প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৯:২০
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫-এ কিন্ডারগার্টেনসহ বেসরকারি বিদ্যালয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার সংবাদ সম্মেলন
প্রাথমিক বৃত্তি নিয়ে বৈষম্য নয়, সাম্য চাই

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫-এ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখা সংবাদ সম্মেলন করেছে।
|আরো খবর
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট ২০২৫) সকাল ১১টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবে অ্যাসোসিয়েশনের চাঁদপুর জেলা শাখার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৮টি উপজেলার সকল প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশাসহ সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ। এছাড়া বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক সবুজ ভদ্র, চাঁদপুর সদর উপজেলার সভাপতি লায়ন গোলাম হোসেন টিটো, সাধারণ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সহ-সভাপতি কবিতা সাহা, মাহমুদা খানম, সীমা গাইন, আবুল কালাম আজাদ, আরিফ হোসেন, ওয়ালিউল্লাহ, আ. হামিদ, সোমা, মো. হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ৮টি উপজেলার কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মো. আক্তার হোসেন, সাবেক সভাপতি মো. শাহ আলম মুন্সী, আবুল ফারহা মজুমদার, ইব্রাহীম মির্জা, কচুয়া উপজেলার সভাপতি অধ্যক্ষ শাহ মো. জাকির উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, মতলব উত্তর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস. কে. শহীদ, মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখার সভাপতি ফারুক আহমেদ বাদল, সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা কামাল, ফরিদগঞ্জ শাখার সভাপতি রেজাউল করিম মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. জাকির হোসাইন, হাইমচর শাখার সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির দাবি নিয়ে লিখিত বক্তব্যে জেলা সভাপতি মো. ওমর ফারুক বলেন, গত ১৫ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক জারিকৃত পরিপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষায় যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী অবদান রাখা কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সেজন্যে পরিপত্রটি বৈষম্যমূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা এবং ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বৃত্তি পরীক্ষায় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বৃত্তি শুধু একটি আর্থিক অনুদান নয়, এটি একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস, সামাজিক স্বীকৃতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির অনুপ্রেরণা। যখন একটি শিশু দেখবে তার বন্ধুরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে, কিন্তু সে নিতে পারছে না শুধু তার বিদ্যালয়ের স্বীকৃতির ধরণ ভিন্ন বলে, তখন তা তার মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি শিশুদের মধ্যেই একটি বৈষম্যমূলক মনোভাব গড়ে তুলবে, যা জাতীয় শিক্ষানীতির সাম্যের নীতির পরিপন্থী। বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে, শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের ওপর যে মানসিক চাপ ও যন্ত্রণার সৃষ্টি হবে, তার সকল দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা মানে কেবল সাক্ষরতা নয়, ভবিষ্যতের জন্যে একটি শক্ত ভিত গড়ে দেওয়া। সেই ভিত গড়ার প্রথম ধাপেই যদি বৈষম্য শুরু হয়, তাহলে আমরা কীভাবে সমতার সমাজ গড়বো?
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, শিক্ষা শিশুদের মৌলিক অধিকার। কোনো শিশুকে তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। জুলাই বিপ্লবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকার। তাই বর্তমান সরকারের সময়ে কিন্ডারগার্টেনের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আবার সেই বৈষম্যের শিকার হোক—এটা অপ্রত্যাশিত। তাই ইতোমধ্যে জারিকৃত পরিপত্রটি বাতিল করে ২০২৫-এ অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষাসহ প্রাথমিক শিক্ষার জন্যে গৃহীত অন্যান্য যে কোনো কার্যক্রমে প্রাথমিক শিক্ষায় অংশীজন হিসেবে কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সমঅধিকার যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, তার প্রতি সদয় দৃষ্টি দানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে দাবিসমূহ যদি বাস্তবায়িত না হয়, এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঘেরাও, পরে বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও, মার্চ ফর ঢাকা সহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে জানান কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি বলেন, চাঁদপুর জেলায় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৮৪টি। প্রাথমিক স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত হাইস্কুল রয়েছে ৩৬টি। প্রাথমিক স্কুলগুলোতে ৫ম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৯ হাজার এবং নার্সারি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে এক লাখ সাতাশ হাজার আটশ' এবং শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১২ হাজার।