শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৫২

প্রবীণ জীবনে স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্কের গুরুত্ব

অনলাইন ডেস্ক
প্রবীণ জীবনে স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্কের গুরুত্ব

প্রবীণ বয়সে মানুষের জীবনের ধারা ও মানসিক চাহিদা অনেকটাই বদলে যায়। শারীরিক শক্তি ও যৌবনের তীব্র আকর্ষণ ধীরে ধীরে কমে আসে, কিন্তু আবেগ, ভালোবাসা এবং মানসিক সংযোগের প্রয়োজন আরও গভীর হয়। এই বয়সে মানুষ আর কেবল শরীর নয়Ñমন, চিন্তা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির বিনিময়ের মধ্যেই সম্পর্কের আনন্দ খুঁজে পায়। এমন এক মানসিক আকর্ষণের ধরণই হলো স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্কÑযেখানে একজন ব্যক্তি অন্যের বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাশক্তি, অভিজ্ঞতা ও ব্যক্তিত্বে আকৃষ্ট হয়।

প্রবীণ বয়সে যখন একাকীত্ব বাড়ে, সন্তানরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন মানুষ চায় এমন এক সঙ্গ, যার সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান সম্ভব, যে মন খুলে কথা শুনবে, বুঝবে, সম্মান দেবে। স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্ক ঠিক এই জায়গাতেই অর্থবহ হয়ে উঠে। এটি শুধু ভালোবাসার নয়, আত্মার সংযোগের সম্পর্কÑযেখানে মস্তিষ্ক ও মন উভয়েই অংশ নেয়।

প্রবীণ বয়সে যৌন আকর্ষণ কমে যাওয়া কোনো দুর্বলতা নয়, বরং এটি জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এই সময় মানুষ জীবনের সঞ্চিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিকে ভাগাভাগি করার মতো একজন শ্রোতা বা সঙ্গী খেঁাজে। সেই মানুষটি যদি মানসিকভাবে সমৃদ্ধ, চিন্তাশীল ও সহমর্মী হয়, তবে সম্পর্কটি হয়ে উঠে গভীর ও স্থায়ী। স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্কের মূল শক্তি এখানেইÑশরীর নয়, মন ও চিন্তার বন্ধনে গড়ে ওঠা এক স্নিগ্ধ সঙ্গ।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা দেশে দেখা যায়, অনেক প্রবীণ পুরুষ ও নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ক্লাব, বা পাঠচক্রের মাধ্যমে মানসিকভাবে কাছাকাছি মানুষ খুঁজে পান। তারা হয়তো একই বিষয়ে আগ্রহীÑসাহিত্য, রাজনীতি, সমাজসেবা বা দর্শনে। এ ধরনের মিল থেকে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় মমতা, সম্মান ও ভালোবাসা। এই ভালোবাসা সাধারণ প্রেমের চেয়ে ভিন্নÑএখানে শারীরিক আকর্ষণের স্থান খুবই কম, কিন্তু পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আবেগের গভীরতা অনেক বেশি।

স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্ক প্রবীণ জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিকভাবে সক্রিয় ও সংযুক্ত প্রবীণরা হতাশা, উদ্বেগ ও ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক রোগে কম ভোগেন। একজন বুদ্ধিদীপ্ত সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা, তর্ক, গল্প বা স্মৃতিচারণ মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, জীবনে নতুন উদ্দীপনা আনে। এভাবে সম্পর্কটি হয়ে উঠে মানসিক থেরাপির মতোÑনিঃসঙ্গতা দূর করে, আত্মসম্মান বাড়ায়, জীবনের প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে রাখে।

তবে এখানে একটি ভারসাম্য জরুরি। প্রবীণদের স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্ক যেন সামাজিক মূল্যবোধ বা পারিবারিক বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, বরং আরও সমৃদ্ধ করে তোলেÑএই মনোভাব থাকা প্রয়োজন। অনেক সময় সন্তান বা সমাজ এমন সম্পর্ককে ভুলভাবে বোঝে, যা প্রবীণদের মধ্যে অপরাধবোধ বা লজ্জার সৃষ্টি করে। অথচ, বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধুত্ব বা মানসিক সম্পর্ক বয়সের কোনো বাধা মানে না। জীবনের শেষ প্রান্তেও মানুষ চিন্তা, অনুভূতি ও ভালোবাসার যোগসূত্রে নতুন করে বঁাচতে পারে।

প্রবীণ জীবনে স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্ক তাই শুধু আকর্ষণের বিষয় নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মিক পরিতৃপ্তি এবং সামাজিক সম্প্রীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এমন সম্পর্ক মানুষকে শেখায়Ñভালোবাসা কেবল দেহের নয়, মনেরও। বয়স যতোই বাড়ুক, চিন্তা, সহমর্মিতা ও কথার আদান-প্রদানের আকর্ষণ কখনও ফুরায় না।

অতএব, প্রবীণ বয়সে স্যাপিওসেক্সুয়াল সম্পর্ক হলো এক নবজাগরণÑযেখানে মনের গভীরে জমে থাকা নিঃসঙ্গতা দূর হয়, বেঁচে থাকার আনন্দ ফিরে আসে। শরীর হয়তো দুর্বল হয়, কিন্তু মন তখনও উজ্জ্বল, সজীব, প্রেমময়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়