শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫, ০২:৫৮

প্রতিটি শিশুর যোগ্যতাভিত্তিক যুগোপযোগী শিখনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

রাশেদা আতিক রোজী
প্রতিটি শিশুর যোগ্যতাভিত্তিক যুগোপযোগী শিখনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে শুদ্ধাচার ও নৈতিকতা শিক্ষার একটি সূঁতিকাগার হিসাবে তৈরী করার প্রত্যয় নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিদিনের প্রতিটি কর্মকান্ডে এমন কি সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীতেও শুদ্ধাচার ও নৈতিকতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যার অভিষ্ঠ লক্ষ্য হচ্ছে সূদূর প্রসারী, আর ফলাফলও হবে সুমিষ্ট। এর ফলে দেশের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরী হবে দেশের দক্ষ মানব সম্পদে। থাকবেনা দেশে কোন ধর্ষক, তৈরী হবে না কোন মাদকসেবী, জড়িয়ে পড়বেনা কোন অনৈতিক পরকীয়া প্রেমে। এগুলোর সবই হচ্ছে পারিবারিক শিক্ষার ঘাটতি, নৈতিক শিক্ষার চরম অবহেলা,বাবা-মার সুশাসনের অভাব, বয়োজৈষ্ঠ্যদের/মুরব্বীদের শ্রদ্ধা না করার ফলাফল। পরিবার ছাড়ার পর বিদ্যালয় হচ্ছে শিশুর প্রথম সামাজিক প্রতিষ্ঠান-যেখানে তার সামাজিকীকরণ ঘটে। তাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে শিশু শ্রেণি থেকেই মিথ্যা বলা পরিহার করা, কটু কথা পরিহার করা, অন্যের জিনিস না বলে নিয়ে যাওয়া। পরের কোন কিছু দেখে লোভ না করা, পরমতসহিষ্ণুতা, ইত্যাদি চর্চা করা হয়। কেননা শিশু শ্রেণিই হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার প্রবেশদ্বার।

শিশুদের শিক্ষার পথ সুগম করার জন্য সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় অবৈতনিক, শুধু তাই নয় মেধাবৃত্তি, উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ সুবিধা সেখানে রয়েছে। তাই শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলছি-

গধহধমব ুড়ঁৎ ঃরসব

গধহধমব ুড়ঁৎ ঢ়ৎরড়ৎরঃু

গধহধমব ুড়ঁৎ ভড়পঁং

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সার্বিক সহায়তায় প্রশাসনিক ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে রয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারবৃন্দ, জেলা পর্যায়ে রয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে রয়েছেন রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর, জেলা পর্যায়ে রয়েছেন পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষকই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, এবং অভিজ্ঞ,পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা তাদের খুবই গভীর ও সমৃদ্ধ। সারাবছরই তাদের বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য স্বল্পমেয়াদী বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে পেশাগত ভাবে দক্ষ করে তোলা হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি উপজেলায় রয়েছে “উপজেলা রিসোর্স সেন্টার’’ নামক একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার। যারা সারাবছরব্যাপী নিরলসভাবে অধীর আগ্রহ সহকারে শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি তাদেরকে কারিগরিভাবে দক্ষ করে তোলার কাজে নিবেদিত। সেখানে অফিস প্রধান হিসাবে আছেন একজন পেশাগতভাবে দক্ষ এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিকভাবে সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন “ইন্সট্রাক্টর। যার পেশাগত জ্ঞান, পেশাগত দক্ষতা এবং পেশাগত মূল্যবোধ বেশ ইতিবাচক , গভীর ও সমৃদ্ধ। কেননা একজন শিক্ষকের জীবনে প্রশিক্ষণ একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা বিভিন্ন বেসরকারি এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালেই দেখি প্রশিক্ষণ সেখানে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রশিক্ষণ নিয়ে তর্ক-বির্তকের কোনো অভাব নেই। একজন যোগ্য ও আদর্শ প্রশিক্ষকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সার্বক্ষনিক ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করা।

বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র টারমিনেটরের নায়ক ও ক্যালির্ফোনিয়ার দুবার নির্বাচিত গর্ভনর আর্নল্ড শোয়ারর্জেনেগার বলেছেন- “প্রশিক্ষণ আমাদের কাজের চাপ থেকে সৃষ্ট জীবনী শক্তি দমনকারী বিষয়গুলোকে বর্হিগমনের পথ দেখায়’’।

আমেরিকার একজন প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও লেখক রবার্ট কিয়োসাকি বলেছেন নিয়মানুবর্তীতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠে। উপরের উক্তিগুলো থেকে বুঝা যাচ্ছে- একজন শিক্ষকের জীবনে প্রশিক্ষনের গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষার্থীর সাথে একজন শিক্ষকের ব্যবহার, আচরণ সকল কিছুরই পরিবর্তন ঘটে একমাত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। কেননা- “শিক্ষক-শিক্ষার্থী’’ -সর্ম্পক পৃথিবীর সেরা সর্ম্পকের একটি। শিক্ষককে তার মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে শিক্ষার্থীর মেজাজ বুঝে তার প্রতিভাকে জাগ্রত করে তার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ সৃষ্টি করেন।মানুষ গড়ার কারিগর জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানগুলো। সুতরাং শিক্ষকের সম্মান সব সময় সবার উর্ধ্বে। পূর্বেও ছিল, এখনও আছে। প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রাণ ও কেন্দ্রবিন্দু। একমাত্র মানুষকেই দুইবার জন্মগ্রহন করতে হয়। একবার তার মাতৃগর্ভে, আরেকবার শিক্ষকের শাসনে- সোহাগে শিক্ষার্থীর জন্ম হয় বিদ্যালয়ে। তাই মাতৃকোল ছাড়ার পর বিদ্যালয় হচ্ছে শিশুর প্রথম সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

আজকের দিনে সুশিক্ষার অভাবেই বর্তমান সমাজের অধঃপতন, নৈতিকতার চরম অবক্ষয় ঘটছে। শুধু শিক্ষকগণই এখানে একচেটিয়া দায়ী নয়, পারিবারিক শিক্ষা এক্ষেত্রে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে। একটি সুসংগঠিত সমাজে একদিনে একজন ধর্ষক, মাদকসেবী, পরকীয়া প্রেমিক তৈরী হয়নি। ভঙ্গুর পরিবার তথা অতিআধুনিকতার খোলসের ভিতরেই এদের জন্ম। মুখে অত্যন্ত সৎ ও কঠিন বুলি আওরায়, কিন্তু অন্তরে মনে-প্রানে এরা ধর্ষক, কামলোভী। অংশ/খণ্ডচিত্র দেখে কখনোই সমগ্রকে উপলব্ধি করা যায় না। সামাজিক অবক্ষয়ের খণ্ডচিত্র দেখে, সামগ্রিকতা বিশ্লেষন ও অনুধাবন না করতে পারলে সমস্যা আরো জটিল হবে। সমাধান হবে দুরুহ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের পদক্ষেপ হবে ত্রুটিপূর্ণ। সমগ্র প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজালে, আজকের এই ঘুঁনে ধরা সমাজের অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই মূল্যবোধ এবং আচরণের ইতিবাচক ও কাক্সিক্ষত পরিবর্তন ঘটে। প্রাথমিক শিক্ষাকে শিক্ষকের দোরগোড়ায় অর্থাৎ হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার জন্য প্রতিটি উপজেলায় “উপজেলা রিসোর্স সেন্টার” প্রতিষ্ঠা করেছেন। এতে শিক্ষকগণ যে কোন তথ্য, প্রশিক্ষণ, কারিগরী শিক্ষা, সুযোগ-সুবিধা সকল কিছু হাতের নাগালে পাচ্ছেন। একজন শিক্ষক পূর্বে সারাজীবনে মাত্র একবার প্রশিক্ষণ পেতো, যেটাতে “পিটি ট্রেনিং’’ বলা হতো। এখন প্রায় সারাবছরব্যাপী একজন শিক্ষক কোন না কোন প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন। এই প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে স্বল্প মেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী সকল ধরনের প্রশিক্ষণ উপজেলা রিসোর্স সেন্টার থেকে পেয়ে থাকেন। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষকদের র্ভাচুয়াল প্লাটর্ফমে অনলাইন ক্লাশ নেয়ার এই কঠিন কাজটির সম্পাদনে নিবেদিত হয়ে সার্বিক সহায়তা প্রদান করে আসছে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার। কেননা একজন শিক্ষককে শুধু চধফধমড়মরপধষ জ্ঞান থাকলেই হবেনা, তাঁর ঞবপযহরপধষ জ্ঞানও পর্যাপ্ত না থাকলে -তার কাছ থেকে ভালো পাঠদান আশা করা যায়না। এটা এখন বর্তমান সময়ের দাবি। একজন উপজেলা রিসোর্স সেন্টার ইন্সট্রাক্টর শুধু পেশাগত জ্ঞান ও পেশাগত মূল্যবোধে সমৃদ্ধ নয়, ওঈঞ রহ ঊফঁপধঃরড়হ ঢ়বফধমড়মরপধষ এ দক্ষ ও অভিজ্ঞ । যদিও প্রাথমিক শিক্ষায় ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরগণ এখনো পদোন্নতি বঞ্চিত। তাছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনেকগুলো ক্যাডারপদ থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষায় মাঠ পর্যায়ে কোন ক্যাডার পদ নেই। প্রাথমিক শিক্ষার মানউন্নয়নে ক্যাডারপদ এখন সময়ের দাবী। শুধু ঢ়বফধমড়মরপধষ জ্ঞানে সমৃদ্ধ হলেই পূর্বে ভালো শিক্ষক হওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিতেও তাকে দক্ষ না হলে যুগের সাথে পিছিয়ে শিক্ষক হয়ে যাবেন ইধপশফধঃবফ /

সেকেলে। এই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকই হবেন উদার, মানসিকতার, শুদ্ধাচারের এক মূর্তপ্রতীক। যার কাছ থেকে সকল নৈতিকতা, বিনয়ী ব্যবহার, আচরনে শুদ্ধতা, ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গিও বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষক হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ রোল মডেল। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়ণের জন্য বিশ্বের প্রতিটি দেশে রয়েছে নানা অয়োজন। বাংলাদেশ কোন অংশে এর ব্যাতিক্রম নয়। দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় তার শিক্ষকদের ও ধারাবাহিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করবে-এটাই স্বীকৃত ও কাঙ্খিত। এই সংক্রান্ত সকল আয়োজন হবে বিদ্যালয় কমিউনিটিতে শিক্ষক কেন্দ্রিক। যা শিক্ষকরা নিজেদের উন্নয়নে নিজেরাই সহায়ক ও সমর্থক হবে। যেমন : লেসন ষ্টাডি। বিশেষ ক্ষেত্র ভেদে বিদ্যালয় অন্য কমিউনিটি/ ক্লাষ্টার/উপজেলা পর্যায় হতে রিসোর্স পার্সন এনে নিজেদের প্রশিক্ষিত করতে পারে। এই প্রশিক্ষিত শিক্ষকগণই হচ্ছেন দ্বিতীয় মা। তাই তো প্রবাদটি বহুল প্রচলিত।

গড়ঃযবৎ রং ঃযব ভরৎংঃ ঃবধপযবৎ

ঞবধপযবৎ রং ঃযব ঝবপড়হফ গড়ঃযবৎ

শিক্ষিত জনগোষ্ঠি, পরিবার, সুশীলসমাজ, সচেতন অভিভাবক, এলাকার জনপ্রতিনিধি সকলকে শিক্ষার একটি মেইনষ্ট্রীমে আসতে হবে। যাতে সকলেই তাদের সন্তানকে, পরবর্তী প্রজন্মকে, দক্ষ মানবসম্পদে রুপান্তর করার জন্য “সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’’ ভর্তি করাতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং অন্যকে উদ্বুদ্ধ করে। প্রত্যেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং মূল্যায়ন করা হয়। যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়নের জন্য প্রতি বছর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়।

১। আপনার সন্তানের পড়াশোনার খরচ একবার আপনিই পরিশোধ করছেন খাজনা ও কর প্রদান এবং পরিবারের প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে গিয়ে ট্যাক্স মূসক দেয়ার মাধ্যমে। যা সরকারি ব্যবস্থাপনায় সংগৃহীত হয়ে থাকে। বিনিময়ে রাষ্ট্র, সরকার আপনার সন্তানের অবৈতনিক শিক্ষার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। বিনামূল্যে শতভাগ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছে, বছরের প্রথমদিনেই শিশুর হাতে পৌঁছে যাচ্ছে নতুন বই।

২। প্রতি বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিচালু করে তার জন্য একজন শিক্ষকের পদসৃজনসহ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এবং তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই শিক্ষার শিক্ষাক্রম, শিক্ষক সহায়িকা এবং পাঠ্যবইসহ সকল উপকরণের মান সকল মহল কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রশংসিত।

৩। শিশুর সার্বিক বিকাশকে সামনে রেখে বিদ্যালয়ে শিক্ষাক্রম এবং সহ:শিক্ষাক্রমের আয়োজন করছে এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে শিশুর পারদর্শীতাকে দৃশ্যমান হতে সহায়তা করছে।

৪। প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যাতে বিদ্যালয়েই তার পড়াশোনার কাজ শেষ করতে পারে এবং বাড়িতে যাতে তারা খেলাধুলা ও আনন্দে কাটাতে পারে, গৃহে যেন কোন পড়াশোনার চাপ না থাকে, সেজন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মহোদয় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এক শিফটে রুপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন। তার জন্য সকল পৃষ্ঠপোষকতাসহ আনুষঙ্গিক সকল ধরনের প্রস্তুতি সরকার গ্রহন করছেন।

৫। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম, পাঠ্যবই, শিক্ষক সংস্কারন, শিক্ষক সহায়িকা, শিক্ষক নির্দেশিকাসহ সকল শিক্ষা সামগ্রী ও শিক্ষা উপকরন (মূল্যায়নের টুলসসহ) প্রস্তুতে দেশী-বিদেশী পরামর্শক, শিশু বিশেষজ্ঞ ছিল এবং এ সকল উপকরণ উন্নয়নে শিশুর বয়স, সামর্থ্য, আগ্রহ, মেধা ও প্রবনতাকে বিবেচনায় আনা হয়েছে।

৬। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ক্রমান্বয়ে ভে․ত অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ শিশুর নিকট আকর্ষনীয় হচ্ছে, আইসিটি টুলস ব্যবহার করে মাল্টিমিডিয়া/স্মার্ট ক্লাশরুম চালু রয়েছে এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও পর্যাপ্ত টয়লেট ওয়াশব্লকসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে।

৭। শেণিকক্ষ ভিত্তিক উন্নয়নকে তরান্বিত করার জন্য বর্তমান সরকার প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণিতে একটি মুক্তযুদ্ধ ভিত্তিক বুক কর্ণার ¯াপন করা হচ্ছে। শিশুদের শারিরীক বিকাস সাধনে বিদ্যালয়ের আঙিনায় প্লেইং এসোসরিজ স্থাপন করা হচ্ছে।

৮। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিটি শিক্ষকের পেশাগত উন্নয়নে শুরুতেই প্রারম্ভিক প্রশিক্ষণ (১০-১৫ দিনের),সাটির্ফিকেট-ইন-এডুকেশন (১২ মাসের) ও ডিপ্লোমা-ইন -এডুকেশন(১৮ মাসের) প্রদান করা হয় এবং ধারাবাহিক পেশাগত উন্নয়ন বজায় রাখতে সকল শিক্ষক স্থানীয়ভাবে বিষয় ভিত্তিক (প্রতিটি ০৬ দিনের) এবং পেয়ে থাকেন। যা বিদ্যালয়ে এবং পদ্ধতিগত পাঠদানে শিক্ষককে সমৃদ্ধ করে, পাঠদানকে আকর্ষনীয় ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করে তোলে। সকল স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ ইউাারসির মাধ্যমে বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। এর ফলে শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পঠন ও লিখন দক্ষতার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ ০২ বছর বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পঠন ও লিখন দক্ষতায় ঘাটতি তথা যোগ্যতা অর্জনে চেলেঞ্জ এর সুখামুখি।

৯। শিশুর সৃজনশীলতা ও মেধাকে শানিত করার জন্য সহ:পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে চালু করা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়। এর মাধ্যমে তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হওয়ার এবং ভাল উপস্থাপক হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যেটা বিদ্যালয়, ক্লাস্টার, উপজেলা, জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয় -এটা সর্বমহলে প্রশংসিত ও নন্দিত।

১০। শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১ঃ৩০ করার লক্ষ্যে প্রতিবছর শিক্ষক নিয়োগের কাজ চলমান রয়েছে এবং সরকার এ অভিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে নিবেদিতভাবে। অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন অনেকেই বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় এসে এই পেশাকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন।

১১। শিশুর শারিরীক ও মানসিক বিকাশের লক্ষে প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন শারিরীক শিক্ষার শিক্ষক এবং একজন সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি চুড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এছাড়াও বছরব্যাপী ধারাবাহিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ঞবধপযবৎং ঝঁঢ়ঢ়ড়ৎঃ ঘবঃড়িৎশ(ঞঝঘ),খবংংড়হ ঝঃঁফু,অপধফবসরপ ঝঁঢ়বৎারংরড়হ, গড়হরঃড়ৎরহম ্ গবহঃড়ৎরহম, শিখবে প্রতিটি শিশু মডেল কার্যক্রম, মিড ডে মিল, ঙহব ফধু ড়হব ড়িৎফ, দিনের পড়া দিনে শেষ, জচউ এর ব্যবহার, অপঃরড়হ জবংবধৎপয, ঝঁন-পষধংঃবৎ ঃৎধরহরহম, ঝঁনলবপঃ ইধংবফ ঞৎধরহরহম,খবধফবৎংযরঢ় ঞৎধরহরহম,ঈঁৎৎরপঁষঁস ফরংংবসরহধঃরড়হ , ওঈঞ রহ ঊফঁপধঃরড়হ, গধঃয ঙষুসঢ়রধফ ঞৎধরহরহম, চৎব-চৎরসধৎু ্ ওহফঁপঃরড়হ ঞৎধরহরহম, শিক্ষক সংস্কারন ও নেপ র্কর্র্তৃক পরিমার্জিত বার্ষিক পাঠপরিকল্পনা ব্যবহারতো রয়েছেই।

এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে চাকুরীকালীন শিক্ষকদের সকল ধরনের ইন সার্ভিস প্রশিক্ষণ এডহক বা সাময়িক। যার স্থায়িত্ব খুব বেশি কাম্য নয়। উন্নত দেশের মত শিক্ষকতা পেশায় ¯ায়ীভাবে অনুপ্রবেশের পূর্বে শিক্ষক প্রি-সার্ভিস শিক্ষাকোর্স/ ডিপ্লোমা/শিক্ষা সংক্রান্ত স্বল্পমেয়াদী ইনকোর্স ডিগ্রি সম্পন্ন করার রাষ্ট্রীয় ব্যব¯ায় না থাকায় শিক্ষকদের জন্য চাকুরীকালীন এ প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।এটা শুধুমাত্র তাদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ণের জন্য।

১২। প্রতিবছর শতভাগ শিশু যাতে ভর্তি, উপস্থিতি, ঝরে পড়া এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর হার শতভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যে শতভাগ উপবৃত্তি বর্তমান সরকার চালু করেছেন। এটা একটি বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

সুতরাং আর নয় কিন্ডার গার্ডেন/বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যোগ্যতা ভিত্তিক শিখন নিশ্চিতকরণে আপনার সন্তানকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে ভবিষ্যতে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বির্নিমানে দক্ষ মানব সম্পদ করতে সরকারকে সার্বিক সহায়তা করুন। যোগ্যতা ভিত্তিক শিখন নিশ্চিতকরণে আমার কিছু মতামতঃ

১। বাংলা ও ইংরেজি পড়ার দক্ষতা অর্জনে বিশেষ ব্যবস্থ গ্রহন। যেমন : বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগীতা,পুরস্কারের ব্যবস্থা করা, বিশেষ ক্লাশ,অভিবাবকদের সম্পৃক্ত বাড়ানো ইত্যাদি।

২। সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের শূণ্য পদ দ্রুত পূরণ করা।

৩। একসাথে এক বিদ্যালয় থেকে একাধিক শিক্ষককে ডেপুটেশন কিংবা ডিপিএড প্রশিক্ষণে প্রেরণ না করা।

৪। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যালয়ের ভে․ত অবকাঠামো নির্মান করা।

৫। শিক্ষকদের পেশাগত মান উন্নয়নে সারা বছর ব্যাপি ইঊআরসিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

৬। বিদ্যালয়ে নিয়মিত একাডেমিক সভা করা ও লেসন স্টাডি পরিচালনা করা।

৭। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১ঃ ৩০ এ উন্নিত করা।

৮। শ্রেণিকক্ষগুলোকে আধুনিকীকরণ করা। স্মার্ট ক্লাশরুমে রুপান্তর করা।

৯। শিখন শেখানো কার্যক্রমকে অধিকতর গুরুত্বদিয়ে বিদ্যালয় মনিটরিং করা।

১০। পিটিআইতে দুই শিফটে ডিপিএড প্রশিক্ষণ পরিচালনা না করা।এতে বিদ্যালয়গুলোতে চরম শিক্ষক স্বল্পতা দেখা দেয় এবং পাঠদানে দীর্ঘমেয়াদি বিঘ্ন ঘটছে।ফলেশিক্ষার্থী নির্ধারিত যোগ্যতাঅর্জন সম্ভব হচ্ছে না।

লেখক : ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়