শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫৩

রায়পুরে ভাঙ্গারি ব্যবসার আড়ালে চোরাই মালের জমজমাট বাণিজ্য, ৫ চোর কারাগারে

রায়পুরে ভাঙ্গারি ব্যবসার আড়ালে চোরাই মালের জমজমাট বাণিজ্য, ৫ চোর কারাগারে
তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ভাঙ্গারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে চোরাই মালের জমজমাট বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এসব ব্যবসার ওপর কোনো নজরদারি নেই প্রশাসনের।

এসব ভাঙ্গারি ব্যবসার পালিত চোরেরা রাতের আঁধারে শহরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি, বাসা বাড়ির বৈদ্যুতিক সার্ভিস লাইনের তার, বিভিন্ন বন্ধ ফ্যাক্টরির মালামাল, বাড়ির পানির টিউবওয়েল, টিউবওয়েলের মাথা-হাতল, বাড়ির ভাঙ্গা টিন, বাড়ি নির্মাণসামগ্রী ও বাড়ির সামনে থাকা পরিত্যক্ত আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ঘরের গৃহিণীরা ঘরের উঠোনে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় হাঁড়ি-পাতিল রাখলেও সেগুলোও নিয়ে যাচ্ছে চোর চক্র। সন্ধ্যার পর থেকেই ভাঙ্গারির দোকানগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত এসব চোরাই মাল কেটে টুকরা টুকরা করে অন্যসব সরঞ্জামের সঙ্গে মিশিয়ে রাখা হয়। ফলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ চোরাই মালামাল বিক্রি হচ্ছে ভাঙ্গারি দোকানগুলোতে।

জানা যায়, রায়পুর পৌর শহরের আনাচে কানাচে, অলি-গলিসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নসহ হাটবাজারগুলোর পাশে গড়ে উঠেছে ১০-১৫টি ভাঙ্গারি মালামাল কেনাবেচার দোকান। এর মধ্যে রায়পুর শহরের ভুইয়ার রাস্তার মাথা এলাকায় রয়েছে আবদুস সাত্তারের ভাঙ্গারি দোকান। তার এই ভাঙ্গারি দোকানিদের সহযোগিতায় এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠেছে একাধিক ছোট বড়ো চোরের দল। এই চোরের দলগুলো বিভিন্ন এলাকা থেকে লোহার যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক মোটর, তার, দরজা-জানলার গ্রিল, টিউবওয়েল, টিন, হাঁড়ি-পাতিলসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে দোকানিদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে। এ ছাড়া বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন কারখানা সংস্কার কাজের জন্যে রাখা রড, বিভিন্ন বন্ধ ফ্যাক্টরির মালামালসহ লোহা দ্রব্যাদি চুরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এমনই এক অভিযোগ করেছে রায়পুর হায়দর গঞ্জ আঞ্চলিক শহরের ডাকাতিয়া নদীর বাঁধের ওপর ফার্নিচার ব্যবসায় করছেন তোফায়েল ও নাছির আহাম্মদ। এই দুজনের সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে চোর চক্রটি বৈদ্যুতিক তার, বৈদ্যুতিক মোটর, লম্বা লোহার পাইপ, জেনারেটর, মেশিনারিজ চুরি করেছে।

এ ব্যাপারে শুক্রবার (১০ অক্টোবর) রায়পুর পৌরসভার মধুপুর গ্রামের ব্যাবসায়ী অপু হোসেন বাদী হয়ে স্কারাপ ব্যবসায়ী সাত্তারসহ আটক পাঁচ চোরসহ ৭ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।

আটককৃত কারাবন্দিরা হলো : চোর চক্রের সদস্য রায়পুর পৌরসভার পুর্ব কেরোয়া গ্রামের জ্বীনের মসজিদ বাড়ির মেহেদী হাসান রায়হান (১৯), নোয়াখালির বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর গ্রামের আসাদ মিয়া পন্ডিত বাড়ির বেলাল হোসেন (২৩), রায়পুরের চর বামনী গ্রামের ইব্রাহিম মুন্সি বাড়ীর আলী আহাম্মদ রনি (২৫), চরআবাবিল ইউনিয়নের হায়দরগঞ্জের পশ্চিম ব্রীজ সংলগ্ন এলাকার মো. সাগর (১৯) এবং একই এলাকার তারেক হোসেন সবুজ (২১)।।

চোর মেহেদী হাসান রায়হান জানায়, চুরিকৃত মালামাল রায়পুর শহরের ভুইয়ার রাস্তার মাথায় সাত্তারের ভাঙ্গারি দোকানে নিয়ে মালামাল বিক্রি করে। তারা বিভিন্ন এলাকায় চুরিকৃত মালামাল ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে থাকে। রায়হান ও তার সাত সহযোগী মিলে নাসির ও তোফায়েল ও গাজি কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী শিবলু ভাটের মালামাল চুরি করে নিয়ে সাত্তারের ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে।

রায়পুর পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আরমার হোসেন বলেন, আমাদের নিয়ম অনুযায়ী ভাঙ্গারির দোকানের নামে কোন ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয় না।

পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন বলেন, পুরাতন মালালের আড়ালে চুরির মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে, সবাই না। যারাই জড়িত থাকুক, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। তাছাড়া আমাদের নিয়মিত একটা নজরদারি আছে, যতটুকু সম্ভব আমরা নজরদারিতেই রাখছি। কোনো অভিযোগ পেলে যাচাইবাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

ব্যবসায়ী তোফায়েল ও নাছিরের প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনায় রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভুইয়া জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুজন এবং যে দোকানে বিক্রি করেছে সে ভাঙ্গারি দোকানে অভিযান চালিয়ে মালিকসহ আরও দুজনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়। বাকি মালামাল উদ্ধারসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়