মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

চোরদের অভয়ারণ্য কি বাকিলা বাজার?
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর জেলার বিখ্যাত বাজারগুলোর মধ্যে পাকিস্তান আমল থেকে বাকিলা বাজারের প্রসিদ্ধি গরুর জন্যে। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এ বাজারটি হাজীগঞ্জ উপজলার ২৮টি ছোট-বড় হাট-বাজারের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ বাজারটির এতোটাই গুরুত্ব যে, হাজীগঞ্জ ও মহামায়া বাজারের মধ্যবর্তী এ বাজারে নির্দিষ্ট বিরতিসম্পন্ন বাসগুলো থামে এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো দিয়ে যাত্রীরা চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত করে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার হাটবার দিনে বাকিলা বাজারে হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়। এ বাজারের অভ্যন্তরে এবং আশেপাশের দোকানগুলোতে জেলার সবচে’ সুস্বাদু কফি বিক্রি হয় বলে এখানে কিশোর-যুব বয়সী অসংখ্য লোক প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ছোট যানবাহনে গভীর রাত পর্যন্ত যাতায়াত করে। এখানে আকর্ষণীয় পার্কও গড়ে উঠেছে।

চাঁদপুর কণ্ঠে মঙ্গলবার এই বাকিলা বাজারকে নিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদে অনেক পাঠকেরই মন খারাপ হয়েছে। এ সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘বাকিলা বাজারে একের পর এক চুরিতে নাস্তানাবুদ ব্যবসায়ীরা’। এ সংবাদ পড়ে এবং এ চুরিরোধে সংশ্লিষ্ট সকলের লাগাতার ব্যর্থতা জেনে নির্দ্বিধায় বলা যায়, হালে বাকিলা বাজার যেনো চোরদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

এ সংবাদটিতে আনোয়ার হোসেন কালু নামে একজন ব্যবসায়ীর দোকানে দুবার চুরির ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে তার দোকানের চালের টিন কেটে চোর ঢুকে শতাধিক মোবাইল ফোন সেটসহ লক্ষাধিক নগদ টাকা নিয়ে যায়। প্রায় তিন মাস আগে একই দোকানে চোর ঢুকে বৈদ্যুতিক তারের ক্যাবল, মোবাইল ফোনসেট, সিম ও বিকাশের টাকা নিয়ে যায়। ১৫ দিন আগে এই বাজারের মামুন নামে এক ব্যবসায়ীর ২২ ব্যারেল তেল চুরি হয়। গত সপ্তাহে তৈল ব্যবসায়ী মনিরের দোকান থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা, কিছুদিন আগে ব্যবসায়ী নেপালের দোকান থেকে বড় মরিচের বস্তা, গত বছর শৈলী গার্মেন্টস্-এর টিনের চাল কেটে নগদ টাকাসহ মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। চুরির শিকার ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই চুরির প্রতিকার পেতে থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু চোর আটক বা মালামাল উদ্ধারে হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। যার ফলে ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে।

বাকিলা বাজারে চুরি রোধে এই বাজারের ব্যবসায়ী সমিতি ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতার কারণেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। সমিতির মাধ্যমে নিয়োজিত নৈশ প্রহরীদের বেতন পরিশোধে ধার্যকৃত চাঁদা পরিশোধ করেনি ৬০ ভাগ ব্যবসায়ী। বাধ্য হয়ে নৈশ প্রহরীদের টহল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। যার পরিণতিতে বাকিলা বাজারে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে চলছে এবং হয়তো বা আরো ঘটবে।

বাকিলা বাজারের চুরি রোধে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষে প্রতি রাতে এ বাজারের ভেতর ও বাইরে টহল কার্যক্রম চালানোর কোনো সুযোগ নেই। চুরি রোধে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-এর উপস্থিতিতে বাকিলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতি আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যবসায়ী-সমাবেশের আয়োজন করতে পারে বাকিলা হাই স্কুলের কোনো কক্ষে। এজন্যে প্যান্ডেল বানিয়ে, মঞ্চ সাজিয়ে ব্যয়বহুল কিছু করাটা শো-ডাউন হবে। উক্ত সমাবেশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সেটা হতে পারে পুনরায় নৈশ প্রহরীদের মাধ্যমে টহল কার্যক্রম চালু কিংবা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে পালাক্রমে প্রহরার ব্যবস্থা। যেটাই করা হোক, একই সাথে পুলিশকেও ইতিমধ্যে সংঘটিত চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে সর্বোচ্চ তৎপরতা প্রদর্শন করতে হবে এবং সাফল্যও অর্জন করতে হবে। আমরা মনে করি, বাকিলা বাজারে একের পর এক সংঘটিত চুরির ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ এবং ব্যবসায়ী সমিতির নিষ্ক্রিয়তা ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভ দুটোই বাড়িয়ে দেবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়