রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫, ০২:২০

যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আত্মীয়তাও করে না কেউ!

ফরিদগঞ্জে ২০ বছরেও যে রাস্তা সংস্কার করা হয়নি

যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আত্মীয়তাও করে না কেউ!
ফরিদগঞ্জে অমসৃণ এক রাস্তা। ২০ বছরেও যেটির হয়নি কোনো সংস্কার।
এমরান হোসেন লিটন

২ কিলোমিটার ফাঁকা রাস্তা। ২০ বছরেও হয়নি কোনো সংস্কার। এতে করে রাস্তাজুড়ে আছে খানাখন্দ, আর বর্ষার সময় হয় হাঁটু পানি এবং হাঁস বেড়ানোর স্থান।

এমন অবস্থা বিরাজ করে আছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩নং সুবিদপুর ইউনিয়নের মুন্সিরহাট বেইলি ব্রিজ হতে উভারামপুর মুন্সিবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তায়।

স্থানীয়রা রাস্তা সংস্কারের দাবিতে একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও কিছুই হচ্ছে না। রাস্তাটি উভারামপুর এন ইসলাম আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, উভারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাটোয়ারী বাড়ি নূরানী মাদ্রাসা, মুন্সিরহাট হাই স্কুল, মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুন্সিরহাট আলিম মাদ্রাসা, সুরঙ্গচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাওলাদার বাড়ি নূরানী মাদ্রাসা, গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, শোল্লা কলেজ, চাঁদপুর সরকারি কলেজসহ আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।

এই রাস্তাটি ফরিদগঞ্জ এবং হাজীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে সংযোগ সড়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

দীর্ঘ ২০ বছরেও রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।

রাস্তাটি দীর্ঘদিন বেহাল দশায় পড়ে থাকলেও সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি খানাখন্দে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, গত ২০ বছর আগে সাবেক এমপি মরহুম আলমগীর হায়দার খান ক্ষমতায় থাকাকালীন বর্তমান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ইসমাইল তালুকদার খোকনের প্রচেষ্টায় মুন্সিরহাট বেইলি ব্রিজ হতে উভারামপুর মুন্সিবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের প্রক্রিয়া হয় এবং ২০০৭-২০০৮ সালে রাস্তাটি পাকাকরণ বাস্তবায়ন হয়।

কিন্তু অদ্যাবধি রাস্তাটি আর সংস্কার করা হয়নি।

এলাকার কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, এ ধরনের রাস্তা প্রতি ৩/৪ বছর পর পর সংস্কার করার নিয়ম আছে। কিন্তু কী কারণে এই রাস্তাটি ২০ বছরেও সংস্কার করা হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

উভারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম, ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, প্রবাসী নাসির উদ্দিন, জসিম উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, ২০ বছর আগে তালুকদার বাড়ির কৃতী সন্তান ইসমাইল তালুকদার খোকনের প্রচেষ্টায় তৎকালীন এমপি আলমগীর হায়দার খান সাহেবের আমলে এই রাস্তাটি পাকাকরণ হয়।

২০০৭-২০০৮ সালে রাস্তাটি পাকা করা হলেও অদ্যাবধি আর কোনো সংস্কার হয়নি। তাই তারা বলেন, এই রাস্তা দিয়ে চলাচলে ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে।

অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে এলাকার কয়েকজন বলেন, বর্তমানে আমরা সম্মানের দিকে একেবারেই তলানিতে আছি।

আমাদের এলাকাটি বর্তমানে শিক্ষিত এবং ভদ্র সমাজের হলেও উপযুক্ত চলাচলের মাধ্যম না থাকার কারণে এই এলাকায় অন্য এলাকার কেউ আত্মীয়তা করতেও আসে না।

বিবাহের উপযোগী ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা বড়োই বিপাকে আছি।

এছাড়া রাস্তাটির দুর্গতির কারণে গর্ভবতী মহিলা, জটিল ও কঠিন রোগী হাসপাতলে আনা-নেয়া, এলাকার বাহির থেকে কোনো লাশ বাড়িতে আনতে, এলাকার শিশু-কিশোর ও ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে বলে তারা জানান।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ইসমাইল তালুকদার খোকন বলেন, ২০ বছর আগে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া ভাইকে অনেক রিকোয়েস্ট করে এই রাস্তাটি আমি পাকাকরণের ব্যবস্থা করি।

তিনি বলেন, রাস্তাটি পাকাকরণে তখনকার এমপি আলমগীর হায়দার খান ভাইয়েরও সহযোগিতা ছিলো। পরে ২০০৭-২০০৮ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ইকবাল করিম চৌধুরীর চেষ্টায় পাকাকরণ সমাপ্ত হয়। তারপর রাস্তাটি আর সংস্কার করা হয়নি।

তিনি অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে বলেন, রাস্তাটির কারণে বর্তমানে কেউ এই এলাকায় আত্মীয়তা করতে চায় না। এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় খুবই ব্যাঘাত ঘটছে। গর্ভবতী মহিলা ও অন্যান্য রোগীদের আসা যাওয়ায় ব্যাপক সমস্যা হয়। এসব দিক বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি সংস্কার, নয়তো পুনঃ নির্মাণে এগিয়ে আসবেন বলে তার বিশ্বাস।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়