সোমবার, ১২ মে, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫, ২৩:৩৬

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: জাতীয় ঐক্যের পথেই কি এগোচ্ছে বাংলাদেশ?

অন্তর্বর্তী সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থার আওতায় ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত

বিশেষ প্রতিবেদক: মো.জাকির হোসেন
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: জাতীয় ঐক্যের পথেই কি এগোচ্ছে বাংলাদেশ?
ছবি : সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: জাতীয় ঐক্যের পথে বাংলাদেশ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী পালাবদল ঘটেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকার এই পদক্ষেপকে "সন্ত্রাস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় অবস্থান" হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল শনিবার রাতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,
“আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১২(ক) ধারার অধীনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান দমনকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলবে।”

পূর্ব ভূমিকা: ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের ধারাবাহিকতা

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে এর আগেই ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণা ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কারণ, ছাত্রলীগের সহিংস ভূমিকা এবং শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত অভিযোগগুলো ইতোমধ্যেই জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা নজরে এনেছে।

বিক্ষোভের চাপ ও জনদাবি: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পথ সুগম করে

ঢাকার শাহবাগ, মতিঝিল, উত্তরা, চট্টগ্রামের জিইসি মোড়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক রাস্তায় নেমে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল।

নতুন গঠিত ছাত্র সংগঠন ‘জাতীয় ছাত্র জোট’ এবং জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র শাখা ‘শিবির’– উভয়েই নিষেধাজ্ঞার দাবিতে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেয়।

রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান ও হত্যা তদন্ত

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রক্তাক্ত রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয়। সরকারবিরোধী আন্দোলনকালে নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি সমর্থকদের হাতে গুলিবিদ্ধ ও নিহত হন শত শত আন্দোলনকারী।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঐ সময়ের মধ্যে প্রায় ১,৪০০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতা এবং রাজনৈতিক নির্দেশনার মূল দায়িত্বে থাকার কারণে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

‘সত্য ও সম্প্রীতি কমিশন’ গঠন, কিন্তু সন্দেহ থেকেই যায়

অন্তর্বর্তী সরকার দেশের ঐক্য ও পুনর্মিলনের লক্ষ্যে ‘সত্য ও সম্প্রীতি কমিশন’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এই কমিশনের লক্ষ্য হবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সংঘটিত রাজনৈতিক নিপীড়ন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং দুর্নীতির তদন্ত ও নিরপেক্ষ তথ্য উপস্থাপন।

তবে সমালোচকদের মতে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা যেমন অনেকের কাছে স্বস্তির বিষয়, তেমনি রাজনৈতিক সমঝোতার দরজা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে।

রাজনৈতিক পালাবদল: খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন ও ইউনূসের অবস্থান

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা শেষে চলতি মাসেই দেশে ফিরে এসেছেন। তাঁর আগমন রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে।
অন্যদিকে ড. ইউনূস জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের পূর্বে অনুষ্ঠিত না হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও তিনি বারবার "অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন" আয়োজনের কথা পুনর্ব্যক্ত করছেন।

আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া: ফেসবুক পোস্টে প্রতিবাদ

দল নিষিদ্ধ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের একটি আনঅফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়,
“এই অবৈধ সরকারের সব সিদ্ধান্তই অবৈধ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলে কেউ জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে পারে না।”
বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতের নির্বাসনে আছেন এবং ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে তাঁর কোনো জনসমক্ষে উপস্থিতি নেই।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’ এখনো বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বিশ্লেষণ: নিষেধাজ্ঞার রাজনৈতিক বার্তা কী?

এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের নিষেধাজ্ঞা নয়—এটি এক যুগব্যাপী ক্ষমতাকেন্দ্রিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রতিরোধ।
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বা গুমের মতো অপরাধের জন্য কেউ দায় এড়িয়ে যেতে পারবে না, তা সে যতই প্রভাবশালী হোক না কেন।

“আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কারণ এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে প্রমাণিত।”

— ড. আসিফ নজরুল, আইন উপদেষ্টা

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়