প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ২২:৩২
ফরিদগঞ্জে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল
ঘটনার অন্তরালে....

ফরিদগঞ্জে আশু পাটওয়ারী ওরফে আশিক (৪০) নামের এক সহজ-সরল যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুক ব্যবহারকারী ও স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শুক্রবার (২০ জুন ২০২৫) উপজেলার মধ্য পোয়া গ্রামে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও বিকেলে ভুক্তভোগী নিজে অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন।
|আরো খবর
জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসিন্দা মনু পাটওয়ারীর ছেলে আশু পাটওয়ারীর সাথে গত ১৫ বছর পূর্বে একই উপজেলার মধ্য পোয়া গ্রামের হান্নান মিয়ার মেয়ে সেলিনা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। আশু পাটওয়ারীর বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় তিন সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করেন। আশু পাটওয়ারী শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ হওয়ায় স্থানীয় দুষ্টু প্রকৃতির মানুষের কথা বিশ্বাস করে নিজ স্ত্রীর সাথে আপন ভায়রা ভাইয়ের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে সন্দেহ করে কলহ সৃষ্টি করেন। এই কলহের জেরে আশু পাটওয়ারী নিজ বসতঘর ভাংচুর, স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং বৃদ্ধা শাশুড়ি আমেনা বেগমকে মারধর করেন। এসব দেখে শ্যালক আমির হোসেন ভগ্নিপতিকে একাধিকবার বাধা প্রদান করলেও তিনি কারো কথা মানছেন না।
এতে ঘটনার দিন গত শুক্রবার (২০ জুন ২০২৫) সকালে সহজ সরল আশু পাটওয়ারী নিজ বসতঘরে পরিবারের সবাইকে গালমন্দ ও বসতঘরে ভাংচুরের ব্যাপকতা দেখা দিলে পরিবারের সবাই মিলে তাকে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে।
এদিকে আশু পাটওয়ারীর শ্যালক মো. আমির হোসেন একসময় দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বেশ ক’বছর পূর্বে কাতারে পাড়ি জমান। গত কয়েক মাস পূর্বে তিনি দেশে এসে পাকা বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করেন। এ পরিবারটির উন্নতি সহ্য করতে না পেরে স্থানীয় এক শ্রেণির দুষ্ট প্রকৃতির মানুষ সহজ সরল ভগ্নিপতিকে নানান কথা শিখিয়ে দিয়ে ঝামেলা বাধার চেষ্টা করছেন।ঘটনার শিকার আশু পাটওয়ারী বলেন, দোকানের কাছে গেলে মানুষ আমাকে বলে আমার স্ত্রী নাকি আমার ভায়রা ভাই জহিরের সাথে খারাপ কাজ করে। তাই আমি ঘরে এসে মারধর ও ভাংচুর করেছি। পরে আমার শ্যালক আমির হোসেন ভাই আমাকে মেরেছে। মানুষে কইছে, থানায় অভিযোগ দিছি। আমির হোসেন ভাইয়ে আমাকে ঘর করে দিছে, ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচসহ আমাকে প্রায় সময় টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করেন। অন্যের বুদ্ধিতে সকালে অভিযোগ করেছি। বিষয়টি বুঝতে পেরে বিকেলে অভিযোগ তুলে নিয়েছি। আমি এখনও আমির হোসেন ভাইয়ের কাজ করতেছি।
আশু পাটওয়ারীর স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, আমার বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে কিছুদিন থাকলেও সেখানেও আমার সহজ সরল স্বামী মানুষের সাথে শুধু শুধু ঝগড়া বিবাদ করতো। তাই আমার ভাই আমাকে এ বাড়িতে নিয়ে আসছে। এখানেও কিছু মানুষ আমার স্বামীকে শিখিয়ে দেয় যে, আমার সাথে দুলাভাইয়ের সম্পর্ক রয়েছে। তাকেসহ স্থানীয়দের নিয়ে হায়দরগঞ্জ পীর সাহেবের কাছে গিয়ে কোরআন শরীফ ছুঁয়ে বলেছি, আমার সাথে দুলাভাইয়ের কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই। তবুও তিনি পরিবারে কলহ সৃষ্টি করেন। আমার স্বামীকে নিয়ে আমরা ভালোই ছিলাম। যারা আমার সহজ সরল স্বামীকে কুপরামর্শ দেয়, আল্লাহ তাদের বিচার করুক। এদিকে ভগ্নিপতিকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের কথা স্বীকার করে মো. আমির হোসেন বলেন, আমার ৩ জন ভাগিনা-ভাগ্নির জীবনের কথা ভেবে বোন ও দুলাভাইকে ঘর করে দিয়েছি। জীবনে সঞ্চয় করার জন্যে গরু কিনে দিয়েছি। সেই দুলাভাই মানুষের কথা শুনে আমার বোন, ভাগিনা-ভাগ্নি ও নিজ মাকে মারধর করে। এতে আমি রাগ সামলাতে না পেরে দুলাভাইকে মেরেছি। বিষয়টি আমি ঠিক করিনি বুঝতে পেরে দুলাভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে সমাধান করে নিয়েছি।
আশু পাটওয়ারীর বৃদ্ধা শাশুড়ি আমেনা বেগম বলেন, আমার মেয়ের জামাই সহজ সরল মানুষ হওয়ায় তাকে মানুষ পথেঘাটে যা শিখিয়ে দেয় বাড়িতে এসে তা-ই করে। আমি নিজেও কয়েকবার জামাইর মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। চিকিৎসাপত্র আছে, থানায় অভিযোগ করিনি, যেহেতু জামাইকে ছেলের মতোই স্নেহ করি।
ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. আমজাদ আলী বলেন, এ ঘটনায় সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে আশু পাটওয়ারী। একইদিন বিকেলেই তিনি অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।