সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০০

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক বলে-

অনলাইন ডেস্ক
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক বলে-

চাঁদপুর শহরের বিপণীবাগ বাজারের মাংস ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রায়ই বাজারের মাংস ব্যবসায়ীদের হাতে ক্রেতারা লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগের কথা শোনা যায়। তেমনি বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর ২০২৫) সন্ধ্যায় বাজারে গরুর মাংস ক্রয় করতে যাওয়া নারী ও পুরুষ ক্রেতা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে চাকরিরত) মাংসর দোকানি সাগরের সাথে গরুর মাংস ক্রয় করার জন্যে মূল্য নির্ধারণ করেন। সেই নির্ধারিত মূল্যে দুই ক্রেতা মাংসের অর্ডার দেন। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত অর্ডারের টাকাও পরিশোধ করেন। পরে দোকানি মাংস প্যাকেট করে দেয়ার সময় ‘গোশতের মধ্যে হাড্ডি বেশি’ এমন কথা বললে সাগর উত্তেজিত হয়ে নারী ও পুরুষ ওই দু ক্রেতার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে সাগর ও দোকানের কর্মচারীরা এ দু ক্রেতাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে বাজারের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের সহায়তায় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু ক্রেতারা এর ফাঁকে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাহার মিয়াকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে এসআই মো. সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাংসের দোকানি সাগর, সোহাগ ও সোহেলকে আটক করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় নিয়ে আসেন। আটক তিন মাংসের দোকানি চাঁদপুর শহরের মধ্য শ্রীরামদী এলাকার বাসিন্দা বলে জানা যায়। বিষয়টি সমাধান করে মাংস ব্যবসায়ীদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে একটি মহল গভীর রাত পর্যন্ত তদবির করেও ব্যর্থ হয়। শুক্রবার (৩ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে আটককৃতদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ আদালতে প্রেরণ করে।

উল্লেখ্য, বিপণীবাগ বাজারের মাংসের ব্যবসায়ীসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের সাথে নানা ধরনের রুঢ় আচরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে নানা কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণে গড়িমসি বা এড়িয়ে চলার অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের। বিপণীবাগ বাজারের কিছু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। এ অভিযোগ নিরসনে প্রশাসনের চাইতে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির ভূমিকা বেশি থাকা উচিত বলে আমরা মনে করি। এ সমিতির লোকজন অসাধু ব্যবসায়ীদের রক্ষা করতে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করছে বলে মনে হচ্ছে। এ বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান তুলনামূলকভাবে কম। এটার কারণ কী? চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে অভিযানের ব্যাপারেও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর লোকদেখানো কাজ করে। সেটার রহস্য কী?

বিপণীবাগ বাজারের মাংস বিক্রেতাদের মধ্যে কতোটা অসৎ লোক আছে, সেটা একাধিকবার চোরাই গরু কিনে ধরা পড়ার ঘটনাতেই প্রমাণিত। মাংস বিক্রেতারা যে ক্রেতাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে সেটার প্রমাণ তো বৃহস্পতিবার তিন মাংস বিক্রেতার পুলিশের হাতে আটক হবার ঘটনাতেই রয়েছে। এরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কর্মরত এমন দুজন ক্রেতার সাথে খারাপ আচরণ ও গায়ে হাত দিয়ে জাত কসাইয়ের মতোই কাজ করেছে এবং বাজারের ব্যবসায়ী নেতাদের জোর প্রচেষ্টা ও তদবির সত্ত্বেও মামলা খেয়েছে আর জেলে ঢুকেছে। এজন্যে ওদের শাস্তি কতোটুকু হয়, সেটা আইন-আদালতই ভালো জানে। তবে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের সাথে অঘটন ঘটিয়ে মাংস বিক্রেতারা যতোটুকু শায়েস্তা হলো, নিরীহ সাধারণ ক্রেতার সাথে অনুরূপ কাণ্ড করে কতোটুকু শায়েস্তা হয়।

আমরা চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষকে তাদের ইজারার আওতাভুক্ত বিপণীবাগ বাজারসহ অন্য সকল বাজারের ব্যবসায়ীদের সংগঠনকে সক্রিয় করার ব্যাপারে যথার্থ ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় ক্রেতা হয়রানি, ক্রেতা ঠকানো, প্রতারণা আদৌ বন্ধ হবে না বলে মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়