রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৮

কায়রো সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মডেল প্রশংসিত

আফছার হোসাইন, কায়রো থেকে
কায়রো সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মডেল প্রশংসিত

মিশরের নতুন প্রশাসনিক রাজধানী নিউ কায়রোতে অনুষ্ঠিত প্রথম ডি-৮ স্বাস্থ্য মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্য খাতের সাফল্য, উদ্ভাবন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার শক্তিশালী উপস্থাপনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে নজর কাড়ে। “Innovation, Equity and Resilience” শীর্ষক এ উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মো. আবু জাফর। বক্তব্যের শুরুতে তিনি বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে মিশর সরকার ও ডি-৮ সচিবালয়ের আয়োজনকে ধন্যবাদ জানান। প্রফেসর জাফর তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, আলমা-আটা ঘোষণার অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অনেক আগেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে (PHC) জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার কেন্দ্রে স্থান দিয়েছে। বর্তমানে দেশের ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক জনসাধারণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এর ফলে মাতৃমৃত্যু ৭০ শতাংশ, শিশু মৃত্যুহার ৬০ শতাংশ কমে এসেছে এবং গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ বছর—যা “সীমিত সম্পদের একটি দেশের জন্য বিশ্বমানের অর্জন” বলে অভিহিত করেন তিনি।

বাংলাদেশের টিকাদান কর্মসূচি বর্তমানে ৯৫%- এর বেশি কভারেজ ধরে রেখেছে, যা বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে সফল মডেলগুলোর একটি। এছাড়া দেশজুড়ে ৪শ'-এর বেশি NCD কর্নার স্থাপন এবং ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে অ-সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বড়ো অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। কমিউনিটি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্ত করা এবং টেলিহেলথ সেবা সম্প্রসারণকেও তিনি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে তুলে ধরেন। প্রফেসর জাফর বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি আরও স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠনে কাজ করছে। সাম্প্রতিক Joint External Evaluation (JEE) শেষে নতুন পাঁচ বছরের জাতীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা কর্মপরিকল্পনা (NAPHS) প্রণয়ন চলছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) মোকাবিলাতেও বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে কাজ করছে‌ জানিয়ে প্রতিটি নাগরিকের জন্যে শিগগিরই Unique Health ID চালুর ঘোষণা দেন প্রফেসর জাফর।

তিনি জানান, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বর্তমানে দেশের ৯৮% চাহিদা পূরণ করছে এবং ১৬০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে—যা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। ডি-৮ সদস্যদের জন্যে বাংলাদেশের চারটি যৌথ উদ্যোগের প্রস্তাব করেন‌ প্রফেসর জাফর,

১. D-8 Pharmaceutical & Vaccine Alliance,যৌথ গবেষণা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও ভ্যাকসিন-ওষুধ উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে।

২. D-8 Digital Health Collaborative

ডিজিটাল স্বাস্থ্য উদ্ভাবন ও তথ্যভিত্তিক রূপান্তরে যৌথ অগ্রযাত্রার জন্য।

৩. Joint Initiative on Health System Resilience

জলবায়ু অভিযোজন, জরুরি প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উদ্দেশ্যে।

৪. রোহিঙ্গা সংকটে যৌথ সহায়তা

বাংলাদেশ জানায়, মানবিক বিবেচনায় তারা এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে পূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে—যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের দায়িত্ব। এ বিষয়ে ডি-৮ সদস্যদের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়।বক্তব্যের শেষাংশে প্রফেসর জাফর বলেন, কায়রোর এই বৈঠক হোক ডি-৮ সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে আরও ন্যায্য, স্থিতিস্থাপক ও টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়