প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৯
বিজয়া দশমীর তাৎপর্য

দুর্গে দুর্গতিনাশিনী শ্রী শ্রী মাতা দুর্গা দেবীর পূজা শেষ হয় বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে। পূজার আগমনী বার্তার শুরু থেকে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পূজার দিনগুলো আনন্দ উৎসাহের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হলেও দশমীতে দেহ মনে দেখা দেয় বিষাদের ছায়া। কালো মেঘের ছায়া পরিপূর্ণ হয়ে উঠে অন্তর আত্মা। দশমী বিহিত পূজা শেষে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে বিদায় দিতে হবে দেবী দুর্গাকে। শেষ হয়ে যাবে দেবী পূজার সকল আয়োজন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে মতের্য থাকা বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাশে শ্বশুর বাড়ি ফিরে যাবেন মা উমা অর্থাৎ দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। সেই কারণে এই তিথিকে বিজয়া দশমী বলা হয়। কিন্তু দশমীর আগে আমরা বিজয়া শব্দটি যোগ করি কেন? অর্থাৎ দশমীকে আমরা বিজয়া দশমী বলি কেন তা কিন্তু আমাদের অনেকেরই জানা নেই। তাই বিষয়টা অনেকের কাছেই প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়।
এই বিজয়া দশমী বলার পেছনেও রয়েছে পৌরাণিক গল্প, যা অনেকেরই জানা রয়েছে। কথিত আছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন দেবী দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। এখানে নারী শক্তির জয় লাভকেই বিজয়া বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই নিয়ে আবার দ্বিমতও রয়েছে। শ্রী শ্রী চণ্ডীর কাহিনী অনুসারে, দেবী আবির্ভূত হন আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে। আর মহিষাসুরকে বধ করেন শুক্লা দশমীতে। তাই এই দশমীর দিনকে বিজয়া বলে চিহ্নিত করা হয়। উত্তর ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দশমীকে দশেরা বলা হয়ে থাকে। কোনো কোনো স্থানে এদিনে দশেরা এবং দশম মস্তকধারী রাবণ বধও পালিত হতে দেখা যায়। বাল্মিকী রচিত রামায়ণে কথিত আছে, আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে দশ মাথাওয়ালা রাবণকে বধ করেন ভগবান রামচন্দ্র। রাবণ বধের পর ৩০তম দিনে অপহৃত মা সীতা দেবীকে সাথে নিয়ে সস্ত্রীক অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন ভগবান রামচন্দ্র। তাই এই দিনটিকেই অনেকে দশেরা হিসেবে বা বিজয়া দশমী হিসেবে পালন করে থাকেন। কিন্তু হাজারো ব্যাখ্যা আর পৌরাণিক মতামত যাই থাকুক না কেনো, বাঙালি কিন্তু মেতে উঠে শুধুমাত্র দুর্গা পূজা নিয়ে। তাদের কাছে দশেরার বা রাবণ বধ তেমনভাবে প্রাধান্য লাভ করেনি। তারা দেবী দুর্গা পূজার মধ্য দিয়েই হৃদয়ে প্রশান্তি লাভ করেন। তাদের কাছে দশমী মানেই দুর্গা পূজোর অবসান। ৪ দিন উৎসবে মাতোয়ারা থাকার পর দশমীর দিন মেতে উঠেন সিঁদুর খেলায়। একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন আবেগাপ্লুত হয়ে। ছোটরা বড়দের প্রণাম দেন পরম শ্রদ্ধাভরে। আসছে বছর আবার হবে দেখা হবে এই আশা নিয়ে। সর্বশেষ এই শুক্লা দশমী তিথিতেই শ্রী রামচন্দ্র রাবণকে বধ আর দেবী দুর্গার হাতে মহিষাসুর নিহত হওয়ায় বিজয়া দশমী বাঙালি হৃদয়ে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আসছে। এই জয়কে কেন্দ্র করেই অনেকে বিজয় উৎসবও পালন করে থাকেন। যা মন্দের ওপর ভালোর চূড়ান্ত বিজয়ের প্রতীক।