শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০২:২৯

বনানীতে হোটেল হামলার ভয়ঙ্কর চিত্র!

নারীর ওপর সহিংসতা ও রাজনৈতিক অপকর্মে জড়িত যুবদল নেতা মনির হোসেন বহিষ্কৃত, গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত

বিশেষ প্রতিনিধি: মো. জাকির হোসেন
বনানীতে হোটেল হামলার ভয়ঙ্কর চিত্র!
হোটেলে ভাঙচুরের একপর্যায়ে নারীদের ওপর হামলা করেন কয়েকজন। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর বনানীর অভিজাত এলাকা যেন সহিংসতার নতুন ক্যানভাসে রূপ নিয়েছে। বুধবার (২ জুলাই) রাতে বনানীর জাকারিয়া হোটেলে সংঘটিত নারকীয় হামলার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। হোটেল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার পর থেকে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সরোয়ার।

“জাকারিয়া হোটেলের ঘটনায় অভিযুক্তদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হোটেল কর্তৃপক্ষ একটি মামলা করেছে।” — বলেন ওসি রাসেল সরোয়ার। তিনি আরও জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত ঘটে বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেনের নেতৃত্বে। হামলার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অভিযোগ উঠে আসে। ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি অনুযায়ী, তিনি সরাসরি হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

দল থেকে বহিষ্কার মনির হোসেন

বৃহস্পতিবার রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “মনির হোসেনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

তারা আরও বলেন, “তার কোনো অপকর্মের দায় দল নেবে না। সকল নেতাকর্মীকে তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

এই ঘটনার পর থেকেই ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, শাড়ি পরা এক নারী হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নামছেন। বিপরীত দিক থেকে আসা এক ব্যক্তি তার পথরোধ করে তাকে আঘাত করেন, তিনি মেঝেতে পড়ে যান। তার পেছনে থাকা আরেক নারীকেও ফেলে দিয়ে মারধর করা হয়। তারা আতঙ্কে চিৎকার করছিলেন।

ভিডিওতে ৮ থেকে ১০ জনকে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে ক্রমাগত নতুন লোক ঢুকতে এবং কিছু বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।

হোটেল কর্তৃপক্ষ বনানী থানায় একটি মামলা করেছে। তারা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা হোটেলের গেস্ট ও স্টাফদের মারধর করে, ভাঙচুর চালায় এবং নারী অতিথিদের হেনস্থা করে।

ওসি রাসেল সরোয়ার বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও বিশ্লেষণ ও সাক্ষীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে।”

ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার এবং দলীয় প্রভাব বিস্তারের একটি নগ্ন উদাহরণ সামনে এসেছে। বিএনপি ও যুবদল দাবি করেছে, তারা এই ঘটনার দায় নিচ্ছে না এবং যথাযথ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

মানবাধিকার সংগঠনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারীপক্ষ, ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, “নারীকে প্রকাশ্যে নির্যাতন করে দম্ভ দেখানো একটি ভয়াবহ সামাজিক সংকেত।”

তারা অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।

এদিকে মনির হোসেন আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার অবস্থান শনাক্তে কাজ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “রাজনৈতিক পরিচয়ে কেউ আইন লঙ্ঘন করলে, তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

রাজধানীর হোটেল এলাকায় এমন নৃশংস ঘটনা শুধুই আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতার প্রতিফলন নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক নৈতিকতারও ভয়ানক অবক্ষয়। অপরাধীর পরিচয় নয়, অপরাধই বিচার্য হওয়া উচিত—এটাই সময়ের দাবি।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়