সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৮

২০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন

লক্ষ্মীপুরে সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
লক্ষ্মীপুরে সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

মেঘনা উপকূলীয় রায়পুরসহ ৫টি উপজেলা নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় কৃষকদের সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে । চাষীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন বাড়ছে সুপারি উৎপাদন। প্রায় ৭ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমির সুপারি বাগানে ২০ হাজার মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় হাজার কোটি টাকা।

এখানকার উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। সুপারির চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় সুপারি চাষে আগ্রহও বাড়ছে কৃষকদের। অন্যান্য ফসলের চাষাবাদের মতো ঝুঁকি না থাকায় সুপারি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন বেশির ভাগ কৃষক। এবার প্রায় হাজার কোটি টাকার সুপারি উৎপাদনের আশা করছেন জেলা কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার রায়পুরসহ ৫টি উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। সুপারি গাছ একবার রোপণ করলে পরিচর্যা ছাড়াই টানা ২৫-৩০ বছর ফলন দেয়। প্রতি হেক্টরে প্রায় তিন মেট্রিক টন সুপারী উৎপাদন হয়ে থাকে।

জেলায় এবার প্রায় সাড়ে ২০ হাজার মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৫শ' থেকে ২৮শ' টাকা প্রতি কাওন (১৬ পোন) সুপারি বিক্রি হয়। সে অনুযায়ী যার বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে হাজার কোটি টাকা। অথচ গত বছর প্রতি কাওন সুপারি বিক্রি হয়েছে ১৭শ' টাকা থেকে ২২শ' টাকা পর্যন্ত। এবার প্রতি কাওন সুপারি গত বছরের চেয়ে ৭/৮শ' টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করায় দিন দিন এই অঞ্চলে সুপারি উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। সুপারি বাগানে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগ-বালাই কম থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

এখানকার উৎপাদিত সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী ও শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে। সদর উপজেলার দালাল বাজার, রসুলগঞ্জ, চররুহিতা, ভবানীগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন, চন্দ্রগঞ্জ ও রায়পুর বাজার, হায়দারগঞ্জ ও খাসের হাটসহ অন্তত শতাধিক স্থানে সুপারির হাট বসে। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।

চরমোহনা ইউনিয়নের সিকদার রাস্তার মাথা এলাকার সুপারি চাষী আব্বাস উদ্দিন ও হামছাদি ইউনিয়নের মন্ডলতুলি এলাকার আবুল হাসেম বলেন, এবার সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। এতে কৃষকরা খুশি। তবে গত বছরের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি। এখানকার সুপারি যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতি কাওন (১৬ পোন) সুপারি ২৫শ' থেকে ২৮শ' টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পোন সুপারি প্রকারভেদে দেড়শ' টাকা থেকে আড়াইশ' টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। গত বছরের তুলনায় দামও অনেক ভালো। সুপারি পরিচর্যা করতে তেমন খরচও হয় না। একবার গাছ লাগালে দীর্ঘদিন ধরে সুপারি পাওয়া যায়। সুপারির জন্যে বিখ্যাত লক্ষ্মীপুর জেলা।

ব্যবসায়ীরা জানায়, সুপারি গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কম, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কিংবা রোগ-বালাই কম থাকায় কৃষকরা সুপারি চাষের দিকে দিন দিন বেশি ঝুঁকছেন। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে লক্ষ্মীপুরে এই সুপারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে বলেও আশা করেন এই অঞ্চলের মানুষ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জহির আহমেদ বলেন, এবার প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় হাজার কোটি টাকা। দিন দিন সুপারি চাষীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করছে এবং ফলন ভালো হচ্ছে। ফসল উৎপাদনে সুপারি চাষের মাত্রা বাড়ছে দিনদিন। লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। কৃষি বিভাগ থেকে প্রতিনিয়ত কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়