বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১২

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সফল আলোচনা

আল-আজহারে বৃত্তি পেলো ১২৯ বাংলাদেশি

আফছার হোসাইন, মিশর থেকে
আল-আজহারে বৃত্তি পেলো ১২৯ বাংলাদেশি

মিশরের সুপ্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ, ইলমের কা’বা খ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পূর্ণ শিক্ষাবৃত্তি (Full Funded Scholarship) অর্জন করেছেন ১১৯ জন মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। এ সংখ্যা এবার সব বছরের চেয়ে রেকর্ড পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে।

সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক দফতর 'ইসলামী গবেষণা কমপ্লেক্স' তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। প্রকাশিত তালিকায় বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, চীন, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, উজবেকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফিলিস্তিন, থাইল্যান্ড, নাইজেরিয়াসহ মোট ৬৫টি দেশের ৮৮৪ শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশের ১১৯ শিক্ষার্থীর অর্জন নজরকাড়া সাফল্য হিসেবে বিবেচিত।

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পূর্ণ বৃত্তির আওতায় শিক্ষার্থীরা পাবেন প্রতি মাসে ২,৫০০ মিশরীয় পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬,২০০ টাকা), সম্পূর্ণ টিউশন ফি, থাকা-খাওয়া, বিমান ভাড়া, মিশরের ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থানে শিক্ষা সফরসহ আরও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকবে।

এ বছর বৃত্তি বৃদ্ধির পেছনে কূটনৈতিক সাফল্য কাজ করেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে মিশর সফরে এসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমদ তৈয়্যবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্যে বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ জানান। এর আগে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে রিটজ কার্লটন হোটেলে আরেক সাক্ষাৎকালে ড. আহমদ তৈয়্যব বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি বাড়ানোর ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছর সংখ্যাটি রেকর্ড ছাড়িয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীকে পূর্ণ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

মিশরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ছাত্র সংগঠন 'ইত্তিহাদ'-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আবছার উদ্দীন বৃত্তি প্রাপ্তদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তাদের পরীক্ষায় অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেছে। এই উজ্জ্বল সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বছর (২০২৫–২৬ ) মোট ১১৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে পূর্ণ বৃত্তি প্রদান করেছেন।

বাংলাদেশ স্টুডেন্টস্ অর্গানাইজেশন 'ইত্তিহাদ' -এর পক্ষ থেকে আমরা এই মহান উদ্যোগের জন্যে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এই ধরনের সহযোগিতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের শিক্ষার্থীদের আরও উৎসাহিত করবে এবং তাদের একাডেমিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিক সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষায় বাংলাদেশকে উজ্জ্বলভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে, ইনশাআল্লাহ।

আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খলিল মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই পূর্বের বছর সমূহের তুলনায় এ বছর রেকর্ড সংখ্যক বাংলাদেশী ছাত্র স্কলারশিপ পেয়েছে। এজন্যে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি আমি মনে করি এ ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সামনের দিকে চলমান থাকলে অবহেলিত মিশর প্রবাসী বাংলাদেশীরা আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং উভয় দেশের মাঝে সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।

৯৭১ খ্রিস্টাব্দে কোরআন ও ইসলামি আইন শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে আল-আজহার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬১ সালে মিশরের সাবেক রাষ্ট্রপতি জামাল আবদেল নাসের এটিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, কৃষি, অর্থনীতি—এ ধরনের বহুবিধ সেক্যুলার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেন।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৫ হাজারের বেশি শ্রেণিকক্ষে ৩০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক পাঠদান করেন। এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখের বেশি, যার ২০ শতাংশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। প্রায় ১০০টি দেশের শিক্ষার্থী আল-আজহারে শিক্ষা গ্রহণ করছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা মিলিয়ে আল-আজহারের জনবল প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার। আর আল-আজহারের অধীনে পরিচালিত মিশরের প্রায় ৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছেন প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়