। জেলে পল্লীতে মারাত্মক অভাব দেখা দেবে। তাই আমরা সরকারের কাছে এসব জাটকা ও মা ইলিশ শিকার ও বিক্রি বন্ধের জন্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন করছি।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ শিকার, পরিবহন, বিক্রি, বাজারজাতের ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অথচ এ আইন মানছেন না অসাধু জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
লক্ষ্মীপুরের মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, মৎস্য কর্মকর্তা একজন পদায়ন করা হলেও তিনি না আসায় এবং এখন পর্যন্ত কোস্টগার্ড না দেয়ায় অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না। এছাড়াও জেলা থেকে পৃথক অভিযানও চালানো হচ্ছে। তবে জনবল ও নৌযান সংকটের কারণে তারা পর্যপ্ত অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না। রায়পুর উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার জেলের নিবন্ধন রয়েছে। জেলে নিবন্ধন শুরু হলে আমরা নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।