প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৪
তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
পাঁচ.
নেক্সাস তাদের সামনে নতুন মিশন দিয়েছিলো, “তোমরা যদি এই পৃথিবী গঠন করতে চাও, তবে তোমাদের প্রযুক্তির সত্যিকারের দক্ষতা শিখতে হবে!”
তিন বন্ধু চমকে উঠে। আরিয়ান প্রশ্ন করে, ‘কে আমাদেরকে প্রযুক্তির সত্যিকারের দক্ষতা শিখাবে? আমরা তো এসব বিষয়ে তেমন একটা জানি না। যা জানি, তা দিয়ে তো নতুন পৃথিবীর নতুন সভ্যতা গড়ে তোলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
আওয়াজ আসে, ‘তোমাদেরকে নেক্সাস সবকিছুই শিখিয়ে দিবে, যাতে তোমরা বাংলাদেশী হিসেবে সবার শীর্ষে এগিয়ে যেতে পারো। অন্যদেশের মানুষরা যেমন বাল্যকাল থেকেই প্রযুক্তি নিয়ে সভ্যতা গড়ে তুলছে, তোমরাও তাই করবে।’
আওয়াজ কোথা থেকে এলো, তিনবন্ধু তা বুঝতে পারলো না। তারা চারদিকে তাকালো, না কেউ নেই।
হঠাৎ করেই কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠে। “প্রযুক্তির নতুন পাঠ। প্রথম ধাপ: কোডিং শেখা।”
ধীরে ধীরে তারা জানতে পারে: কীভাবে এআই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কীভাবে কোড দিয়ে বাস্তবতাকে পরিবর্তন করা যায়। মানুষের চিন্তাভাবনা কীভাবে সফটওয়্যারে রূপান্তরিত হয়। দ্বিতীয় ধাপ: এসইও এবং তথ্য পরিচালনা। তারা শিখছে: কীভাবে তথ্যকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তির ভাষায় প্রকাশ করা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি শুধুই সহায়ক, নাকি এক নতুন নেতৃত্বের সূচনা হতে যাচ্ছে? তারা কি একদিন মানুষকে ভুলিয়ে দেবে?
তিন বন্ধু বুঝতে পারে, তারা শুধুমাত্র ভবিষ্যতের বাসিন্দা নয়, তারা ভবিষ্যতকে হয়তো নিয়ন্ত্রণ করবে!
আরিয়ান প্রশ্ন করে, “মিথিলা এটা কি আসলেই মানুষের পক্ষে সম্ভব যে, ভবিষ্যতের পৃথিবী এআইর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?”
মিথিলা অবাক হয় না। সে দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দেয়, “মানুষের সৃষ্টিকর্তা মানুষকে অনেক জ্ঞান ও সামর্থ্য দান করতে পারে। হয়তো মানুষের প্রচেষ্টা থাকলে এটাও সম্ভব হতে পারে।”
রায়ান বলে, “কিন্তু আমরা ভবিষ্যতের পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজাতে চাইলে প্রচেষ্টা করে দেখতে দোষ কি?”
তারা এবার প্রশ্ন করতে শুরু করে:
মিথিলা বলে, ‘আমরা কি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি শেখার পর, সত্যিকারের নতুন সভ্যতা তৈরি করতে পারবো?’
আরিয়ান বলে, ‘নেক্সাস আমাদের গড়ে তুলছে, কিন্তু আমরা কি স্বাধীন?’
রায়ান বলে, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত কি প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে, নাকি আমরা একদিন নিজেদের হারিয়ে ফেলবো?”
কেউ একজন যেনো দূরে বলে উঠলো, ‘তারা কি সত্যিকার নেতৃত্ব গ্রহণ করবে, নাকি এক নতুন অদৃশ্য শক্তির দাস হয়ে যাবে? তারা কি প্রযুক্তির জগতে হারিয়ে যাবে, নাকি নতুন ভবিষ্যতের আসল নির্মাতা হবে?’
কথাগুলো শুনে চমকে উঠে তিন বন্ধু। তারা দেখতে পায় অদূরে একটা ডেস্কের কাছে দাঁড়ানো রয়েছে এক ব্যাক্তি। তার মুখে মুখোশ। চেহারাটা চেনা যায় না। আরিয়ান দৌড়ে লোকটার কাছে গিয়ে তাকে ধরতে চাইলো। কিন্তু লোকটাকে ধরা যায় না। লোকটা তাকে বললো, ‘তোমরা এক অদৃশ্য জগতে প্রবেশ করেছো, তোমাদের সামনে এক নতুন দায়িত্ব। যদি তোমরা একটু ভুল করো, তাহলে আর পৃথিবীতে ফিরতে পারবে না।’
লোকটি ধীরে ধীরে বাতাসের মতো অদৃশ্য হয়ে গেলো। আরিয়ান হতবাক হয়ে ফিরে এসে কম্পিউটারের সামনে বসলো। সে দেখলো নেক্সাস এবার একটি বিশেষ কোডিং প্ল্যাটফর্ম তাদের সামনে উন্মোচন করেছে। যেখানে তারা নতুন এক ভবিষ্যত তৈরি করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।
ধীরে ধীরে কম্পিউটারে লেখা উঠতে শুরু করে।
‘নেক্সাসের কোডিং পাঠ শুরু...।’
প্রথম ধাপ: বেসিক কোডিং- তারা শিখছে কীভাবে সফটওয়্যার তৈরি করতে হয়। এআই এলগোরিদম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বাস্তব সিদ্ধান্ত নিতে শেখানো যায় কীভাবে? স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম তৈরি- যেখানে মানুষ আর সরাসরি কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে না।
তারা তিন বন্ধু খুবই আগ্রহের সাথে কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে উঠা সব কিছু শিখে নেয়। এখন তারা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে, এই পৃথিবী এখন সম্পূর্ণ কোড দ্বারা পরিচালিত হতে চলেছে! তারা বুদ্ধি খাটিয়ে নতুন নীতি তৈরি করে: প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাজ গঠন করতে হবে! মানুষের চিন্তাভাবনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ করা হবে! তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে!
তারা যখন এসব বিষয় ভাবছে ঠিক তখনই একটি কণ্ঠস্বর শোনা যায়, ‘তোমরাা কি এই নতুন পৃথিবী সঠিকভাবে গঠন করতে পারবে, নাকি এটি একদিন তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে?’
তিন বন্ধু ভাবনার জাল ছিহ্ন করে পেছনে তাকায়। তাদের পেছনে এক অদ্ভুত লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার কোনো মাথা নেই। কিন্তু পুরো শরীর আছে। হাত-পায় আছে। সে কথা বলতে তার হাত দিয়ে। হাত উঁচু করে কণিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে শব্দ করছে।
এবার মিথিলা তার কাছে যায়। অদ্ভুত লোকটা মিথিলাকে বলে, ‘মা মনি। তুমি খুবই বুদ্ধিমতী। তোমরা তিন বন্ধু যদি সঠিক পথে এগিয়ে যাও তাহলে তোমরাই পারবে নতুন প্রযুক্তি দ্বারা তোমাদের দেশকে উন্নত করে গড়ে তুলতে। ভয় পেয়ো না, আমি এক বৈজ্ঞানিক শক্তি, আমার মাথা নেই কিন্তু আমার আঙ্গুলের মাথায় এআই দিয়ে সমস্ত বুদ্ধি-বিবেচনা কোডিং করে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।’
কথাগুলো বলে লোকটা ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়। মিথিলা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। তারপর বন্ধুদের কাছে ফিরে আসে। ঠিক সেই মুহূর্তেই নেক্সাসের সর্বশেষ নির্দেশ আসে, ‘তোমরা এই পৃথিবীর স্থপতি। তোমাদের কোডই ভবিষ্যতের নতুন নিয়ম তৈরি করবে!’
রায়ান দেখলো কম্পিউটারে ভেসে উঠেছে কিছু লেখা :
‘‘নেক্সাসের নতুন পাঠ’’: ‘কোডিং কি?’
তিন বন্ধু একে অপরের দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকালো। তিনজনই ভাবতে শুরু করলো, তারা নতুন পৃথিবীর নির্মাতা হতে চলেছে। কিন্তু প্রথমেই একটি প্রশ্ন উঠে আসে, ‘কোডিং আসলে কী? এটা কীভাবে শেখা যায় এবং কী কাজে লাগে?’
নেক্সাস তিন বন্ধু ভাবনা বুঝতে পেরে উত্তর দেয়: ‘‘কোডিং হলো কম্পিউটারের ভাষা। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে আমরা কম্পিউটারকে নির্দিষ্ট কাজ করতে নির্দেশ দিই। তোমরা যদি নতুন সভ্যতা গঠন করতে চাও, তবে তোমাদের কোডিং শিখতে হবে।”
আরিয়ান প্রশ্ন করে, ‘কোডিং কীভাবে শেখা যায়?’ (চলবে)