প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
হেলমেট-কাণ্ড

কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙে নাবিলার। ঐশী গিয়ে দরজা খোলে। নাবিলা রুম থেকে যাওয়ার সময় দেখেছে ওয়াশিফ এসেছে। দরজা দিয়ে ঢুকতেই ওয়াশিফ বলে ওঠে, ঐশী, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দাও।
-বাবা তোমার হাতে হেলমেট?
নাবিলার কানে হেলমেট শব্দই পৌঁছায়। অন্য রুমে ঘুমিয়ে আছে আরাফাত। একবারের জায়গায় চারবার কলিংবেল বাজলেও 'তিনি' উঠবেন না।
রুমের দরজাটা আধা বন্ধ, আধা খোলা। বুঝতে পেরেছে, নিশ্চয়ই বাবা এসেছে। আরাফাত গলা লম্বা করে দেখল, আসলেই হেলমেট। সত্যিই বাবা আজ একটা হেলমেট নিয়ে বাসায় এসেছে। এর মানে, গত চার বছর ধরে দেখা স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন হতে চলেছে। সে ধরেই নিয়েছে, বাবা হয়তো বড় কোনো বিল পেয়েছে, তাই মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছে ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
বিড়বিড় করে বলে, বাবা যদি আমায় আগে একটু বলত তাহলে আমিই পছন্দ করে কিনতাম।
ভাবছে, মাঝেমধ্যে বাবা অফিসে যাওয়ার সময় বাবাকে নিয়ে যাবে ও। বাবাকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে।
ক্লাস না থাকলে ঐশীকে স্কুলে দিয়ে আসতে পারবে। বাসায় মা ভালোমন্দ রান্না করলে নিতু আপুকে নিজেই গিয়ে দিয়ে আসতে পারব। আর আম্মু যখন বিকেলে একটু বের হতে চাইবে আমিই নিয়ে যেতে পারব। নিতুকে যখন প্রথম স্কুলে দেওয়া হয় তখন আরাফাত ছোট। স্কুলে যাওয়া-আসায় অনেক সময় চলে যেত। আর যানবাহনের ধকল তো আছেই। নাবিলা ওয়াশিফকে বলেছিল একটা স্কুটি কিনে দিতে। তাহলে দ্রুত সে যেতে-আসতে পারবে। কিন্তু ওয়াশিফ কিছুতেই রাজি হয়নি। চার বছর পর আরাফাতকেও স্কুলে দেয়। দুই সন্তান দুই স্কুলে, আর কোলে ঐশী। এদিকে নাবিলা ভাবছে, ওকে স্কুটি কিনে না দিলেও ছেলের জন্য নিশ্চয়ই কিনে এনেছে মোটরসাইকেল।
ওয়াশরুমের ভেতরে থেকেই শুনতে পায় ওয়াশিফ হয়তো ওকে ডাকছে। কল্পনা থেকে বাস্তবে এসে দ্রুত বের হতে চেষ্টা করে।
তখনি ওয়াশিফ বলে, ঐশী মা, ট্যাং বা লেবু থাকলে শরবত করে দাও, আমি ওয়াশরুম থেকে আসি।
ঐশী ভাবে, এখন তো বাবার অফিস থেকেই ফেরার কথা, তাহলে কিনল কখন?
আরাফাত উঠে আসে রুম থেকে। এদিকে নাবিলাও একই সময়ে ডাইনিংয়ে আসে।
-বাবা! হেলমেট? আরাফাতের কথা।
-বাবা, তুমি ভাইয়াকে এত বড় সারপ্রাইজ দিলে, একেবারে মোটরসাইকেল কিনেই ফিরেছ?
ওয়াশিফ বলতে শুরু করে, তোমরা যা ভাবছ, বিষয়টা আসলে তা নয়।
-তাহলে? তিনজনেই বলে ওঠে।
শোনো তাহলে, অফিস থেকে বের হয়েছি অন্যদিনের চেয়ে ঘণ্টাখানেক আগে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাইকে ধানমন্ডি যাব বলে ১৫০ টাকায় ঠিক করি। মাঝপথে পাঠাও চালক বলে তেল নিতে হবে। আমি নেমে দাঁড়াই। সে বলে, স্যার আপনি কি ভাংতি টাকা দেবেন নাকি নোট। নোট হলে ভাঙিয়ে নিতাম। তখন আমি ৫০০ টাকার নোট দিলাম। সে তেলের টাকা দিয়ে বাকিটা তাঁর হাতেই রাখল। আমি চলে এলাম। আমাকে নামিয়ে কিছু বলার আগেই সে দ্রুত চলে গেল। হেলমেটটা আমার মাথায় ছিল। আমি তাকিয়ে রইলাম। কী আর করার, হেলমেটটা নিয়েই এলাম।
নাবিলা, ঐশী আর আরাফাত সবাই সবার দিকে হাঁ করে তাকায়। তিনজনই একসঙ্গে বলে ওঠে, আমি ভেবেছিলাম...।
তোমরা ভেবেছিলে, আমি মোটরসাইকেল কিনে বাসায় এসেছি। আরে বোকা মোটরসাইকেল কেনার সময় হলে সবাই একসঙ্গে গিয়েই কিনব। মাস তিনেক পর একটা বিল পাব, পেলেই আমাদের জন্য একটা মোটরসাইকেল কিনব। আরাফাত হবে চালক আর আমরা সবাই ওর সহযাত্রী।