শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ০৯:১৩

ছেঙ্গারচরে অবিলম্বে পানির অপচয় রোধ করুন

অনলাইন ডেস্ক
ছেঙ্গারচরে অবিলম্বে পানির অপচয় রোধ করুন

মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভায় ভূগর্ভস্থ পানির সরবরাহ লাইনের পাইপ ফেটে গিয়ে বিপুল পরিমাণ পানি অপচয় হচ্ছে। বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এতে একদিকে যেমন পানি সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে, অন্যদিকে কৃষিজমি ও সড়কপথও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঠাকুরচর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বিল্লাল মেলাকারের জমির পার্শ্বের রাস্তা দিয়ে যাওয়া পানি সরবরাহ লাইনের মূল পাইপ ফেটে পানি টানাভাবে বের হয়ে জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিদিন এভাবে পানি বের হতে থাকলে তাদের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। অন্যদিকে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ানজীকান্দি গ্রামের সাবেক কাউন্সিলর আ. ওয়াদুদের বাড়ির সামনে সড়কের নিচ দিয়ে যাওয়া পাইপ ফেটে গিয়ে পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পথচারী ও যানবাহনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই অবস্থা প্রায় দু মাস ধরে চলছে। সফিকুল ইসলাম, সুমন আহম্মেদ, ইমরান হোসেনসহ একাধিক বাসিন্দা জানান, ‘প্রায় দুই মাস ধরে পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে। বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। পানির চাপে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সড়কে কাদা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।’ তারা আরো বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে এমনিতেই পানি সংকট দেখা দেয়। এভাবে পাইপ ফেটে প্রতিনিয়ত পানি অপচয় হলে পুরো পৌরসভায় পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’ স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও সমাজকর্মীরা জানান, ছেংগারচর পৌরসভায় পুরোনো ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে প্রায়ই পানি সরবরাহ লাইনে ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু প্রতিবারই সমাধান দেরি হওয়ায় সমস্যার গভীরতা বাড়ে। তারা পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু মেরামত করলেই চলবে না, বরং পানি সরবরাহ ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত ও কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত হেল্পলাইন চালু করে জনগণের অভিযোগ দ্রুত গ্রহণ ও সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।

পৌর এলাকার বাসিন্দারা মনে করেন, যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে পৌরসভার জনগণকে মারাত্মক পানি সংকটের মুখে পড়তে হবে। তাই তারা দ্রুত কার্যকর ও টেকসই সমাধানের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ছেংগারচর পৌরসভায় ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা অপারেটর মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ‘মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশের জটিলতার কারণে পাইপ মেরামতের কাজ বিলম্বিত হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে। আশা করছি, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।’ এদিকে পৌর প্রশাসক মাহমুদা কুলসুম বলেন, ‘নতুন করে কয়েকটি স্থানে পাইপ ফেটে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব পাইপ মেরামতের কাজ সম্পন্ন করে স্বাভাবিক পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।’

উপরোল্লিখিত বিবরণীটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদের পূর্ণরূপ। এ সংবাদটি পাঠে বিস্মিত হতে হয় এই কারণে যে, ছেঙ্গারচর পৌরসভার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কতোটা নাজুক। দুমাসেও পানির ফেটে যাওয়া পাইপ মেরামতের সক্ষমতা এই পৌর কর্তৃপক্ষ প্রদর্শন করতে পারে নি। পাইপ ফেটে যাওয়ার শুরুতে মেরামতে যে অর্থ ব্যয় হতো, নিশ্চয়ই দুমাস পর মেরামতে তারচে’ বহুগুণ অর্থ ব্যয় হবে। সময় মতো এক ফোঁড়ে যে কাজ হয়, অসময়ে সে কাজ করতে দশ ফোঁড় লাগে--এই সত্যটি অনেকে বুঝলেও না বোঝার ভান করে। আবার বুঝলেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কারণ অল্পতে কোনো কিছু সারতে গেলে অল্প লাভ হয়, দেরি করে সারতে গেলে বেশি লাভ হয়। এই লাভের সাথে এক বা একাধিক ব্যক্তির লাভালাভ যতোটা মুখ্য থাকে, দুর্ভোগের শিকার সাধারণ মানুষের কথা সেখানে গৌণ হয়ে যায়।

আমরা মনে করি, ছেঙ্গারচর পৌরসভার পানি অপচয় রোধে পৌর প্রশাসক যেহেতু বলেছেন, সেহেতু অবিলম্বে ব্যবস্থা গৃহীত হবে। কিন্তু পৌরসভাটির পানি সরবরাহ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদাসীনতা, পানির পাইপ মেরামতে গড়িমসিকে কি কেবলই ছাড় দেয়া যায়? বিলম্ব করার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য কী ছিলো ও আছে, সেটা তদন্ত করার দরকার আছে বৈকি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়