প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৬
বন্ধ মাদ্রাসার নামে শিশুদের ভাড়া করে চলছে অর্থ আদায়!

চলছে না শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম, নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নেই বৈদ্যুতিক মিটার; আছে শুধু পরিত্যক্ত মাঠ, শৌচাগার ও একটি অব্যবহৃত একতলা বিল্ডিং। সামনে সড়কের পাশে ঝুলছে একটি সাইনবোর্ড। এই সাইনবোর্ডের নাম ব্যবহার করে রসিদ বানিয়ে শিশুদের ভাড়া করে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালেকশনের নামে চাঁদাবাজির মহোৎসব করছে একটি চক্র। স্থানীয় লোকজনের এমন অভিযোগ ফরিদগঞ্জ উপজেলার ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের পশ্চিম পোয়া গ্রামের কাটাখালি দারুল উলুম ক্বেরাতুল কোরআন মাদ্রাসা ও পীর মতিনিয়া এতিমখানা নামক একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
|আরো খবর
এমন অভিযোগ ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে কে. এম. নুরে আলম সিদ্দিকী ও হাফেজ কে.এম. মোবারক হোসাইনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ওই গ্রামের প্রয়াত মাওলানা তাজাম্মুল হোসাইন তাঁর বাবার নামে ১৯৯১ সালে এ মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। পতিত আওয়ামী সরকার আমলে মাদ্রাসাটি সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন (নং ৩০৭) করা হয়। প্রতি বছর এ মাদ্রাসায় সরকারিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হতো। প্রথমে কয়েকদিন কিছু শিক্ষার্থী থাকলেও অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু হওয়ায় সকল শিক্ষার্থী চলে যায়। সেই থেকে মাদ্রাসার শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারের তহবিল থেকেও মাদ্রাসাটির অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সরকারি অনুদান বন্ধ হলেও ধর্মভীরু মানুষের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে ওই মাদ্রাসার নামের রশিদ দিয়ে সারাদেশে দান-অনুদানের নামে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। রসিদ দিয়ে টাকা কমিশনে সংগ্রহের কথা স্বীকার করেছে মো. রায়হান নামে এক কিশোর।
মো. মিজান, নুরুল ইসলাম খোকনসহ অনেকে বলেন, মাদ্রাসার কোনো কার্যক্রম না চললেও সারাদেশে রসিদ দিয়ে মাদ্রাসার নামে টাকা আদায় বন্ধ নেই। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই ভণ্ড ও প্রতারকদের কারণে ইসলামের বড়ো ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।
শাহীদা বেগম নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার ছেলেসহ অনেক ছেলেকে পাঞ্জাবি, টুপি ভাড়া ও সাথে রসিদ বই দিয়ে এ মাদ্রাসার জন্যে টাকা উঠাতে পাঠায় এ মাদ্রাসার হুজুররা। এরপর থেকে যারা টাকা তোলে তাদের একটি অংশ দেওয়া হয়, বাকি টাকা নুরে আলম ও মোবারকের পরিবার নিয়ে যায়।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রয়াত মাওলানা তাজাম্মুল হোসাইনের ছেলে কে.এম. নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, টাকা উঠানোর বিষয়ে আমি জানি না। তবে আমরা এখন আর এই মাদ্রাসা চালাই না।
প্রয়াত মাওলানা তাজাম্মুল হোসাইনের আরেক ছেলে হাফেজ কে. এম. মোবারক হোসাইন বলেন, মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ আছে, তবে বছরে বছরে মাহফিল হয়। মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ থাকলে মাদ্রাসার নাম দিয়ে টাকা কালেকশন ও বার্ষিক মাহফিল করা যায় কিনা—এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি।
ফরিদগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক জুমায়েত হোসেন বলেন, এ মাদ্রাসার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, এ মাদ্রাসাটি সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে সরকারি অনুদান, সাধারণত ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টের আওতাধীন ছিলো। আমরা কয়েকবার পরিদর্শনে গিয়ে দেখি, মাদ্রাসায় কোনো শিক্ষার্থী নেই। পরে সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে বার্ষিক অর্থ বন্ধ করা হয়। এখন তারা আমাদের রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। আমি খোঁজখবর নিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।