বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৪

স্বপ্নিল সফর

সুনির্মল দেউরী
স্বপ্নিল সফর

(গতকালকের পর)

আজ মহা নবমী পূজার আয়োজন চলছে। সকাল থেকেই স্বপ্নিল একটু অন্যমনস্ক। গত রাতের খাবারটা দারুণ হলেও দুপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেনো না হয় এই দুশ্চিন্তা তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তারপরও মনে সাহস নিয়ে শেষবারের মতো মনোহরপুর দেখতে চায়। তাইতো প্রদীপকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আসলে মনোহরপুরে থাকাটাকে সে একটা অ্যাডভেনচার হিসেবে নিয়েছে, যা হবার হবে।

বিধি সহায়, কোনো ধরনের অঘটন ছাড়াই স্বপ্নিল এ দিন মনোহরপুর বাজার, ট্রলার ঘাট, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ কয়েকটি বাড়ি ঘুরে আসলো। প্রদীপদের বাড়িতে আতিথেয়তা তাকে মুগ্ধ করেছে। সেখান থেকে সঙ্গীসহ পুকুর ঘাটে এলো স্নানের উদ্দেশ্যে। দেখলো অনেকেই পুকুরে স্নান করছে। আজ কীভাবে স্নান সম্পন্ন করা যায় তা ভাবতে লাগলো স্বপ্নিল-- ব্রাহ্মণের স্নান বলে কথা!

সে ধীরে ধীরে শান বাঁধানো ঘাটের কয়েক ধাপ নামলো। যখন নাভী পর্যন্ত ভিজলো তখন তার গলায় ঝোলানো পৈতাটি নিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে একটি পেঁচ দিয়ে পূর্বমুখী হয়ে হাত জোড় করে ধ্যানে নিমগ্ন হয়েছে এরূপ ভাব করে কিছুক্ষণ পর শ্রী শ্রী মা গঙ্গা দেবীকে প্রণাম করে জলে ডুব দিলো। স্নান শেষে ঘরে এসে খাবার খেয়ে মন্দিরের দিকে গেলো।

সন্ধ্যায় অন্য ভক্তবৃন্দের সাথে স্বপ্নিলও মা দুর্গার সম্মুখে অঞ্জলি প্রদান করলো। সমবয়সীদের সাথে নাচ-গানে যোগ দিয়ে তার আরো একটি দক্ষতার প্রমাণ রাখলো।

তবে যে সঙ্গীত সে পরিবেশন করলো, সেটা কার উদ্দেশ্যে গাওয়া হয়েছে তা অন্য কেউ না বুঝতে পারলেও প্রদীপ ঠিকই ধরতে পেরেছে। কারণ আজ দুপুরে প্রদীপের সাথে স্বপ্নিল যে ঘুরে এসেছে ছন্দাদের বাড়ি। যা এইচএসসি পরীক্ষার্থী চঞ্চলা ছন্দার চোখ এড়াতে পারে নি। আর স্বপ্নিলের গান গাওয়ার সময় মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলো তার মন হরণকারিণী সেই ঝিঙ্গে তোলা অপরিচিতা ছন্দা স্বয়ং।

গানের ভাষায়, চোখের ইশারায় মনের কথা যতোটুকু প্রকাশিলো, আর তাতে যে সাড়া মিললো তা থেকে এ কথা নিশ্চিত বলা যায় যে, ‘বাজিমাত’।

একটু দেরি হয়ে গেলেও রোমান্টিক আবহ অতিক্রম করে প্রসন্ন চিত্তে রাতের খাবারের বন্দোবস্তের জন্যে নৌকা নিয়ে রওনা দিলো স্বপ্নিল। কিন্তু অনেকক্ষণ নৌকা চালানোর পরেও তার নির্ধারিত চিহ্নের দেখা মিললো না। ছোট খালের মধ্য দিয়ে দুই পাশের সারি সারি কান্দি ফেলে গেলেও সেই লাল শাকওয়ালা নির্দিষ্ট কান্দিটি স্বপ্নিলের চোখে ধরা পড়লো না। এবার পেছন দিকে নৌকা চালায় সে। মন্দিরের কাছাকাছি চলে আসলেও সে কান্দির কাছে আসতে ব্যর্থ। অসহায় স্বপ্নিল আবার সামনের দিকে নৌকা চালায়। ‘তাকে কি ভূতে ধরলো? আজ আদৌ ‘রায়’ বাড়িতে পৌঁছাতে পারবে কি?’ ইত্যাদি অশুভ চিন্তায় নিমগ্ন ক্লান্ত, দিকভ্রান্ত স্বপ্নিলের চোখে হঠাৎ ধরা পড়ে একটি নৌকা তার দিকে আসছে। দেবদূতের মতো আসা মধ্যবয়সী মাঝিকে তার অসহায়ত্বের বর্ণনা দিতেই তিনি বললেন, “রায় বাড়ি তো অনেক পেছনে ফেলে এসেছো বাবা, চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।”

পথ প্রদর্শক মাঝির পেছনে পেছনে ‘রায়’ বাড়ির কাছাকাছি এসে স্বপ্নিল দেখলো, সেখানে তার চিহ্নিত যে কান্দিটি থাকার কথা ছিলো সেখানে সেটি নেই। এর কারণ কী হতে পারে তা জিজ্ঞাসা করলে মাঝি বললো,“এখানে আসলে কান্দির মতো দেখতে একটি ঢিবি ছিলো, যা কচুরিপানা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো। বিক্রি করে দেওয়ায় ক্রেতা সেটি নিয়ে গেছে।” এই প্রথম স্বপ্নিল নিজের অজ্ঞতার জন্যে লজ্জা অনুভব করলো।

দিনটি এভাবে অম্ল-মধুর স্বাদে মোটামুটি নির্বিঘ্নে কাটলেও স্বপ্নিলের মনের কোণে দুশ্চিন্তার মেঘ জমা হতে থাকে বিজয়া দশমীর অপেক্ষায়। কারণ মাঝে মাঝে এমন অবস্থার উদ্ভব হচ্ছিলো যে, নরেন ও স্বপ্নিলে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিলো। তার এতোটুকু অসতর্কতায় নরেনের খোলস ভেদ করে স্বরূপে বেরিয়ে পড়তে পারে স্বপ্নিল। তাই দশমীটা ভালোয় ভালোয় কাটলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে সে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়