প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৩
অনিয়ম ঢাকতে তথ্য লোপাট :
রায়পুর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়সারা জবাব

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং ভেটেরিনারি হাসপাতালের ডা. মোফাজ্জল হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে চাহিত তথ্য লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।
|আরো খবর
সরকারি সেবা ও প্রকল্পে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশে চালু হয়েছে তথ্য অধিকার আইন। নাগরিকরা যাতে সহজে সরকারি তথ্য পেতে পারেন, সেটাই এ আইনের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় দেখা যায় অসাধু কর্মকর্তা এই আইনের প্রয়োগ ঠেকাতে নানা কৌশলে তথ্য গোপন করছেন বা বিকৃত করে দিচ্ছেন।
রোববার গত অর্থ বছরের কাজের বরাদ্দের তথ্য চাইলে রায়পুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা আতাউর রহমান সঠিক তথ্য না দিয়ে 'দায়সারা' তথ্য দেন । গত ৪ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার আইনে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়। চাওয়া হয়েছিল—এলডিডিপি প্রকল্পের বরাদ্দ ও সুবিধাভোগীর তালিকা, ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তথ্য, সরকারি যন্ত্রপাতির হিসাব ও ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য। তথ্য পাওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা ২০ কার্যদিবস হলেও, আবেদনকারীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে সেপ্টেম্বর মাস। পরে ৫ অক্টোবর কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আতাউর রহমান দায়সারাভাবে কিছু তথ্য সরবরাহ করেন। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো বাদ দেয়া হয়।
দায়সারা জবাবে তিনি তথ্যগুলো দিয়েছেন এভাবে, রায়পুর উপজেলায় এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় ৩৪০ জন সুফলভোগী আছেন, তবে তাদের তালিকা ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে সংরক্ষিত। অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আছে—অর্থাৎ, নিজ দপ্তরে নেই কোনো তথ্যভাণ্ডার।
সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ও সচেতন মহলের দাবি—
প্রকল্পের আসল চিত্র লুকানোর জন্যে ইচ্ছাকৃতভাবে এই তথ্য 'অপূর্ণ' রাখা হয়েছে।
এলডিডিপি প্রকল্পে সরকারের কোটি টাকার বরাদ্দ থাকলেও, প্রকৃত খামারিরা অনেকেই জানেন না কারা সুবিধা পাচ্ছেন বা কোথায় যন্ত্রপাতি গেছে কিংবা কোনো খামার আদৌ ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে কিনা?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের খামারি বলেন, “যন্ত্রপাতির নাম শুনেছি, কিন্তু আমরা তো কিছুই পাইনি। সরকারি সুবিধা যায় সেইসব লোকের কাছে, যাদের নাম দপ্তরের তালিকায় আগে থেকেই লেখা থাকে।”
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন,“যেভাবে তথ্য দেওয়া দরকার, সেভাবেই দিয়েছি।” জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন,“আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মকর্তাকে জানালেও কোন সমস্যা হবে না আমাদের।"২০০৯ সালে চালু হওয়া তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী, যে কোনো সরকারি সংস্থা বা অফিসে চাওয়া তথ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিতে বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক কর্মকর্তা আইনটি উপেক্ষা করেন বা প্রয়োগে বাধা দেন।
ফলে নাগরিকদের জানার অধিকার যেমন ক্ষুণ্ন হয়, তেমনি প্রশাসনের স্বচ্ছতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছ।
রায়পুরে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার ক্ষেত্রে ঘটনাটি কেবল একটি উদাহরণ হলো। তথ্য গোপনের এই সংস্কৃতি চলতে থাকলে স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে জনগণের আস্থা সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে—এমনটাই মনে করছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।
তথ্য অধিকার আইন শুধুমাত্র কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকলে অনিয়ম ঢাকার সংস্কৃতি আরও শক্তিশালী হবে। রায়পুরের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রকৃত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সক্রিয় নজরদারি ও কঠোর জবাবদিহি জরুরি।