প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৮
স্মৃতির পাতায় প্রিয় স্বপন সেনগুপ্ত স্যার

মানুষ মূলত স্নেহ-মায়া-মমতার কাঙাল। আমিও তা-ই। কিছু কিছু মানুষের সংস্পর্শ আশীর্বাদ। সম্মানের আর সংযোজনের। অনেক আলোয় চোখে ধাঁধা লাগে, নিভু আলোয় মূর্ছা যায়। সংগীত নিকেতনের অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় স্বপন সেনগুপ্ত স্যার ছিলেন নির্মল শান্ত আলো, যার সংস্পর্শে হৃদয় শান্ত হতো।
শ্রদ্ধেয় অমল স্যার হলেন আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন গুরু, যার মাধ্যমে স্বপন স্যারের সাথে পরিচয়। বিশেষ করে একবার আবৃত্তির স্কুল খুলবার ব্যাপারে আলাপ করলে স্যার বললেন, সংগীত নিকেতনে আবৃত্তির কর্মশালা শুরু করতে। তারপর সিলেবাস তৈরি করে স্যারকে দিলাম। সময়টা বছরের মাঝামাঝি ছিলো। তাই সে সময় আবৃত্তির কর্মশালা শুরু করা হলো না। আগ্রহী কাউকে তখন তেমন পাওয়া গেলো না। পরবর্তীতে আমিও ঢাকায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, কর্মশালাটা চালু হলো না আর। কিন্তু যা চালু হলো তা হলো আমার প্রতি স্যারের স্নেহ ভালোবাসাময় সুদৃষ্টি। একমাত্র স্যারের কল্যাণে সংগীত নিকেতনের সে সময়ের সব অনুষ্ঠানে আমার আবৃত্তি করা হতো।
পিতৃসুলভ শাসন আর স্নেহের কারণে ঢাকা থেকে দু-একদিনের জন্যে এলেও স্যারের সাথে দেখা করতাম। অনুষ্ঠান গানের হোক, স্মরণসভা হোক, তিনি আমাকে ডাকতেন। ফোন করে বলতেন, ঐ দিন ঐ সময় তোমার কবিতা পড়তে হবে।
একদিন নজরুল স্মরণের অনুষ্ঠানে গান হলো, নাচ হলো, আবৃত্তি হলো। স্যার অনুষ্ঠান শেষে বললেন “ আজকের দিনের সেরা পারফরম্যান্স তোর আবৃত্তি ‘সওগাত’ কবিতা।”
এতো এতো প্রশংসা তিনি করতেন, এতো ভালোবাসতেন যে, একটা সময় আমার যখন চাকুরি ছিলো না, টাটা গ্রপে ওনার ছোট ছেলেকে দিয়ে আমার চাকুরির ব্যবস্থা করবার চেষ্টা করেন।
স্যার খুব উৎসাহ দিতেন আবৃত্তি কিংবা ছবি আঁকায়। এতো এতো প্রশংসা করতেন যে, লজ্জা পেয়ে যেতাম।
বড়ো মানুষদের সান্নিধ্য পাওয়াটাও সৌভাগ্যের ব্যাপার। তার উপর প্রশংসা। আর বড়ো মানুষরা যদি স্যারের মতো এতো উদার ব্যবহারের হয়, তাহলে মহীরুহ হয়ে দাঁড়ায়।
নিজ খরচে নিজ গরজে নিজ আত্মার তাগিদে স্যার রবীন্দ্র নজরুল স্মরণিক অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান করতেন। স্যার এভাবে মূলত বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির ধারণ লালন আর পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। শেষ দু-একটা অনুষ্ঠানের সময় স্যার বলেছিলেন, এখন এতো পরিশ্রম করে পেরে উঠছেন না। শরীরে চাপ পড়ে। স্যার প্রায় অসুস্থ হতেন, ঢাকায় ডাক্তার দেখাতেন। তাই শেষবার অসুস্থতার খবর শুনে খুব একটা আশঙ্কিত হইনি। কিন্তু হঠাৎ তিনি চলে যাবেন তা ভাবতেই পারিনি।
আবেগগুলো সব লেখে বোঝানো যায় না। আমার মনে পিতৃতুল্য যে ছায়া হৃদয়কে পুষ্ট রাখতো, তিনি চলে গেছেন। ভালো থাকবেন স্যার। আপনার যে যে অনুষ্ঠানগুলোতে আমাকে অবশ্যই ডাকতেন, নিজ তাগিদে এখন থেকে সেসব দিনে কবিতা পড়বোই ইনশাআল্লাহ।







