প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৫
রায়পুরে আ'লীগ-বিএনপি মিলেমিশে নদী-খাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, ভাঙ্গছে বসতবাড়ি

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা, ডাকাতিয়া নদী, খাল, পুকুর ও ফসলি জমি থেকে সড়ক কেটে গর্ত খুঁড়ে আইল্যান্ড ভেঙ্গে অবৈধ ড্রেজার মেশিন পাইপ ফিটিং করে নীরবে বালু তোলা হচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। আর এই বালু উত্তোলনে বিভিন্ন দলের কর্মীরা মিলেমিশে ব্যবসা করছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।
|আরো খবর
এতে করে একদিকে আতংকে বসবাস করছেন মানুষ অপরদিকে ভাঙ্গছে বসতভিটা ও জমি।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর ২০২৫) বিকেলে গোপন সংবাদ পেয়ে ইউএনও মেহেদী হাসান কাউছারের নেতৃত্বে, এসিল্যান্ড নিগার সুলতানা পুলিশ নিয়ে মেঘনা নদী থেকে বিশাল ড্রেজার জব্দ করেছেন। এরসময় শ্রমিকরা পালিয়ে যায়।অনুসন্ধানে জানা যায়, রায়পুরের উত্তর চর আবাবিল ইউনিয়নের বিএনপি নেতা আরিফুল ইসলাম মিস্টার, কামাল, উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে বিএনপির কর্মী সোহাগ লস্কর, মোহাম্মদ আলী খাঁ, আওয়ামী লীগ কর্মী মনির, জামাল, মিজান বেপারি , বিল্লাল কবিরাজ, আল আমীন কবিরাজ, সোহেল সর্দার, নাজিম, শিমুল, দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের আদম আলী, গফুর মোল্লা, রতন গাজী, সাধু গাজী, জাকির চৌকিদার, হাশিম, মোতালেব ছৈয়াল, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আনোয়ার হাওলাদার, মফিজ সরকার, সাইফুল ইসলাম, পারভেজ হাওলাদার, ফারুক, পলাশ হাওলাদার, রাসেল খলিফা, জসিম গাজী, সুমন বেপারী, বিএম বাবুল, দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাঈম, খোকন শেখ, ১০নং রায়পুর ইউনিয়নের ফজু মোল্লার স্টেশন থেকে উত্তর গাইয়ার মনদার বাড়ি পুকুর থেকে মো. আমীর হোসেন অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন।।
চরবংশীর পুরাণ বেড়িবাঁধ এলাকার কৃষক আবদুল আলী, জয়নাল ও সবুর মাঝি বলেন, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এখানকার আওয়ামীলীগ বিএনপির প্রায় শতাধিক নেতা- কর্মী মিলেমিশে মেঘনা নদী, ডাকাতিয়া নদী, নদীর শাখা খাল ও বিভিন্ন পুকুর থেকে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে মহাসড়ক কেটে, সড়কের উপর গর্ত খুঁড়ে সড়কের আইল্যান্ড ভেঙ্গে ড্রেজার মেশিন পাইপ ফিটিং করে নীরবে বালু তুলছে। ৩-৪জন সাংবাদিক এসে টাকা নিয়ে চলে যায়।
নৌকার মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নিচে পাইপ ফিটিং করে অভিনব পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করা হয়, প্রশাসনের কেউ অভিযানে গেলে ওপর থেকে নৌকা অন্যত্র সয়ে নেওয়া হয়। এই সংবাদ শুনেই ঘটনাস্থলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত হওয়ার আগেই ড্রেজার মেশিন হাওয়া হয়ে যায়। ওই কর্মকর্তারা চলে আসার পর পুনরায় ড্রেজার মেশিন ফিটিং করে বালু উত্তোলন করে এভাবে অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রভাবশালী মহল বালু তুলে বিক্রি করে রমরমা বাণিজ্য করছেন।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ‘বোমা’ (ড্রেজার) মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে তা বিক্রি করছে, ছাত্রদল, যুবদল, আওয়ামী লীগ, বিএনপির ব্যানারে থাকা একাধিক নেতারা। এতে একদিকে যেমন সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি ঝুঁকির মুখে পড়েছে এলাকার রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, গাছপালা ও স্থানীয় বিভিন্ন স্থাপনা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের পর উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে আলতাফ মাস্টার ঘাট, চাঁন্দার খাল, নতুন ব্রিজ, বেড়ির মাথা, চমকা বাজার, কড়াইতলা, বটতলা, মেঘনা বাজার, গরম বাজার, স্টিল ব্রিজ, সোনাপুর ইউনিয়ন বিভিন্ন ওয়ার্ড, ফজুমোল্লার স্টেশন, সাজু মোল্লার ঘাট, পানির ঘাট, রাহুল ঘাট সহ ১০-১৫টি স্থান থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাঈম হোসেন ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সত্যতায় স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন, "আমি নিজের বাড়ির পুকুর থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। কিসের অনুমতি নিতে হবে?" ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, এই ব্যবসা তো অনেকদিন ধরে করছি। মাঝে মাঝে কয়েকজন সাংবাদিক এসে কিছু সম্মানি নিয়ে যান। আপনি আসিয়েন-....দিবো।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদি হাসান কাউছার বলেন, " নদী, খাল ও পুকুর বা ফসলি জমি থেকে অবৈধ ড্রেজারে বালু উত্তোলন করা যাবে না। গোপন সংবাদে মঙ্গলবার বিকেলে সাজু মোল্লারঘাট মেঘনা নদী থেকে অবৈধ ড্রেজারসহ বালু উত্তোলনের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে। এ সময় কয়েকজন পালিয়ে গেছে।"







