রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫০

প্রবাসীদের কথাও একটু ভাবুন

রোটারিয়ান মো. জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়
প্রবাসীদের কথাও একটু ভাবুন

আমরা প্রবাসী। মা আমাদের কাছে নেই। জন্মভূমির মাটির স্পর্শ বঞ্চিত থাকি দিনের পর দিন। আমাদের দিনরাত কাটে পরিশ্রমে, পরিবার আর স্বজনের চিন্তায়। আমরা সব কষ্ট হাসিমুখে সয়ে বেঁচে থাকি। মা যখন মুঠোফোনে জানতে চান, কেমন আছি? মলিন মুখ নিয়েও তখন বলি, ‘ভালো আছি মা। কত সুযোগ-সুবিধা এখানে!’ ছোট ভাইবোনের কত আবদার। কারও বিদেশি চকলেট চাই, কারও বিদেশি পারফিউম। কারও একটা মুঠোফোনের চাহিদা। আমরা নিজেরা এক বেলা কম খেয়েও প্রিয়জনদের আবদারগুলো পূরণ করতে চাই। মৌমাছির মতো তিলে তিলে জমানো টাকা দেশে পাঠাই। রেমিট্যান্স বাড়ে, আমাদের পরিবার-পরিজন সচ্ছল থাকে।

আমরা প্রবাসে থাকি বলেই উপলব্ধি করি দেশের মমত্ব কতোটুকু। উপলব্ধি করি মায়ের মতো দেশও কতো প্রিয়। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে আমরা দিনরাত খেটে যাই। আমাদের পরিশ্রমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। আমরা প্রবাসীরাই ব্যাংকিং চ্যানেলে ২০১৫ সালে ১ হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার ও ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৬১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছি।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় গেছে। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো অর্থ বছরে এতো প্রবাসী আয় যায়নি। এই আয় আগের অর্থ বছরের ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে

রেমিট্যান্স যায় ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। প্রতি বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে তুলনায় প্রবাসীদের সেবার মান বাড়েনি বিভিন্ন সেক্টরে। বিদেশে থাকা মিশনগুলোতে প্রবাসীরা যাতে করে নির্বিঘ্নে সেবা পায় আন্তরিকতার সঙ্গে, সে বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত কঠোরভাবে।

প্রিয় বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়, তখন আমাদের ভালো লাগে। যখন আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতু , কর্ণফুলী সেতু সহ ৬৪ জেলায় বহু উন্নয়ন কাজ হয়েছে দেখি, তখন গর্বে ঘামে ভেজা এ বুক ভরে উঠে। বাংলাদেশি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি, আনন্দিত হই।

আমাদের ঈদ, পূজা উদ্যাপন বলতে তেমন কিছু থাকে না। পরিবার-পরিজন ছাড়া কি আর আনন্দ হয়? তা ছাড়া হয়তো এসব দিনে প্রবাসে ছুটি নেই। ছুটি থাকলেও একা একা মন টানে না। বুক ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করে। নিজেদের এতিম আর নিঃসঙ্গ মনে হয়। প্রবাসী ছাড়া এই বেদনাটুকু আর কেউ উপলব্ধি করতে পারবেন না। এটিও যে আত্মত্যাগ, অনেকে সেটি বুঝতে পারেন না, বোঝার চেষ্টাও করেন না। প্রবাসে থাকলে ভাবি, কবে ছুটি পাবো, কবে টাকা জমাবো, দেশে যাবো। ছুটি মিললেও আর্থিক সামর্থ্য হয়ে উঠে না। দু বছর, তিন বছর, চার বছর পর হয়তো আমরা দুই-তিন মাসের জন্যে দেশে ফিরি। এই ফেরাই আমাদের ঈদের আনন্দ, স্বর্গীয় সুখ বলে মনে হয়। দেশের মাটি ছোঁয়ার জন্যে প্রবাসীদের আকুলতা কে বুঝবে! অতিথি পাখির মতো স্বদেশে আমরা অতিথি হয়ে যাই। শ্রম, ঘাম, জীবন, যৌবন দিয়ে প্রবাসীরা দেশ ও স্বজনের জন্যে কাজ করে। অথচ প্রবাসীরা যেন তাঁদের প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছেন না। কোথাও যেন একটা বাধা আছে। কোথাও যেন আমাদের ছোট করে দেখার মানসিকতা এখনো রয়ে গেছে। সে জন্যে আমাদের কতো রকমের কথা শুনতে হয়। দূতাবাস, বিমানবন্দর থেকে শুরু করে কতো স্থানেই না প্রবাসীদের হয়রানি হতে হয়। আবার অনেকের ‘মূর্খ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘বর্বর’ গালি শুনতে হয়। কেউ কেউ বলেন, আমরা কামলা আরো কতো কী। আমাদের সত্যিই তখন প্রতিবাদের ভাষা থাকে না। আমাদের শ্রমে আমাদের পরিবার সুখে থাকে, আমাদের দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। এটি কি আমাদের অর্জন নয়? আর দেশবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা প্রবাসীদের নিয়ে একটু মানবিকভাবে ভাবুন। প্রবাসীরা ভালো থাকলেই দেশ ও মানুষ ভালো থাকবে। দেশ এগিয়ে যাবে।

লেখক পরিচিতি : মার্কেটিং ডিরেক্টর, প্রবাসী সেবা কেন্দ্র ইডিসি, সৌদি আরব; প্রবাসী গণমাধ্যম কর্মী, সংস্কৃতি সংগঠক; সিনিয়র সহ-সভাপতি, সৌদি আরব বাংলাদেশ প্রবাসী সাংবাদিক ফোরাম; প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি, রিয়াদ বাংলাদেশ থিয়েটার, সৌদি আরব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়