প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৪
চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র
এক বছরে ১ হাজার ১৭৪টি নরমাল ডেলিভারি

মা ও নবজাতকের নিরাপদ প্রসবে অনন্য ভূমিকা পালন করছে চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল)। মায়েরা এখানে এসে মাতৃত্বকালীন চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এখানে কর্মরত চিকিৎসক এবং সেবিকারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন নরমাল ডেলিভারি করাতে। চাঁদপুরের এই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম দীর্ঘদিনের।
|আরো খবর
ডা. রইস উদ্দিন এবং চাঁদপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. ইলিয়াস মিয়া এই কেন্দ্রের জন্য দেবতাতুল্য অবদান রেখেছেন। এই মানবিক চিকিৎসকগণ সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গায় নিয়ে এসেছেন চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রকে। সুনাম আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
গত এক বছরে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, এখানে মোট ১ হাজার ১১৭৪টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপদ মাতৃত্ব, চিকিৎসাসেবায় আন্তরিকতা এবং প্রশিক্ষিত পরিদর্শিকাদের নিরলস প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য সচেতন মহলের।
মাসভিত্তিক ডেলিভারি হিসাব
চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মাসভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী: ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ১১৫ জন, নভেম্বরে ৯৩ জন, ডিসেম্বরে ১০১ জন প্রসূতি মা নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন করেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৮২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭৩ জন, মার্চে ৯৩ জন, এপ্রিলে ১০৪ জন, মে মাসে ১১০ জন, জুনে ৮৬ জন, জুলাইয়ে ১০১ জন, আগস্টে ১০৭ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১০৯ জন মা নিরাপদ প্রসবের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিয়েছেন।
কেন্দ্রের দায়িত্বশীলরা জানান, বর্তমানে এখানে চিকিৎসাসেবা ও প্রসব পর্যবেক্ষণের মান এতটাই ভালো পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঢাকা বা ২৫০ শয্যার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করতে হয় খুব কম রোগীকেই। অধিকাংশ প্রসব এখানেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়। শুধুমাত্র বিশেষ জটিলতার ক্ষেত্রে রোগীকে নিকটস্থ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মাসিক সেবা পরিসংখ্যান
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শতাধিক মা ও গর্ভবতী নারী সেবা নিতে আসেন। প্রতি মাসে গড়ে ৮০০ থেকে ১,০০০ জন গর্ভবতী মা নিয়মিত চেকআপ করিয়ে থাকেন।
নরমাল ডেলিভারি ছাড়াও প্রতি মাসে গড়ে ১৫০ জন নারী পরিবার পরিকল্পনা ইনপ্লান্ট পদ্ধতি গ্রহণ করেন, গর্ভকালীন ও প্রসবোত্তর সেবা নিচ্ছেন প্রায় দেড় হাজার নারী, আর আইইউডি পদ্ধতি গ্রহণ করেন মাসে গড়ে ২০-২২ জন।
এই সফলতার পেছনে চারজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়: নাছিমা আক্তার, রাজিয়া বেগম, রাহিমা ও পপি দাস। তারা শুধু দায়িত্ব পালন করেন না, প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে পারিবারিক স্নেহের বন্ধন গড়ে তোলেন।
অনেক মা বলেন, "এখানকার আপুরা আমাদের পরিবারের মতো পাশে থাকেন, তাই ভয় পাই না।" সাধারণ নারীর মুখে এমন মন্তব্যই প্রমাণ করে সেবা শুধু ওষুধে নয়, ভালোবাসাতেও পূর্ণ হয়।
মেডিকেল অফিসারের মন্তব্য
চাঁদপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. ইশরাত শারমিন লিজা বলেন, "আমরা যতোটা সম্ভব নরমাল ডেলিভারিতে উৎসাহ দেই। তবে খিঁচুনি, পানি ভেঙ্গে যাওয়া, জরায়ুর মুখ না খোলা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, আগের সিজারের ইতিহাস বা শিশুর জটিলতার ক্ষেত্রে রোগীকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে প্রথমবার সন্তান প্রসবের সময় এপিসিওটমি করতে হয়।"

ডিসিকে/এমজেডএইচ