বৃহস্পতিবার, ০৮ মে, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ২১:২৬

পরকীয়াসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া স্ত্রীর অমানবিক কাণ্ড!

মৃত দেখানো গৃহবন্দী মুক্তিযোদ্ধার বাঁধন খুললেন ইউএনও

কৃতজ্ঞতা জানালেন সাংবাদিককে।। সাংবাদিকের জন্যে জেলা প্রশাসকের পুরস্কার ঘোষণা

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট
মৃত দেখানো গৃহবন্দী মুক্তিযোদ্ধার বাঁধন খুললেন ইউএনও

চাঁদপুরে কাগজে কলমে মৃত সুজন তালুকদার নামে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে গৃহবন্দী করে খাটের সাথে বেঁধে রাখার দৃশ্য নিজের চোখে দেখে সে বাঁধন খুলে দিলেন চাঁদপুর সদরের ইউএনও সাখাওয়াত জামিল সৈকত। এ সময় তিনি এই জঘন্য অপরাধের জন্যে দোষীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৮ মে ২০২৫) দুপুরে মিশন রোডে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের আলোকে সুজন তালুকদারের ভাড়া বাসায় সরজমিনে তিনি জীবিত না মৃত সে তদন্তে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব জানিয়েছেন সদর ইউএনও। এ সময় তাঁর সাথে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, মডেল থানার পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন।

ঘটনাস্থলে ইউএনও পৌঁছে সুজন তালুকদারকে একটি কক্ষে খাটের সাথে বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখে স্ত্রী অসীমার ওপর চরম রাগান্বিত হন এবং কীভাবে কাগজে কলমে সুজন মৃত হলেন সেজন্যে তাঁর স্ত্রী অসীমাকে অপরাধী বলে তাকে ভর্ৎসনা করেন। যদিও অসীমা প্রশাসনের লোকজন আসার বিষয়টি টের পেয়ে আগেই বাসা হতে সটকে পড়েন।

ইউএনও সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, যে কোনো জাল কাগজপত্র দাখিল একটি ফৌজদারী অপরাধ। শুনলাম ২০২০ সালেই স্ত্রী অসীমা তার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে জাল কাগজপত্র দাখিল করেছেন। একজন স্ত্রী হয়ে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করার দৃশ্য এটিই আমি প্রথম দেখলাম।সাংবাদিকগণকে ধন্যবাদ এবং আশ্বস্ত করছি, আমরা অসীমার বিরুদ্ধে এ ঘটনায় যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় যাবো।

এ ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই মজিবুর রহমান বলেন, এই মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে যাতে অন্যত্র ওনার স্ত্রী চলে যেতে না পারে এবং তিনিও এখান হতে অন্যত্র যেতে না পারে, একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাকে মেরে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কায় ঊর্ধ্বতনের সাথে আলাপ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখা হবে।

চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখার মোড়ের সোনালী ব্যাংকের শাখা হতে বছরের পর বছর সুজন তালুকদারকে মৃত দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা আত্মসাৎ করছিলেন তার স্ত্রী অসীমা তালুকদার।

এ বিষয়ে এই ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, আমাদের এখানে সুজন তালুকদারসহ মোট ৩৯৫ জন মৃত মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশরা নিয়মিত ভাতা তুলছেন। যারা মাসে ২০ হাজার টাকা, এর সাথে দুই ঈদে ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা ঈদ ভাতা এবং বৈশাখী ভাতা হিসেবে সবাইকে আরও ২ হাজার টাকা করে সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আমাদের এ শাখায় মোট মুক্তিযোদ্ধা ৭২৬ জন। এর মধ্যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ৩৩১ জন। জীবিতদের প্রত্যেককে বিজয় দিবসে ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশ বেশি হওয়ায় মোট উপকারভোগী এখানে ৯৫৭ জন। তবে সুজন তালুকদারের অর্থ একমাত্র ওয়ারিশ হিসেবে তার স্ত্রী অসীমা তালুকদারই তুলেছেন।

এ দিকে সরকারি ওয়েব সাইটে বীর মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমেও দেখা যায় সুজন তালুকদার মৃত। সেখানে তার মুক্তিযোদ্ধার নম্বর হচ্ছে ০১১৩০০০১৬০২ এবং বেসামরিক গেজেট ৫৫ এবং লাল মুক্তিবার্তা ০২০৫০১০২৭০। তাঁর পিতা হচ্ছেন মৃত হরে কৃষ্ণ তালুকদার এবং ঠিকানা হচ্ছে--৬৬, মেথা রোড, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

সুজন তালুকদারের ভাতিজি বিপাশা তালুকদার বলেন, আমার কাকুকে তো কাগজে কলমে মেরে ফেলেছেন কাকী বহু আগে। এখন ওনার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে কাকুকে নিয়ে চাঁদপুর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যাতে সেখানে নির্বিঘ্নে কাকুকে মেরে কোথাও ফেলে দেয়া যায়। উনি মূলত পরকীয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় এমন অমানবিক আচরণ করছেন কাকুর সাথে দীর্ঘদিন।

সুজন তালুকদারের বৌদি কল্পনা তালুকদার বলেন, সুজনকে ঘরে গৃহবন্দী করে রাখে অসীমা। এতে করে সুজনকে কেউ স্বচক্ষে দেখে না বিধায় অসীমা এসব অপকর্ম দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সুজনের নিরাপত্তা চাই। একই সাথে অসীমার মতো প্রতারকের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় পুরো অর্থ ফেরত নেয়া ও তাকেসহ তার সহযোগীদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই অসীমা তালুকদারের। তিনি বলেন, আমি সবাইকে মামলায় জড়াবো। সুজনের চিকিৎসায় সব অর্থ ব্যয় করেছি। বেশি বাড়াবাড়ি কেউ করলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রের সাথে এই প্রতারণার তথ্য সঠিক হলে ওই ভাতা বন্ধসহ সাংবাদিককে বড়ো রকমের পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। প্রতারক যতোই ছলচাতুরির আশ্রয় নিক না কেনো, আমরা বিন্দুমাত্র নমনীয়তা তার সাথে আইনগতভাবে দেখাবো না। অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়