মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩২

স্বপ্নিল সফর

সুনির্মল দেউরী
স্বপ্নিল সফর

(গতকালকের পর) যাত্রাপথে ট্রলারে বসে পিতৃতুল্য ভট্টাচার্য মহাশয়ের কাছ থেকে স্বপ্নিল জেনে নেয় তাকে কী ধরনের সহায়তা করতে হবে বা করতে হতে পারে। এরূপ শলাপরামর্শের এক পর্যায়ে ভট্টাচার্য মহাশয় স্বপ্নিলের হাতে তুলে দেন একটি পৈতা।

মনোহরপুরে তাদের সাদরে গ্রহণ করেন পূজা উদযাপন কমিটি। একটি বাড়িতে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, সে বাড়িটি ‘রায়’ বাড়ি নামে পরিচিত। ভট্টাচার্য মহাশয় স্বপ্নিলকে তাঁর সহযোগী নরেন বলে পরিচয় করিয়ে দেন। আপ্যায়ন পর্ব শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর একটি নৌকায় করে তাদের শ্রী শ্রী মা দুর্গার মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। ভট্টাচার্য মহাশয় শুভ ষষ্ঠী পূজার আয়োজন শুরু করলেন এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী স্বপ্নিল তার দায়িত্ব পালন করলো।

এ দিনেই নরেনরূপী এক্সট্রোভার্ট স্বপ্নিল অনেকের সাথে পরিচিত হলো, কয়েক জন সমবয়সী বালকের সাথে ভাবও করে ফেললো। সময় ও বাস্তবতার সাথে তাল মেলাতে স্বপ্নিল যথেষ্ট পারদর্শী। সে জানে, বন্ধুর সাথে ঘুরতে যেতে পারলে অনেক মজা হতো, কিন্তু তা না হওয়ায় বর্তমানকে তো আর নিরানন্দে ভরিয়ে রাখা যায় না। আবার আনন্দ উপভোগ তো একা একাও সম্ভব নয়। এজন্যে তার সঙ্গী নির্বাচন অপরিহার্য। তার সাথে আলাপ করা যুবকদের মধ্যে প্রদীপকে তার বেশ ভাল লাগলো। শ্রীমান প্রদীপ সরকার এ গ্রামেরই ছেলে, তবে পড়ালেখা করছে ঢাকার তিতুমীর কলেজে, অনার্স প্রথম বর্ষে, কথাবার্তায়ও বেশ চালু।

এ দিনই বিকেলে প্রদীপের সাথে গ্রাম পরিদর্শনে বের হলো স্বপ্নিল। সে দেখতে পেলো গ্রামের এক একটি বাড়িতে কুড়ি থেকে পঁচিশটি ঘর রয়েছে, লোকসংখ্যাও প্রায় দেড়শ’-দু শ’ করে। বাড়ি গুলো বেশ উঁচু স্থানে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি শত শত মিটার দূরে অবস্থিত। আর কাছাকাছি বাড়িগুলোর সংযোগ রক্ষা করছে বাঁশ নির্মিত সাঁকো। প্রত্যেক পরিবারে রয়েছে দু-তিনটি করে ছোট-বড় নৌকা। মূলত নৌকাই হচ্ছে গ্রমবাসীর যাতায়াতের প্রধান বাহন। তাছাড়া তাদের উৎপাদিত ফসল আহরণ ও পরিবহণেরও প্রধান বাহন এই জলযান। বাড়ির চারপাশে রয়েছে উন্মুক্ত বিস্তীর্ণ নিচু ভূমি। স্বপ্নিলের ধারণা, উপর থেকে দেখলে এ গ্রামকে মনে হবে বিশাল সমুদ্রের মাঝে অসংখ্য বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমষ্টি। এরূপ কয়েকটি বাড়ি ঘুরে সন্ধ্যের আগেই মন্দির প্রাঙ্গণে চলে আসে স্বপ্নিল। এরপর ভট্টাচার্য মহাশয়ের নির্দেশে নৌকায় চেপে রায় বাড়িতে ফেরে।

বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবারে দুপুর পার করলেও রাতে রান্না করার জন্যে স্বপ্নিলকে প্রস্তুতি নিতে হলো। তাদের জন্যে নির্ধারিত থালা-বাসন ধুয়ে, মাটি খুঁড়ে ছোট্ট সুন্দর একটি চুলা তৈরি করে, তরকারী কুটে ও তেল নুন লাকড়ি নিয়ে স্বপ্নিল রান্নার আয়োজন করলো। ষষ্ঠী পূজার কার্য শেষে ফিরে এসে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও আজ রাতে ভট্টাচার্য মহাশয়ই রান্নার কাজটি সারলেন। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়