প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:৪৭
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২৫ উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা
জনগণ ওয়েব পোর্টাল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য যেনো সহজেই পেতে পারে সেজন্যে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবো
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

জেলা প্রশাসন ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-টিআইবি চাঁদপুরের আয়োজনে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ৯টায় ‘আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস’ উপলক্ষে সার্কিট হাউজ থেকে র্যালি শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। র্যালি পরবর্তী আলোচনা সভা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডিজিটাল যুগে পরিবেশ সংক্রান্ত তথ্যে অভিগম্যতা নিশ্চিতকরণ’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এরশাদ উদ্দিন।
|আরো খবর
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, জনগণ তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য ওয়েব পোর্টাল থেকে সহজেই যেনো পেতে পারে সেজন্যে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবো। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্যে তথ্যের উন্মুক্ততা প্রয়োজন। বিবেকের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতার জন্যেই সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, সরকারি অফিসগুলোতে বেশি তথ্য চাইতে আসে সাংবাদিকবৃন্দ। তবে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু গোপনীয়তা রয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহের অনেক মাধ্যম আছে। তথ্য অধিকার আইনেই কোন্ তথ্য দেওয়া যাবে আর কোনটা দেওয়া যাবে না তা নির্ধারণ করা আছে। অনেক সময় আমরা তথ্য প্রদান করতেও ভীত থাকি। তিনি আরও বলেন, কোন্ তথ্যটা চাওয়া আমার অধিকার, আর কোনটা চাওয়া আমার অধিকার নয় সেই বিষয় সম্পর্কেও আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। আবার অনেকেই জানেন না তথ্য পেতে কীভাবে আবেদন করতে হয়। তিনি বলেন, সত্য উন্মোচনের স্বার্থে তথ্য চাইলে আমরা তা দিতে পারবো। আবার কিছু মানুষ এমন কিছু তথ্য চায় যা দিতে আমরা বিব্রতবোধ করি। সাধারণ জনগণকেও তথ্য প্রাপ্তির অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। চাঁদপুর জেলা ও ৮টি উপজেলার ওয়েব পোর্টালের উপর সনাক-টিআইবি যে স্টাডি করেছে তা খুবই সুন্দর হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, অনেক প্রতিষ্ঠানের ওয়েব পোর্টাল হালনাগাদ নেই। তাই মানুষের তথ্য পেতে খুবই সমস্যা হয়। তবে আমি আশা করছি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েব পোর্টালের তথ্যগুলো হালনাগাদ করবেন। এ ব্যাপারে আমি একটি নির্দেশনাও দিবো। তিনি আগামীতে এ সকল কর্মসূচিতে সকল সরকারি অফিসারদের রাখার আহ্বান জানান। তিনি অনুষ্ঠানে আসার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান রনি বলেন, যে সকল তথ্য দিতে গেলে সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে সে সকল তথ্য প্রদান করতে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্যে আমাদেরকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতারও প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন। আমি লক্ষ্য করেছি, আমাদের দপ্তরের তথ্যও হালনাগাদ নেই। সেক্ষেত্রে তথ্য হালনাগাদ করার জন্যে আমি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, সনাক-টিআইবির এই ওয়েব পোর্টাল স্টাডিটি অনেক সুন্দর হয়েছে। তিনি এতো সুন্দর একটি আয়োজনের জন্যে জেলা প্রশাসন ও সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান।
সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া ফারজানা হকের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএমএন জামিউল হিকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা তথ্য অফিসার তপন বেপারী। উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা, সনাকের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেন, কালের কণ্ঠ ও সময় টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহাম্মদ। চাঁদপুর জেলা ও ৮টি উপজেলার ওয়েব পোর্টাল স্টাডির তথ্য উপস্থাপন করেন টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মাসুদ রানা।
সার্বজনীন তথ্য অধিকার, প্রবেশগম্যতা ও জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে টিআইবির সুপারিশসমূহ তুলে ধরেন সনাক সভাপতি মো. আলমগীর পাটওয়ারী। সুপারিশগুলো হলো : তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুসারে অনতিবিলম্বে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও কোনো প্রকার প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের প্রধান তথ্য কমিশনারসহ অন্যান্য তথ্য কমিশনারদের নিয়োগ দিয়ে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটানো এবং সার্বিকভাবে তথ্য কমিশনকে সংস্থাটিকে সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে হবে, সরকারের নিকট ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে তথ্য অধিকার আইনটির প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধারার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে আইনটিকে যুগোপযোগী করতে হবে, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে তথ্য অধিকার আইনের আওতাভুক্ত করতে হবে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের আয়-ব্যয়ের বিভিন্ন খাত ওয়ারি খরচ জনগণের জন্যে উন্মুক্ত করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সেসব তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে যথাসময়ে প্রকাশ করবে, বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার নিশ্চিতের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে সকল আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট জনগণের ওপর যে কোনো ধরনের ডিজিটাল নজরদারি কাঠামো বিলুপ্ত করতে হবে, তথ্যপ্রকাশ ও তথ্যে অভিগম্যতার সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার সহজলভ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩ সহ তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর সাথে সাংঘর্ষিক বিদ্যমান আইনি বিধান সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল করতে হবে। নতুন কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থি বা আইনটির কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো ধারা যাতে সংযোজিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারিসহ সকল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে যথাযথ ধারণা ও তথ্য প্রদানে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অর্জনে বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং তথ্য প্রদানে আগ্রহ সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে, তথ্য অধিকার আইনের অধিকতর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণমূলক কার্যক্রমে নাগরিক সমাজ, জনগণ ও গণমাধ্যমের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ এবং তথ্য প্রাপ্তির জন্যে আবেদনকারীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের সকল নাগরিককে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহারে সচেতনতা ও সক্ষমতা সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে, সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইনানুগ স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে তথ্য কমিশন এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সকল সংস্থার নিজস্ব ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তথ্যপ্রকাশ ও প্রচারে প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা ও সক্ষমতা পর্যবেক্ষণের জন্যে তথ্য কমিশনের ক্ষমতা ও তদারকি বাড়ানো সহ তদারকি কার্যক্রমে নাগরিক সমাজ ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, তথ্য অধিকার নিশ্চিতে গণমাধ্যমকে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ, সুশীল সমাজ, তথ্য কমিশন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকর সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে, ‘জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন, ২০১১’ সম্পর্কে সচেতনতা এবং এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সকল সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে আরো তথ্যবহুল যেমন-নিরীক্ষা প্রতিবেদন, পূর্ণাঙ্গ বাজেট, প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তথ্য, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের জন্যে জরিমানা ও আদায়ের পরিমাণের ওপর পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করতে হবে ও নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে। এ সকল তথ্য জনগণের জন্যে উন্মুক্ত করতে হবে এবং ইংরেজি ও বাংলা দু ভাষাতেই সেটা সহজলভ্য করতে হবে এবং সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্যে পর্যায়ক্রমে ব্রেইল পদ্ধতিতে অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ, সনাক-চাঁদপুরের সদস্যবৃন্দ ও টিআইবি কর্মীবৃন্দ এবং এসিজি ও ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।