শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ২০:১১

চাঁদপুরে ওলামা মাশায়েখ ও সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দের 'যৌথ সম্প্রীতি' সভায় সিদ্ধান্ত

ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট।।
ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে

আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)কে নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় চাঁদপুরের ওলামা মাশায়েখ এবং সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দের 'যৌথ সম্প্রীতি' সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর ২০২৫) দুপুরে শহরের পুরাণবাজারস্থ চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় চাঁদপুরে হিন্দু-মুসলমানসহ সকল ধর্মের মানুষের হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব এবং সহাবস্থানকে সুদৃঢ় রাখতে ধর্মীয় মুরুব্বীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি কেউ কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানলে তাকে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করার আশ্বাস ব্যক্ত করেন। তবে এক্ষেত্রে কেউ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়, সেজন্যে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

যৌথ এই সম্প্রীতি সভায় উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখার উপদেষ্টা মাওলানা খাজা আহমদ উল্লাহ, সভাপতি মাওলানা লিয়াকত হোসাইন, সহ-সভাপতি মুফতি সিরাজুল ইসলাম, মাওলানা তোফায়েল আহমেদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতি শাহাদাত হোসেন কাসেমী, মাওলানা মাইনুল ইসলাম, পুরাণবাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইব্রাহিম খলিল মাদানী, হেফাজতে ইসলাম জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক হাফেজ ক্বারী আব্দুর রশিদ আহমেদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফারুক মুহাম্মদ নোয়াইম, সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা আশিকে এলাহী, চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়, সহ-সভাপতি নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী, পরেশ মালাকার, সাধারণ সম্পাদক তমল কুমার ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন সাহা, চাঁদপুর শ্মশান কমিটির সভাপতি খোকন পোদ্দার, সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, সদস্য সচিব মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ।

হেফাজতে ইসলাম চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা লিয়াকত হোসাইন বলেন, গত ক'দিন আগে পুরাণবাজারে একজন হিন্দু যুবক কর্তৃক আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে। এতে আমাদের হৃদয়ে আঘাত লেগেছে। ভবিষ্যতে কেউ যাতে এমন কাজ না করে সেজন্যে আজকে আমরা সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেছি। আমরা উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছি যে, আগামীতে কেউ যদি এমন দুঃসাহস দেখায়, তাহলে সবাই মিলে তাকে আইনের আওতায় তুলে দেবো। পাশাপাশি সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো। তবে কেউ যাতে আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়।

হেফাজতে ইসলাম নেতা এবং ঐতিহাসিক পুরাণবাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইব্রাহিম মাদানী বলেন, আমরা সনাতন ধর্মের নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করছি যে, তাদের ধর্মের সকলে আমাদের কাছে নিরাপদ। আমাদের মাঝে অতীতে যে সম্প্রীতি ছিলো, আগামীতেও তা শতভাগ বজায় থাকবে। ওনারাও যেনো তাদের সম্প্রদায়ের মানুষদের বলে দেন, কেউ যেনো আমাদের নবীজি, ইসলাম এবং কোরআন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য না করে। যদি কেউ করে তাহলে ওনারাও পদক্ষেপ নেবেন। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যেনো এই সম্প্রীতি ও শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, আজকে আমরা চাঁদপুরের ওলামা মাশায়েখদের সাথে আলোচনা সভায় মিলিত হয়েছি। সভায় উভয় পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইন কারো হাতে তুলে নেয়া যাবে না। কেউ যদি ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে তাহলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হবে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেনো আমাদের মাঝে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না হয়। আমরা হিন্দু-মুসলমান চাঁদপুরে মিলেমিশে বসবাস করি। একে অন্যের ধর্মীয় উৎসবে পাশে থাকি। এ সম্প্রীতি কাউকে নষ্ট করতে দেবো না। আমরা আরো বড় পরিসরে আমাদের ধর্মের মানুষদের সাথে বসে তাদের বোঝাবো, কেউ যেনো ধর্ম অবমাননাকর কিছু না করে।

চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ বলেন, আজকে আমরা উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ একসাথে আলোচনায় বসেছি। ওলামা মাশায়েখগণ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, আমাদের সম্প্রদায়ের সকল মানুষ তাদের কাছে নিরাপদ এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে থাকবে। কিছু দুষ্ট লোক যে বিশৃঙ্খলা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই মিলে ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। তবে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবো না, এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার এলাকায়

পৃথক ঘটনায় মহান আল্লাহ ও মহানবী (সা.)কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ম্যাসেঞ্জারে কটূক্তি করার অভিযোগ তোলেন তৌহিদী মুসলমান। এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশও করেন তারা।

অনিক ও জয় বর্মন নামে দু যুবকের বিরুদ্ধে তাদের মোবাইলের আইডিতে লেখা স্ক্রিনশট দেখে ধর্মকে অবমাননার কটূক্তির এই গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর ২০২৫ (সোমবার) পুরাণবাজার নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে জয় বর্মণ নামের এক যুবককে আটক করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতি আর যাতে সৃষ্টি না হয় এ ব্যাপারে সকল ধর্মের মানুষকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়