শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:২৯

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আহ্বানটি বিবেচনাযোগ্য

অনলাইন ডেস্ক
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আহ্বানটি বিবেচনাযোগ্য

৫৫তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ফরিদগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। এতে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেটু কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে চঁাদপুর জেলা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন সাবু পাটওয়ারী মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বলেন, পতিত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহার করেছিলো তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে। গুটিকয়েক মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া বাকি মুক্তিযোদ্ধারা সবসময় অবহেলিত ছিলেন। যেই কোটা নিয়ে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিলো, সেই কোটা নিয়ে ছিলো ছলচাতুরি। আমি আওয়ামীবিরোধী রাজনীতি করতাম বলে আমার মেয়ের সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোটায় চাকুরি হয়নি। ফল হিসেবে ফ্যাসিবাদী শক্তি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হয়েছে। কিন্তু ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের দিন ফরিদগঞ্জ উপজেলাসহ সারা দেশে কেনো মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় তথা কমপ্লেক্স ধ্বংস করা হলো? মুক্তিযোদ্ধারা তো কোনো অপরাধ করেনি। কারা এই ধ্বংসের পেছনে জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে হবে। একই সাথে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আজো পথে পথে হঁাটছি, একটু বসার জায়গা নেই। কমপ্লেক্সগুলোর এমন অবস্থা করেছে যে, বিদ্যুতের তারগুলো পর্যন্ত তারা খুলে নিয়ে গেছে। পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই কমপ্লেক্সগুলোর কী হবে, তা নিয়ে আমরা হতাশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা কোনো ফলাফল না জেনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে ঝঁাপিয়ে পড়েছিলো বলেই আজ আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাই আজ বিজয় দিবসের শুভক্ষণে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে ওই দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই। এ সময় হলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় ফরিদগঞ্জসহ সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সগুলো ভাংচুর করা হয় কিংবা পুড়িয়ে দেয়া হয়। যারা এ কাজটি সজ্ঞানে করেছে, তারা ভেবেছে, এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে কোনোদিন কেউ প্রতিবাদ করবে না, বিচার চাইবে না। অবশেষে ফরিদগঞ্জের নেতৃস্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন সাবু পাটোয়ারী বিচার চাইলেন পরিবেশ-পরিস্থিতির আনুকূল্য নিয়ে। নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ দাবিতে সাড়া দেবার সম্ভাবনা কম। তবে এ দাবিটি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার আমলে নিলে ভালো হবে বলে মনে করি।

আমাদের মতে, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের সফলতা অনস্বীকার্য। স্বৈরাচার এরশাদের পতনে ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান ছিলো অনিবার্য। ৩৫ বছর পূর্বে স্বৈরাচারবিরোধী অভ্যুত্থানশেষে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সংসদ টার্গেট হয়নি, কোনো মুক্তিযোদ্ধা অপমানিত হননি। কিন্তু ১৭ মাস পূর্বে ফ্যাসিস্টবিরোধী জুলাই বিপ্লবের সফলতার অব্যবহিত পরেই একযোগে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অবকাঠামো টার্গেট হয়ে ধ্বংসের শিকার হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধারা একের পর এক অপমানিত হয়েছেন। এর পেছনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র যে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কাজ করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আসন্ন নির্বাচন শেষ হলে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখন শুধু পুলিশ নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল ইউনিটকে সম্মিলিতভাবে তাদের পেশাগত দক্ষতা প্রদর্শন করে এই চক্রের হোতাদের খুঁজে বের করতে কাজে লাগাতে হবে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এটি কষ্টকর বা দুঃসাধ্য মনে হলে ধ্বংসপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সকল কমপ্লেক্স মেরামত বা পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, নব্বই ও চব্বিশের সাফল্য দিয়ে ১৯৭১-এ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে কোনোভাবেই ঢেকে ফেলা যাবে না। তঁাদেরকে দলীয় পরিচয়ে ব্যবহার করে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন শাসক সুবিধা লুটেছে, যেটা ছিলো ঘৃণ্য। ভবিষ্যতে এমন প্রয়াসের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদেরই রুখে দঁাড়াতে হবে কিংবা তীক্ষ্ণ সচেতন থাকতে হবে। তাহলে তঁাদের স্থাপনায় আর কখনো হামলা হবে না এবং তঁারাও অপমানিত হবেন না বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়