প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১০
থানায় নারীদের বিক্ষোভ, হাতাহাতি!

|আরো খবর
নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সাগর হাসানের গ্রেপ্তার ঘিরে থানা ঘেরাও ও হাতাহাতি, নাটকীয় উত্তেজনা
নিজস্ব প্রতিনিধি, কালবেলা: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা সাগর হাসানকে গ্রেপ্তারের পর থানা ঘেরাও, বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক হাতাহাতির এক নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গ্রেপ্তারের পরদিন সকালেই থানায় হট্টগোল
জানা গেছে, রোববার (২০ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে মাহমুদপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী এলাকা থেকে পুলিশ গোপন অভিযানে সাগর হাসান (২৫)-কে গ্রেপ্তার করে। তিনি মাহমুদপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কল্যান্দী শেখ বাড়ির কবির হাসানের ছেলে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে ২০-৩০ জন নারী আড়াইহাজার থানায় উপস্থিত হয়ে সাগরের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা নিজেদের সাগরের আত্মীয় পরিচয় দেন এবং জানতে চান, কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কেন।
“আমার ভাই নির্দোষ! রাজনৈতিক কারণে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা তাকে ফেরত চাই!”
বিএনপির নেতাকর্মীরা এসে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে
বিক্ষোভের খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল ও মহিলা দলের নেতাকর্মীরাও থানায় ছুটে আসেন। তারা অভিযোগ করেন, থানায় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
একপর্যায়ে নারীদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। থানা পুলিশ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়।
“পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা”: পুলিশের দাবি
“ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর পরিকল্পিতভাবে একদল নারী থানায় এসে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করেন। তারা সাগরের আত্মীয় পরিচয় দিলেও তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মূল উদ্দেশ্য ছিল অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।” — মেহেদী ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার
তিনি আরও বলেন, সাগরের মা ও খালাকে কিছু সময়ের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার সাগরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপির পাল্টা বক্তব্য
“ঘটনাটি আমি শুনিনি। খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। যদি কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থেকে কাউকে হয়রানি করা হয়, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।” — ইউসুফ আলী, সভাপতি, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপি
কে এই সাগর হাসান?
সাগর হাসান দীর্ঘদিন ধরে আড়াইহাজারে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে তার নাম উঠে আসে। একাধিক অভিযোগে তাকে সংগঠন থেকেও সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
স্থানীয়দের মতে, মাহমুদপুর এলাকায় তার প্রভাব ছিল ব্যাপক। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হুমকির অভিযোগ রয়েছে।
রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা
ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়ছে। একপক্ষ বলছে, দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধে যুক্ত থাকার কারণে সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যপক্ষ বলছে, এটি রাজনৈতিক হয়রানি।
“সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় পরিচয়ে অপরাধীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রশাসন কঠোরভাবে ব্যবস্থা না নিলে জনগণের আস্থা নষ্ট হবে।” — মতিউর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
বিশ্লেষণ: এই ঘটনাটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধ ঢাকার সংস্কৃতির একটি বহুল আলোচিত দৃষ্টান্ত। একইসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক সহনশীলতার অভাবকেই সামনে এনেছে।
শেয়ার করুন:
[ফেসবুকে শেয়ার করুন] | [টুইটারে শেয়ার করুন] | [হোয়াটসঅ্যাপে পাঠান]
ডিসিকে/এমজেডএইচ