প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ১৮:২৪
চাঁদপুরে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত

'প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চাঁদপুর জেলায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৫ পালন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে বুধবার (২৫ জুন) সকালে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে
পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানের শুরুতে সার্কিট হাউজ থেকে র্যালি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. এরশাদ উদ্দিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, এ বছর পরিবেশ দিবসে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে প্লাস্টিক দূষণ। পরবর্তী বছর হয়তো নদী দূষণ নিয়ে জোর দেয়া হবে। কোনো কিছুই বাদ যাবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পরিবেশ রক্ষায় আমরা নানা প্রস্তাব করতে পারি। প্রশাসনেরও কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধতা আছে। একা সব কাজ করা সম্ভব নয়। তবে আপনারা দেখেছেন, এখন কাপড়ের বাজারে প্লাস্টিক ব্যবহার হয় না। ব্যবহার হয় সব্জি ও মুদি দোকানে।তিনি বলেন, প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যবহারে একটি পক্ষ উৎপাদন করছে, আরেকটি পক্ষ ব্যবহার করছে না। এই দুটি পক্ষই একই শহরে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে সব সময় প্রশাসনের পক্ষে আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। পরিবেশ বাঁচাতে হলে রাষ্ট্রের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা যেখান থেকে শিশুরা শৃঙ্খলা শিখবে সেখান থেকে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কাজ শুরু করতে পারেন।
তিনি বলেন, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। জমিতে জৈব সার ব্যবহার না করে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। একটি সুন্দর পরিবেশে শুধুমাত্র মানুষই বসবাস করবে তা নয়, বরং জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের পরিবেশকে ঠিক রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের ক্ষমতা প্রয়োগ করার জন্যে সাধারণ মানুষের সমর্থন বেশি প্রয়োজন। তাহলে যে কোনো উদ্যোগ নিয়ে কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। জলাবদ্ধতার জন্যেও আমাদের পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে। তবে আমরা নদী থেকে বালু উত্তোলন কমিয়ে আনতে অনেকটা সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের জনমত গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক বলেন, পরিবেশ রক্ষায় শিশু কিশোরদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব। বেশ কিছু বছর আগেও শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব নিয়ম মেনে চলার প্রচলন দেখা গেছে। শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষাই নয়, শিক্ষকদের অল্প সময় হলেও বাকি বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
চাঁদপুর পৌরসভা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্যে আমরা জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছি। যখনই জমি অধিগ্রহণের জন্যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়, তখনই তারা জানতে চান এখানে কী হবে? বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা জানলে আর রাজি হন না।
তিনি বলেন, পরিবেশ বাঁচাতে হলে আমাদের সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আসুন, কীভাবে চাঁদপুরের পরিবেশকে ঠিক রাখা যায় সেসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করি। এক্ষেত্রে প্রশাসনের চাইতে অনেক বেশি কাজ করতে পারবে পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আব্দুল হান্নান রনি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান।
দিবসের মূল প্রতিপাদ্য 'প্লাস্টিক দূষণ আর নয় বন্ধ করার এখনি সময়’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিক্ষক ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী মো. আল-আমিন। চাঁদপুর জেলার পরিবেশ ও বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহীন, চাঁদপুর আদালতের এপিপি অ্যাড. কাদের খান, সনাক চাঁদপুরের সভাপতি আলমগীর হোসেন পাটওয়ারী ও জেলা নদী রক্ষা ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুসাদ্দেক আল-আকিব।
বক্তারা প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস, বিকল্প ব্যবহার ও বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন এবং এসব বিষয় সমাধানে সরকারি উদ্যোগ ও জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেন।
সবশেষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক।