মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৩

শ্যামপুরে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে

শ্যামপুরে শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে
ফারুক হোসেন নয়ন

রংপুরের সদর শ্যামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রোববার (১২ অক্টোবর ২০২৫) শ্যামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক সহকারী সিনিয়র শিক্ষক শাহীন মোহাম্মদ মোস্তাক কে নবম শ্রেণীর ক্লাস কক্ষে নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের সম্মুখে মারধর করে লাঞ্ছিত করেন অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম।

এ বিষয়ে নবম শ্রেণীর একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, কারণে-অকারণে প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাস কক্ষে ঢুকে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, প্রিন্সিপাল স্যার রুটিন শীট পরিবর্তন করে নিজের মন মতো, কাউকে আগে বলেন না। আমরা বাড়ি থেকে পড়ে আসি ক্লাসের পড়া, ক্লাসে এসে দেখি রুটিন পরিবর্তন করে অন্য পড়া দিছে, যেগুলো পড়ে আসিনি। এতে করে আমাদের পড়াশোনার সমস্যা হয়। এক বছর হয়, এখন পর্যন্ত আমাদেরকে কোনো সিলেবাস দেন নি প্রিন্সিপাল স্যার।

একাধিক শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমরা মেয়ে, আমাদের শারীরিক সমস্যা হয়। সে কারণে আমরা যদি ক্লাসে না আসি, তাহলে প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের কাছ থেকে এক দিনের জন্যে১০ টাকা জরিমানা করে। দু দিন না আসলে ২০ টাকা। যদি আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকি, তাহলে ১০ দিন যদি স্কুলে না আসি, তাহলে প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু এই জরিমানার টাকার কোনো রসিদ দেন না প্রিন্সিপাল স্যার। আবার বিদ্যুৎ বিলের জন্যে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ টাকা করে নেন। সেই টাকারও রসিদ দেন না প্রিন্সিপাল স্যার। শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমাদের ইংলিশ শিক্ষক নাই, আমাদের ইংলিশ ক্লাস প্রিন্সিপাল স্যার নিতেন, গত ১৫ দিন থেকে আমাদের ইংলিশ ক্লাস প্রিন্সিপাল স্যার নেন না। ইংলিশ শিক্ষক না থাকায় আমাদের ইংলিশ পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে। নবম শ্রেণীর একাধিক ছাত্রী বলছেন, আমাদের ক্লাস রুমে শাহীন স্যারকে মারধর করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করা প্রিন্সিপাল স্যারের ঠিক হয় নি। ক্লাস রুমে যদি প্রিন্সিপাল স্যার একজন শিক্ষককে ধাক্কাধাক্কি গালাগালি করে তাহলে আমরা স্যারদের কাছ থেকে কী শিখবো? শিক্ষার্থী আরো বলেন, প্রিন্সিপাল স্যার শাহিন স্যারের গায়ে হাত তোলা ঠিক করেনি। আমরা এর সঠিক বিচার চাই, যাতে করে আর কোনো স্যারকে প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাস রুমে মারধর করতে না পারেন।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী সহকারী শিক্ষক শাহীন মোস্তাক বলেন, প্রিন্সিপাল স্যার কারণে-অকারণে আমাকে গালিগালাজ করেন। নবম শ্রেণীর ছাত্রীরা আমাকে অভিযোগ করে বলেন, স্যার দিনে দুবার ক্লাস রুটিন সিট পরিবর্তন করেন, আমরা ক্লাস করবো কী ভাবে? এক বছর হয়ে গেলো, প্রিন্সিপাল স্যার এখনো সিলেবাস দেননি। আর পরীক্ষার সময় যে পড়াগুলো পড়ি সেখান থেকে প্রশ্ন না দিয়ে বাইরে থেকে প্রশ্ন কিনে আনেন। তাহলে আমরা কীভাবে লেখাপড়া করবো এই স্কুলে? সহকারী শিক্ষক আরো বলেন, এ বিষয় নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাকে বলেন, আমার চেয়ে বেশি বুঝতে যেও না। আমি যা করবো তা-ই হবে। এই স্কুল আমার মতে চলবে, আমি কখন পড়াশোনার রুটিন পরিবর্তন করবো সেটা আমার ব্যাপার, তোমাদের কাউকে পরামর্শ দিতে হবে না। আমি যেভাবে স্কুল চালাবো সেভাবেই স্কুল চলবে, তোমাদেরকেও সেভাবেই চলতে হবে। সহকারী শিক্ষক আরো বলেন, প্রিন্সিপাল স্যারের এসব কথার উত্তর দিয়ে নবম শ্রেণীর ক্লাস রুমে আমি প্রবেশ করলে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বলে, স্যার এখন তো আপনার ক্লাস নাই। তখন আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে বলি, স্যার সকালে রুটিন শীটে দেখি আমার ক্লাস আছে। এখন ক্লাসে এসে দেখি আমার ক্লাস নেই। তাহলে আমার ক্লাস কখন? তখন প্রিন্সিপাল স্যার বলেন, আপনার ক্লাস দুপুরে পরিবর্তন করে দিয়েছি। কারণ জানতে চাইলে, প্রিন্সিপাল স্যার নবম শ্রেণীর ক্লাস কক্ষেই আমাকে মারধর করে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন। আমি শিক্ষক, আমার কি কোনো সম্মান নেই? নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের সামনে আমাকে মারধর এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন প্রিন্সিপাল স্যার। সহকারী শিক্ষক শাহিন আরো বলেন, প্রিন্সিপাল স্যার আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগের দাপট দেখাতো, বর্তমানে বিএনপির দাপট দেখাচ্ছেন। ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় শ্যামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী রাবেয়া খাতুনের পরিবর্তে প্রিন্সিপাল স্যার রংপুরের ঝুমা নামের এক মেয়েকে দিয়ে পরীক্ষায় দেয়াতে যান, তখন শ্যামপুর হাই স্কুল কেন্দ্রে রংপুরের ভুয়া শিক্ষার্থী ঝুমা নামের মেয়েটিকে প্রশাসন আটক করেন। আটকের পর ভুয়া এই এসএসসি পরীক্ষার্থী ঝুমা বলেন, শ্যামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল শহিদুল ইসলাম মোটা অংকের টাকার বিনিময় আমাকে রাবেয়ার পরিবর্তনে এসএসসি পরীক্ষা দিতে ব্যবস্থা করে দেন। এই জঘন্য ঘটনায় শ্যামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল শহিদুল ইসলােম প্রায় ৭মাস জেল খেটেছেন। সেই সাথে এই ভুয়া এসএসসি পরীক্ষার্থী ঝুমা প্রায় ৪০ দিন জেল খেটেছেন। এ সমস্ত জঘন্য কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে প্রিন্সিপাল মো. শহিদুল ইসলাম মুঠো ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের যেমন ইচ্ছা তেমন করে নিউজ করেন, আমি কাউকে জবাবদিহি করতে পারবো না। তিনি আরো বলেন, সহকারী শিক্ষক আমার গায়ে হাত দিয়েছে। তাই আমিও সহকারী শিক্ষকের গায়ে হাত দিয়েছি। এক পর্যায় প্রিন্সিপালের কাছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জরিমানার টাকা নেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কাউকে জবাবদিহি করবো না।

শ্যামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি ও রংপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মো.সামসুজ্জামান সামু মুঠোফোনে সাংবাদিকদেরকে বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কোনো সহকারী শিক্ষকের গায়ে হাত দিতে পারবে না। আর সেখানে আমার স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল কীভাবে এরকম একটা কাজ করলো এ বিষয়ে ঐ সহকারী শিক্ষক শাহীন মোহাম্মদ মোস্তাক আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে এ ঘটনা তদন্ত করে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়