মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫, ০৮:১৫

আমার প্রিয় শিক্ষক

অনলাইন ডেস্ক
আমার প্রিয় শিক্ষক

আমার প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রিন্সিপাল স্যার, যার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আমি স্কুল এবং কলেজসহ সাত বছর পড়েছি। আমার এই সাত বছর শিক্ষা জীবনে স্যারকে কখনও খুব একটা রাগ করতে দেখিনি বললেই চলে এবং তিনি প্রায় সব সময়ই হাসেন। ক্লাস ওয়ানে থাকতে স্যারের মুখস্থ করিয়ে দেয়া কবিতা ‘প্রভাত কাননে আজি ফুটিয়াছে ফুল’ এখনো আমার অবিকল সেই ভাবেই মুখস্ত অথচ স্যারের থেকে শেখা এই কবিতাটি আমি কখনো বইতে পড়িনি এমনকি লিখেও রাখিনি শুধু স্যারের মুখ থেকে শুনে শুনে মুখস্ত করেছিলাম। আমি সবচেয়ে আশ্চর্য হতাম তখনই, যখন দেখতাম আমাদের সামান্য কিছু জিনিসও স্যারের দৃষ্টির বাইরে থাকতো না। আমি যখন স্যারের ক্লাসে মুখ ভারী করে রাখতাম বা অন্য সময় স্যার যখন দেখতেন মুখ ভার তখনই স্যার বলতেন, ‘আজ আকাশে এতো মেঘ কেনরে? একটু পরেইতো বৃষ্টি নামবে,বিদ্যুৎ চমকাবে।’

তারপরই স্যার তার পুরো মুখভঙ্গি এমন করতেন, যেন কোথাও তার চোখ, নাক, মুখ নেই সারামুখময় শুধু বিদ্যুৎ চমকানোর দৃশ্য। স্যার অসম্ভব ভালো ছবিও আঁকতে পারেন, ছোটবেলা ব্লাকবোর্ড এর দিকে অবাক চোখে তাঁকিয়ে দেখতাম একটানে কিভাবে রবীন্দ্র, নজরুলের ছবি একে ফেলেন তিনি। স্যার সব সময়ই তার সব ছাত্র-ছাত্রীকে সন্তান সম ভালোবাসেন, বন্ধুর মতো মেশেন। ছোটবেলায় আমি টাকলু হওয়ার পর আমার মাথায় যখন অল্প দিনের ছোট ছোট চুলগুলো কদম ফুলের মতো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো, তখন তা দেখে স্যার আমাকে প্রায় বলতেন, ‘তোর চুলগুলো দেখলে সজারুর কথা মনে পড়ে যায়।’ তারপর তিনি আমাকে সজারুর মাতৃভক্তির গল্প শোনাতেন। গল্পটা অনেকটা এরকমÑ

‘ছোট একটা সজারু মনের আনন্দে একদিন ঘুরতে বেরিয়েছে। একসময় সে একটা আম গাছের নিচে এসে থামল এবং গাছের তলায় অনেক আম পড়ে থাকতে দেখল। আমগুলো দেখে সজারুর মায়ের কথা মনে পড়ে গেল এবং সে ভাবল আমগুলো পেলে মা ভীষণ খুশি হবে। কারণ তার মা মা তো আম খেতে ভীষণ পছন্দ করে। তারপর সজারুটি আমগুলো কুড়োতে থাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে। কিন্তু আমগুলো কুড়োনো শেষে সজারুর খেয়াল হলো তার তো হাত নেই। তাহলে সে আমগুলো কীভাবে মায়ের কাছে নিয়ে যাবে? এরপর সে ভাবতে ভাবতে একটা বুদ্ধি বের করে ফেলল, সে গাছের উচু ডাল থেকে উল্টো হয়ে আম বরাবর লাফ দিল আর তখনই আমগুলো সোজা তার কাঁটাওয়ালা চুলগুলোর মধ্যে বিঁধে গেল। আর তখন সে সেই আমগুলো পিঠে করে নিয়ে হেলে দুলে তার মায়ের কাছে পৌছাল।’

স্যার অনেক গল্পই বলতেন তারমধ্যে আমাকে নিয়ে বলা এই গল্পটি তার মুখ থেকে শুনতে আমার অন্য রকম ভালো লাগতো।

এইচএসসি পর্যন্তই স্যারের হাতেই ছিলাম, যখন এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, তখন কম্পিউটার চতুর্থ বিষয় হওয়ায় এক ঘন্টার একটু বেশি সময় পরীক্ষা দিয়ে যখন রুমে ডিউটিরত স্যারকে বললাম, ‘পরীক্ষা শেষ খাতা জমা দিতে চাই’। প্রথমে সে নিতে চাইলেন না, পরে জোর করাতে লাইব্রেরী থেকে প্রিন্সিপাল স্যারকে ডেকে আনলেন। সেদিন স্যার এসেই বললো, ‘তোমার কি হয়েছে এতো তাড়াতাড়ি খাতা জমা দিতে চাও ক্যানো?’

আমি বললাম যা কমন পড়েছিল সব লেখা হয়ে গেছে আর পারি না। আমার কথা শুনে স্যার বললেন, ‘অফিস থেকে তোর আব্বুকে খবর দেই এবং বলি তুই একথা বলছিস? তারপরও আমি বললাম, আমিতো আর পারি না, শুধু শুধু হলে বসে থেকে কী করবো? স্যার জানতেন এটাই আমার শেষ কথা...তাই আমার কথা শুনে লাইব্রেরী থেকে কম্পিউটার স্যারকে এনে আমার পুরো খাতা চেক করালেন,কম্পিউটার স্যার যখন বললো পাস করে যাবে,তখন রুমের ডিউটি রত স্যারকে বললেন, ‘খাতা রেখে ওকে যেতে দিন।’ এরকম অসংখ্য স্মৃতি আছে আমার স্যারকে নিয়ে, যা লিখতে গেলে হয়তো হাজার পৃষ্ঠায়ও শেষ হবেনা। আমি জানি, স্যারের প্রায় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীরই এরকম স্মৃতি রয়েছে স্যারকে নিয়ে। আগে স্যারকে দেখে আমার সবসময় শুধু একটা কথাই মনে হতো,স্যার এতো নরম মানুষ কিন্তু কলেজের মতো এতো বড় প্রতিষ্ঠান কিভাবে সামলান? সাথে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনতো আছেই, আমিতো কখনই স্যারকে রাগ করতেও দেখি না। কিন্তু এখন বুঝি, স্যারের সবসময় লেগে থাকা মুখের হাসি, সহজ-সরল ও মজার কথা এবং সবার সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষমতাই হচ্ছে স্যারের চলার পথের সবচেয়ে বড় শক্তি এবং অন্যকে হাতে রাখার ক্ষমতা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়