সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৫

সাক্ষাৎকার : ডা. সফওয়াত সাইফ উল্লাহ (নাফিস)

চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল মা-বাবার

আলআমিন হোসাইন
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল মা-বাবার

২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের মেধাবী শিক্ষার্থী ডা. সফওয়াত সাইফ উল্লাহ (নাফিস)। বর্তমানে তিনি ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক হিসেবে।

নোয়াখালীর মাইজদীতে কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। অধ্যক্ষ পিতা ও কলেজশিক্ষিকা মায়ের সন্তান নাফিসের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটি ছিল মা-বাবার। সেই স্বপ্নপূরণে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হয়ে চিকিৎসক জীবনের শুরু, অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

ডা. সফওয়াত সাইফ উল্লাহ (নাফিস) : আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে নোয়াখালীর মাইজদী শহরে। আমার বাবা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন কবিরহাট সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এবং মা মোসাম্মৎ শামীম আরা বেগম এমএ হাসেম কলেজের সহকারী অধ্যাপিকা। বাবা-মা চাকরিসূত্রে সব সময় নোয়াখালীতেই ছিলেন। ফলে এসএসসির আগে কখনো নোয়াখালীর বাইরে থাকা হয়নি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

নাফিস : শিক্ষাজীবন শুরু মাইজদীর পুলিশ কেজি স্কুলে, সেখানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। এরপর নোয়াখালী জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হই ঢাকার নটর ডেম কলেজে। এইচএসসি শেষে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করি। বর্তমানে এখানেই ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা কীভাবে শুরু হয়েছিল? পরিবারে কেউ এই পেশায় ছিলেন কি?

নাফিস : চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটা আমার নিজের ছিল না। এটা ছিল আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের সেই স্বপ্নপূরণই আমার জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারে চিকিৎসক বলতে আছেন আমার মামা, ডা. আনিসুর রহমান সুফি। তিনি বর্তমানে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

নাফিস : প্রথম ব্যাচ হিসেবে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। এখনো মনে আছে, প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে হাতে খাতা রেখে ক্লাস করতাম। বর্তমানে অনেক কিছু উন্নত হয়েছে, তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরও দরকার। দৃশ্যমান উন্নয়ন এই কলেজের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে ইন্টার্নশিপের প্রথম দিনটা কেমন ছিল?

নাফিস : ইন্টার্নশিপের প্রথম দিনটা ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। আমার ইন্টার্নশিপ শুরু হয়েছিল ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল স্যারের অধীনে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে। আমরা পুরো ব্যাচ তাঁর অভাব আজও গভীরভাবে অনুভব করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে আপনার মতামত কী?

নাফিস : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। প্রায়ই এমন রোগী পাই, যারা হাতুড়ে ডিএমএফ বা এলএমএফদের প্রতারণার শিকার হয়ে কবিরাজি চিকিৎসা গ্রহণ করে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। অনেক ওষুধ এখানকার ফার্মেসিতে পাওয়া যায় না, ফলে কিছু রোগীকে অপ্রয়োজনে ঢাকায় রেফার করতে হয়। এসব সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : একজন চিকিৎসক হিসেবে রোগীর কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন?

নাফিস : একজন চিকিৎসক হিসেবে রোগীর কাছ থেকে আমি চাই আন্তরিকতা ও সম্মান। রাজনৈতিক পরিচয় বা প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখানো যেন না হয়। চিকিৎসার সময় আমরা কখনোই এসব বিবেচনা করি না, দেখি রোগীর অবস্থা ও চিকিৎসা-প্রটোকল অনুযায়ী কী করা সম্ভব। অনেক সময় কিছু রোগী নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে চান, তখন আমরা হয়তো মুখে কিছু বলি না, কিন্তু মন থেকে কষ্ট পাই। জুলাই অভ্যুত্থানের পরও এমন বৈষম্যমূলক আচরণ দেখা গেছে, যা খুবই দুঃখজনক।

চাঁদপুর কণ্ঠ : নিজেকে ১০ বছর পর কোথায় দেখতে চান?

নাফিস : ১০ বছর পর আমি এবং আমার স্ত্রী ডা. ওয়াসিলা জাহাঙ্গীর প্রীতিকে আমাদের নিজ শহর মাইজদীতে ভালো একটি অবস্থানে দেখতে চাই। এমন এক জায়গায়, যেখানে আমার বাবা-মা তাঁদের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেখতে পারবেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়