প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ১৬:২৬
বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ ছেলের
স্বামী-সতিনের ছোড়া গরম পানিতে ঝলসে গেলো গৃহবধূর শরীর

ফরিদগঞ্জে স্বামী ও সতিনের ছোড়া গরম পানিতে ঝলসে গেছে গৃহবধূর শরীর। মায়ের ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে থানায় এমন অভিযোগ দিয়েছে ছেলে। চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের চরদুঃখিয়া গ্রামের দিঘিরপাড় এলাকায় শুক্রবার (৯ মে ২০২৫) এ ঘটনা ঘটে। শাহানারা বেগম নামের ওই গৃহবধূ গুরুতর আহত অবস্থায় চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে গৃহবধূর ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় পাষণ্ড স্বামীসহ অপরাধীদের বিচারের দাবিতে রোববার (১১ মে ২০২৫) বিক্ষোভ করেছে ওই এলাকার নারীরা। শুধু নারীরাই নয়, এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে এই জঘন্য কাহিনী ঘুরছে। সকলেরই দাবি, ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
প্রত্যক্ষদর্শী, গৃহবধূর স্বজন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৯ বছর পূর্বে ইসলামী শরীয়াহ মতে ওই গ্রামের আব্দুল খালেক রাজার সাথে পাশ্ববর্তী আলোনিয়া গ্রামের ফজল আহমেদের মেয়ে শাহানারা বেগমের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ঘরে ২ সন্তানের জন্ম নেয়। এদের একজন সিফাত বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে হেফজতে পড়ে, যার বয়স ৮ বছর।
আব্দুল খালেক রাজা নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকায় পারিবারিক অশান্তি বিরাজ করছিলো। এই অশান্তি দূর করার জন্যে দুই পরিবারের উদ্যোগে তাকে মধ্যপ্রাচ্য তথা দুবাই পাঠানো হয়। প্রবাস ও বাংলাদেশে আসা যাওয়ার মধ্যেই খালেক রাজা রাবেয়া নামে আরেক নারীকে বিয়ে করেন।
ঘটনার দিন শুক্রবার (৯ মে ২০২৫) দুপুরে আব্দুল খালেক রাজা তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে নিয়ে বাড়ি আসে। এতে সৃষ্ট পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে আব্দুল খালেক রাজা, তার ২য় স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মিলে প্রথম স্ত্রী শাহানারা বেগমকে বেদম মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। এক পর্যায়ে আহতাবস্থায় স্বামীর বসতঘরের সামনে পড়ে থাকা শাহানারা বেগমের শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয় তারা। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
মায়ের ওপর এমন অমানবিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে থানায় অভিযোগ করা কলেজ পড়ুয়া ছেলে মো. সিফাত বলেন, আবার বাবা বিদেশ থাকলেও আমাদের ভরণ পোষণ দিতেন না। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি শ্রমিকের কাজ করে আমাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেছি। বাবা দেশে আসার খবরে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এমন কাজ করবেন ভাবতেও পারিনি। বাবা, সৎ মা ও ফুফুরা মিলে আমার জনম দুঃখী মাকে মারধরের পর শরীরে গরম পানি ঢেলে দিয়েছে। তারা যেই অন্যায় করেছে, তা কোনো সন্তানই মেনে নিতে পারে না।
হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক সন্তান সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমার আম্মুকে আব্বু, ছোট আম্মু, ফুফুরা মিলে অনেক মেরেছে। গ্যাসের চুলায় গরম পানি করে আম্মুর শরীরে ঢেলে দিয়েছে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের সঠিক বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে প্রত্যক্ষদর্শী নারীরা। এ সময় রাজা বাড়িসহ আশপাশের বাড়ির গৃহবধূ কাকলী আক্তার, পাখী বেগম, রিমা আক্তার, অহিদের নেছা, আয়েশা আক্তার, কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আসমা আক্তারসহ অন্যরা বলেন, সেদিন শাহানারার উপর যে নির্মম অত্যাচার হয়েছে, তা আমরা মেনে নিতে পারছি না। তাই আমরা প্রতিবাদ করছি। সেদিনও করেছি, পুলিশ আসার খবরে উপস্থিত হয়ে রোববারও (১১ মে ২০২৫) প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, খালেক রাজার চরিত্রগত সমস্যা দীর্ঘদিনের। শাহানারাকে বিয়ে, তাদের ঘরে সন্তান জন্ম নেয়ার পর এবং সর্বোপরি সে প্রবাসে যাওয়ার পর আশা করছিলাম এই ঘরে শান্তি আসবে, কিন্তু তা হলো না। কী রকম পরিস্থিতি হলে জন্মদাতা পিতার বিরুদ্ধে সন্তানরা অবস্থান নেয়।
এদিকে রোববার (১১ মে ২০২৫) বিকেলে সিফাতের অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে এলাকার নারী পুরুষরা ওই বাড়িতে ভিড় করে। একপর্যায়ে খালেক রাজার পিতা ইসমাইল রাজা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এমনটা জানিয়ে তাকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন তার মেয়ে নুরজাহান বেগম।
শাহানারা বেগমের ভাই নজরুল ইসলাম মিজি জানান, আমার বোনকে যেভাবে মারা হয়েছে, তা মুখে বলার মতো নয়। নানা অত্যাচার সহ্য করে সে স্বামীর সংসার করে গেছে। কিন্তু আজ সেই স্বামী ও সতিনের নির্মমতার শিকার হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।
এদিকে অভিযুক্ত আব্দুল খালেক রাজাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তার বোন নুরজাহান বেগম বলেন, আমার ভাইসহ আমাদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। তিনি আরো বলেন, আমার বড় ভাবীকে অনেক আগেই ভাই তালাকনামা পাঠিয়েছে, তিনি রাখেন নি। তাছাড়া শাহানারা বেগমকে গরম পানি মারা হয়নি। এসব কাজে আমি জড়িত নই।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।