সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০

সমাজের বাতিঘর শিক্ষক

সুধীর বরণ মাঝি
সমাজের বাতিঘর শিক্ষক

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে শিক্ষকরা স্নায়ুতন্ত্র। যার ভেতর দিয়ে সবসময় প্রবাহিত হয় জ্ঞানের নতুন ধারা, নতুন সভ্যতা। সভ্যতার সুচারু কারিগর হলেন শিক্ষক। তিনি ছাত্রদের মাধ্যমে সমাজকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্বপ্নের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। অন্ধকার দূর করে আলোর পথ দেখান। শিক্ষার্থীর ভেতরকে জাগিয়ে তোলেন।

শিক্ষক সেই যিনি সমাজে সম্প্রীতির বন্ধন ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সুসম্পর্ক এবং পরিবেশ সৃষ্টিতে বা তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। যিনি প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করেন সত্য এবং সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে। যাঁর কাছ থেকে ছাত্ররা সত্যকে সত্য বলতে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে শিখে, বলার সাহস সঞ্চয় করে। একজন শিক্ষকই সমাজে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠা করতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যিনি শিক্ষক তিনি ছাত্রদের শুধুমাত্র পুথিগত বিদ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না।

শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাসের জন্যেই শিখানো শিক্ষকের কাজ নয়, তিনি শিখান জীবনকে জানার জন্যে, জীবনকে বোঝার জন্যে এবং জীবনকে পাস করার জন্যে। শিক্ষকের শিক্ষকতার জন্যেই সমাজ-সভ্যতা ও জাতীয় জীবনে গতিশীলতা আসে। শিক্ষকের সীমাহীন ত্যাগ, শ্রম ও মেধার কারণেই আমরা আজ সভ্যতার উন্নত শিখরে উন্নীত হয়েছি।

শিক্ষক শ্রমজীবী থেকে সকল শ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হন এবং তিনি নিজেও শ্রমজীবী মানুষকে শ্রদ্ধা করেন। তেমনি ছাত্রদেরকে শিখান শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে লড়তে ও তাদেরকে শ্রদ্ধা করতে। কাল মার্কস বলেছিলেন, শ্রমিকের শ্রম ছাড়া সোনাও মাটি। শিক্ষকই তার শিক্ষার মাধ্যমে একজন ছাত্রকে পূর্ণাঙ্গতা দান করেন। শিক্ষকের আসন শুধু শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ছড়িয়ে থাকেন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শিক্ষক না থাকলে ব্যক্তিজীবন যেমন আলোকিত হয় না, তেমনি সমাজ-সভ্যতাও আলোকিত হয় না।

শিক্ষকের সংকটের কারণেই আজ তরুণ সমাজ, যুবসমাজ বিপথগামী। শিক্ষকের সংকটের কারণেই আমাদের সমাজ-সভ্যতা অর্থনীতি সংকটের মুখে, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উৎপাদনে গতিশীলতা পাচ্ছে না। আজকের সমাজে নামধারী শিক্ষকের পরিমাণ অনেক থাকলেও শিক্ষকের পরিমাণ খুবই নগণ্য। শিক্ষকের সংকট থাকলে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ খুব বেশি লাভবান হয়।

শিক্ষক হলেন সমাজের বাতিঘর। এ বাতিঘর যখন অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে উঠতে থাকে তখন আমরা নিজেরাও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলি। আর এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির প্রভাব পড়ে আমাদের সমাজে এবং এর ভোক্তভোগী আমরাই। শিক্ষক শুধু রুটিরুজির জন্যেই শিখাবেন না। তিনি শিখাবেন আলোকিত মানুষ গড়ার জন্যে। আলোর স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিতে, নিজের আত্মতৃপ্তি, সমৃদ্ধি ও বিকাশের জন্যে।

যে শিক্ষক নিজেকেই বিকশিত করতে পারেন না, তিনি অন্যকেও বিকশিত করতে পারে না। তার শিক্ষায় সমাজে বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয়। তার জন্যে শিক্ষকতা নয়, জীবিকার জন্যে অন্য কোথাও চেষ্টা করা প্রয়োজন। তবে এ কথা সত্য- রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া শিক্ষক হওয়া যায় না। আজকের সমাজে যে সামাজিক ও মানবিক অবক্ষয় চলছে তার জন্যে নামধারী শিক্ষকের শিক্ষকতা এবং শিক্ষাই দায়ী।

যে কোনো মূল্যে আমাদেরকে এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের প্রয়োজনেই। সংকট যত গভীর হয় শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা তত বৃদ্ধি পায়। সভ্যতার শুরু থেকে আমরা দেখি শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টা কীভাবে শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। শিক্ষক শিখান সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে জীবন দিতে হয়, মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে নয়। শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষে পড়ানোই শিক্ষকের কাজ নয়। ছাত্ররা যখন শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্য সময়টুকু এবং প্রত্যাশিত জ্ঞানটুকু না পান তখন শিক্ষক তার মর্যাদা হারিয়ে ফেলেন এবং তার প্রতি ছাত্রদের অবহেলা ও অবজ্ঞা বৃদ্ধি পায়।

তবে আজকাল শিক্ষকদের মধ্যেও ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আবার তাদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। একদল শিক্ষককে দেখা যাচ্ছে তার সমস্ত কিছু বিকিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র টাকার পিছনে ছুটছেন। ফলে তার ব্যক্তিগত প্রাপ্তি ও সুখ যেমন বিনষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে পারিবারিক অশান্তি ও কলহও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এভাবেই শুর হয় সামাজিক অধঃপতন ও অবক্ষয়।

শিক্ষক ছাত্রদের মধ্যে চেতনার জায়গা এবং চেতনাবোধ গড়ে তুলবেন, জাগ্রত করবেন আর তা করতে না পারলে তিনি শিক্ষক হতে পারেন না। আমরা যদি আমাদের সমাজ-সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে চাই তবে শিক্ষকের পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যেও শিক্ষার সংগ্রামকে অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা আশা করি, শিক্ষকদের পরিসর বৃদ্ধি পাবে। তবেই আমরা আগামীর একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠন করতে পারবো, আলোকিত মানুষ পাবো বলে আমরা বিশ্বাস করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়