শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৫, ১৮:৪১

সন্ধ্যায় জেল থেকে মুক্তি, রাতেই ডাকাতির পথে: কুমিল্লায় সংঘবদ্ধ অপরাধের নতুন চিত্র

দিনের আলোয় জামিন, রাতের আঁধারে অস্ত্র হাতে ডাকাতি—পুলিশি অভিযানে ফাঁস হলোজামিনপ্রাপ্ত অপরাধীদের ভয়ানক পরিকল্পনা!

মো. জাকির হোসেন
সন্ধ্যায় জেল থেকে মুক্তি, রাতেই ডাকাতির পথে: কুমিল্লায় সংঘবদ্ধ অপরাধের নতুন চিত্র
ছবি : সংগৃহীত

“কারাগার কি শুধুই ‘অস্থায়ী বিরতি’? জামিন মানেই কি পুনরায় অপরাধের অনুমতি?” এই প্রশ্ন জেগেছে কুমিল্লা পুলিশের সাম্প্রতিক এক অভিযানে। মঙ্গলবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া তিন যুবক রাতেই ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হলে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ধরা পড়ে যায়।

পুলিশ জানায়, রাত সাড়ে ১০টায় কুমিল্লার টমছমব্রিজ এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক খাজু মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল সন্দেহভাজন অটোরিকশা থামাতে সংকেত দেয়। যাত্রীবেশে থাকা খাইরুল হাসান পুলিশকে লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করলে এসআই খাজু মিয়া জীবন ঝুঁকি নিয়ে তাকে কৌশলে আটক করেন। এরপর রিয়াজ ও সোহাগকেও স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করা হয়।

তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। পালিয়ে গেছে আরও দুইজন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আগেও একাধিক মামলা রয়েছে—খাইরুলের বিরুদ্ধে ৪০টি ও রিয়াজের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা। পুলিশ জানিয়েছে, তারা সন্ধ্যায় কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে রাতেই ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল।

গ্রেপ্তার তিনজন কারা?

খাইরুল হাসান (৩০): শ্রীবল্লভপুর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ। ৪০টির বেশি মামলার আসামি। রিয়াজ হোসেন (২৮): বালুতোপা, কুমিল্লা সদর। ১৬টি মামলা। সোহাগ মোল্লা (২৬): নয়া কান্দি, মতলব, চাঁদপুর। আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য।

কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এত দ্রুত আবার সক্রিয় হল কীভাবে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও সাক্ষীর অভাবে জামিন সহজ হয়ে উঠেছে। ফলে অনেক দুর্ধর্ষ অপরাধী জামিনে বের হয়েই পুনরায় সংঘবদ্ধ অপরাধে যুক্ত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক বলেন, “জামিনের অপব্যবহার বেড়েছে। নজরদারির ঘাটতির সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।”

অস্ত্র এল কোথা থেকে?

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র পাচার হয়ে আসছে। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণপাড়া ও চাঁদপুরের কিছু সীমান্ত অঞ্চল হয়ে এসব অস্ত্র দেশে ঢুকে পড়ছে। খাইরুল ও তার সহযোগীরা এ ধরনের একটি চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে ধারণা।

সামাজিক ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া

স্থানীয় সূত্র জানায়, খাইরুলের চাচা একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ঘনিষ্ঠ। রিয়াজের ভাই আবার একটি সরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। এসব সম্পর্কই বারবার মামলায় প্রভাব ফেলার চেষ্টা করে থাকে।

জেল কি সংশোধনের কেন্দ্র, না অপরাধের ঘাঁটি?

অনেকে বলছেন, জেল এখন অনেকের জন্য ‘সেফ হ্যাভেন’। বড় বড় অপরাধীরা ভেতর থেকেই সংগঠনের নির্দেশনা দেয়। গোয়েন্দাদের মতে, জামিনে বের হওয়া মানেই ‘পরবর্তী অ্যাকশন’-এর শুরু।

পুলিশ বলছে কী?

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, “আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। মঙ্গলবারের ঘটনাও তারই অংশ।” তিনি আরও বলেন, “অপরাধীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।”

সমাধান কী?

➤ উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জামিনপ্রাপ্তদের জন্য বিশেষ নজরদারি

➤ ইলেকট্রনিক ট্র্যাকিং (জিপিএস)

➤ নিয়মিত থানায় রিপোর্টিং

➤ কারাগারে কাউন্সেলিং ও সুশৃঙ্খল পুনর্বাসন প্রক্রিয়া

জেল থেকে জামিনে বের হয়ে আবারও অস্ত্র হাতে ডাকাতির উদ্দেশ্যে বের হওয়া আমাদের বিচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, শুধু মামলা দিলেই চলবে না—প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, আইনি সংস্কার ও প্রশাসনিক আন্তরিকতা।

তথ্যসূত্র:

  • কুমিল্লা জেলা পুলিশ প্রেস ব্রিফিং, ৪ জুন ২০২৫
  • কালের কণ্ঠ ও কুমিল্লার কাগজ
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ
  • স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার

প্রতিবেদন: মো. জাকির হোসেন, বিশেষ সংবাদদাতা

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়