প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৫, ০৮:৫৫
আমাদের সময়ে বিনোদন বলতেই ছিলো খেলা
বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল ও রাজনীতিমুখী হয়ে গেছে
----চট্টগ্রাম মোহামেডানের সাবেক অধিনায়ক সফিকুল ইসলাম

বর্তমান প্রজন্ম মোবাইল ও রাজনীতিমুখী হয়ে গেছে, আমাদের সময় বিনোদন বলতেই ছিলো খেলা। আমরা খেলা আর পড়ালেখা ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। এ প্রজন্ম পুরোপুরি খেলাবিমুখ। একবার আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে একটা টিম গঠনের চেষ্টা করি। দেখলাম কী, মাঠে এসেই কিছু পর পর খেতে চলে যায়, খেলে শরীর ভার হয়, ক্লান্তি চলে আসে, আবার একদিন আসে দুইদিন আসে না, আবার শুনি মিছিল মিটিংয়ে চলে গেছে, মাঠে আসবে না, মাঠে এসেও মোবাইল টিপে। বর্তমান প্রজন্ম নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছেন চট্টগ্রাম মোহামেডান ক্লাবের সাবেক অধিনায়ক সফিকুল ইসলাম (৫৫)।
সফিকুল ইসলাম দেশে নামীদামী ফুটবল ক্লাব, সাফ গেমসও দেশের হয়ে খেলছেন। এমনকি ইংল্যান্ডে চেলসি ক্লাব ও ওয়েস্টহ্যাম ক্লাবের বিপক্ষে দেশের হয়ে জয় কুড়িয়ে এনেছেন। সাবেক ফুটবল তারকা হাজীগঞ্জের টোরাগড়ের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পাক্ষিক বিশেষ আয়োজন ‘ক্রীড়াকণ্ঠ’কে সাক্ষাৎকার প্রদানকালে জানান নিজের হাজারো স্মৃতির কথা। বয়সটা খুব বেশি না হলেও কিছুটা শারীরিক সমস্যা আর সংসার নিয়ে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানা যায়, হাজীগঞ্জ পাইলট সরকারি হাই স্কুল এন্ড কলেজের ঠিক পেছনে নিজের পৈত্রিক জমিতে নিজেই করেছেন আলিশান বাড়ি। সেখানে দুই পুত্র সন্তানসহ স্ত্রীকে নিয়ে থাকছেন। তিনি টোরাগড় মিজি বাড়ির মৃত আলী আশরাফ কালু মিয়ার সন্তান। ৪ ভাই ও ৩ বোনে মধ্যে সবার বড় তিনি। তাঁর বাবাও ছিলেন একজন ফুটবল খেলোয়াড়।
চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন খেলা সংক্রান্ত নানা কথা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করা সফিকুল ইসলাম জানান, বলা চলে খেলা শুরু করেন সেই লেংটাকাল থেকে। ১৯৮০ সালের দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকাকালেই চাঁদপুরে গিয়ে খেলা শুরু করেন। মাধ্যমিকে পড়াকালীন স্কুলের পক্ষে টিমপ্রধান হয়ে চাঁদপুরে ও কুমিল্লা গিয়ে খেলেছেন। চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হবার পর আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলা খেলেছেন। একই সাথে কুমিল্লা, ফেনীতে গিয়ে আন্তঃকলেজ পর্যায়ে খেলে জয়লাভ করেছেন। তবে সালটা সম্ভবত ১৯৮৯ সালের হবে। চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়াকালে ১৯৯০ সালে বিষ্ণুদী ক্লাবের হয়ে চাঁদপুর লীগে খেলে জয়লাভ করেছেন। এখানে খেলাবস্থায় ঢাকা ফায়ার সার্ভিস টিমে ডাক পড়ে। সেখানে এক বছর খেলার পর ১৯৯১ সালে আরামবাগ ক্লাবে চলে যান। ১৯৯৩ পর্যন্ত আরামবাগে খেলে ১৯৯৪ সালে ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবে চলে যান। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সেখানে খেলে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবলের অনূর্ধ্ব-১৯ টিমে শ্রীলংকা খেলতে যান, সেখানে তিনটি খেলার মধ্য দুটি টিমের বিপক্ষে খেলে তার দল তথা বাংলাদেশ রানার্সআপ হয়। দেশে ফিরে ঢাকা লীগে খেলা শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে ফরাশগঞ্জ ক্লাবে যোগদান করেন। ২০০৬ পর্যন্ত ফরাশগঞ্জের হয়ে খেলেন। এর মাঝখানে দুবার ঢাকা মোহামেডানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরেও নিজের নানান জটিলতার কারণে যাওয়া হয়নি। এর মাঝেই ১৯৯১ সাল থেকে মূলত ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রথম বিভাগের দল শতদল স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে খেলেন। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ক্লাবে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগরের পক্ষে বহু লীগে অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়নসহ হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে তার দল। ২০০৪-২০০৫-২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মোহামেডানের পক্ষে নিটল টাটা ফুটবল লীগে অংশগ্রহণ করে একাধিক খেলা খেলেন। ২০০৪-২০০৫ এই দুই বছর চট্টগ্রাম মোহামেডানের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০০২ সালে চট্টগ্রাম আবাহনীর পক্ষে অতিথি খেলোয়াড় হিসেবে লন্ডনে খেলতে যান। সেখানে ৩টি খেলার মধ্যে চেলসি ক্লাব ও ওয়েস্ট হ্যামের বিপক্ষে দুটি খেলা খেলেন। ওয়েস্ট হ্যামের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২/১ গোলে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে।