পল্লীকবি জসীম উদদীনের 'কবর' কবিতার শতবর্ষ উদযাপন

শনিবার (২৩ আগস্ট ২০২৫) পল্লীকবি জসীম উদদীনের ঐতিহাসিক ‘কবর’ কবিতার শতবর্ষ উদযাপন করেছে প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠান চর্যাপদ সাহিত্য একাডেমি ও সামাজিক সংগঠন ইয়ূথ ফোরাম বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত শেষে চাঁদপুর রোটারী ভবনে বিকেল সাড়ে ৪টায় ফিতা কেটে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা।

ইয়ূথ ফোরাম বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর রোটারিয়ান অ্যাড. আলেয়া বেগম লাকীর সভাপ্রধানে ও চর্যাপদ একাডেমির মহাপরিচালক অ্যাডভোকেট রফিকুজ্জামান রণির সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন 'জলছবি' সম্পাদক কবি জামসেদ ওয়াজেদ।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা। বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মতো এতোটা আত্মীয়বান্ধব লোক পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। সে উদাহরণ আমরা 'কবর' কবিতায়ও দেখতে পাই। তিরিশ বছর পরেও মৃত স্ত্রী ও স্বজনদের কথা স্মরণ করে একমাত্র নাতির কাছে একজন বৃদ্ধের করুণ আকুতি জানানোর চিত্র ফুটে উঠেছে এ কবিতায়। জসীম উদদীন গ্রামাঞ্চলের মানুষের ভাষা ও জীবনব্যবস্থা উপজীব্য করে কবিতা লিখেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন 'জলছবি' সম্পাদক কবি জামসেদ ওয়াজেদ। তিনি বলেন, জসীম উদদীনকে শুধুমাত্র পল্লীকবি আখ্যা দিয়ে একটি গণ্ডির মধ্যে আটকিয়ে রাখা ঠিক না, তিনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠতম কবিদের একজন। তাঁকে নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান করা উচিত। কবির নামে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নামকরণ করা উচিত।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চর্যাপদ একাডেমির সভাপতি আয়েশা আক্তার রুপা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইতিহাস চর্চা পরিষদের সভাপতি সোহেল মো. ফখরুদ-দীন, ভাষা আন্দোলন স্মৃতি রক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মআআ মুক্তাদীর। এছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চাঁদপুর জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র দাস, চর্যাপদ একাডেমির সহ-সভাপতি শিউলী মজুমদার, নিয়ন্ত্রণ পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুল্লা কাহাফ, সহকারী পরিচালক ফেরারী প্রিন্স, সহযোগী পরিচালক জয়ন্তী ভৌমিক, নির্বাহী পরিচালক আইরিন সুলতানা লিমা, বিজ্ঞান ও আইসিটি পরিচালক রাসেল ইব্রাহীম, রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেনের অধ্যক্ষ মাহমুদা খানম, জেলা রোভার স্কাউটস সম্পাদক ফয়সাল ফরাজী, রেড ক্রিসেন্টের ফোকাল পার্সন উপদেষ্টা ওমর বিন ইউসূফ চৌধুরী, অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শাহ আলম, রোটারিয়ান শাহীন আক্তার, নারী উদ্যোক্তা সায়রা কাকলি, লেখক রবীন্দ্র মজুমদার ও মুদ্দাসিরসহ আরো অনেকে।

সভাপ্রধান রোটারিয়ান অ্যাড. আলেয়া বেগম লাকী বলেন, অনুষ্ঠানটি সাজানোর আগে আমরা কবি জসীম উদদীনের জন্মস্থানে গিয়েছি এবং তাঁর স্মৃতিময় জায়গাগুলো পরিদর্শন করেছি। আশা করি, আগামীতেও আমরা এ ধরনের উদ্যোগ নেবো।

উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট রফিকুজ্জামান রণি বলেন, জসীম উদদীনের প্রতিটি কবিতায় মাটির গন্ধ পাওয়া যায়। 'কবর' কবিতায় তিনি গ্রামীণ আবহে বেড়ে ওঠা এক বৃদ্ধের জীবনআখ্যান তুলে ধরেছেন করুণ চিত্রকল্পের মাধ্যমে। এই কবিতার প্রতিটি উপমা-উৎপ্রেক্ষা গ্রাম-বাংলার অতি পরিচিত সব উপাদানে ঠাসা।

অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন মিজানুর রহমান স্বপন, সাকিব খান, দিপান্বিতা দাস, মোহাম্মদ শাহজালাল মিয়াজী আবেদ, আবদুর রহিম, প্রাপ্তি ও শ্রাবন্তী দাস।

হাওয়াইয়ান গিটার পরিবশেন করেন খ্যাতিমান গিটারিস্ট দিলীপ ঘোষ, বাঁশি বাজান বেলাল শেখ। সোমা দত্তের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যধারার শিল্পীবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে ১৫জনকে প্রদান করা হয় শুভেচ্ছা স্মারক। চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশাল ও ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলার লেখকরা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানের পূর্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এতে রোভার স্কাউটস, রেড ক্রিসেন্ট ও গার্লস গাইডের সদস্যরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।