রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৬

স্বপ্নিল সফর

সুনির্মল দেউরী
স্বপ্নিল সফর

মেঘে মেঘে বেলা গড়িয়ে টিনএজ পেরিয়ে শ্রীমান স্বপ্নিল মণ্ডল এবার কুড়িতে পা দিয়েছে। লেখাপড়ায় মেধার পরিচয় দেবার পাশাপাশি তার খ্যাতি রয়েছে ভ্রমণ বিলাসী হিসেবে। নিজ নামের মত মনও তার স্বপ্নচারী। যার ফলে ইতোমধ্যে দেশের বেশকিছু দর্শনীয় স্থান সে পরিদর্শন করেছে। আর সেই ভ্রমণ বৃত্তান্ত বন্ধুদের মুগ্ধ করার সাথে সাথে জুগিয়েছে উৎসাহও। ছুটিতে বেড়াতে যাবার ধারাবাহিকতায় তার পরিকল্পনা ছিলো এবারে পূজোর ছুটিতে তার বাল্যবন্ধু জয়দেবের সাথে ঘুরতে যাবে।

একই গ্রামের অধিবাসী শ্রীমান জয়দেব ভট্টাচার্য স্বপ্নিলের খেলার সাথী, মাছ ধরার সহযোগী, ভ্রমণসঙ্গী, সতীর্থ ও সহপাঠী হিসেবে বেড়ে উঠেছে। অর্থাৎ তারা ন্যাংটা কালের বন্ধু। এই মানিক-জোড়ের বিচ্ছেদ ঘটে ইন্টারমিডিয়েট শেষে, যখন দুজনার ঠিকানা হয় দুই বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে স্বপ্নিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর জয়দেব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

পূজার ছুটিতে বন্ধুদ্বয় বাড়িতে এসে নির্ধারিত ভ্রমণের এলাকায় কীভাবে সময় কাটাবে তার মহাপরিকল্পনা করে নেয়। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠে পারদর্শী যুবকদ্বয়ের সেই পরিকল্পনায় থাকলো শুভ ষষ্ঠী থেকে আরম্ভ করে মহা বিজয়া দশমী পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ কার্যধারা। সময়ের বণ্টন এতই নিখুঁত করা হয়েছে যে, একটি মিনিটও যেন বাদ না পড়ে, এক মুহূর্তও যেন অযথা নষ্ট না হয়।

এই ভ্রমণ রুটিন প্রস্তুতের একমাত্র কারণ জয়দেবের পৌরোহিত্য। অর্থাৎ শ্রীমান জয়দেব যে এলাকায় একটি মন্দিরে শ্রী শ্রী মা দুর্গা দেবীর অকালবোধনে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করবে, সেই এলাকাই হলো তাদের রেড়ানোর জায়গা। মায়ের পূজার জন্যে নির্ধারিত লগ্ন ও জয়দেবের কর্তব্য শেষে সেই এলাকা পরিদর্শনই হলো তাদের লক্ষ্য।

পুণ্য তিথি এগিয়ে আসার সাথে সাথে পরিব্রাজকদ্বয়ের আয়োজনও এগুতে থাকে সমান তালে। পাঁচ-ছয় দিনের একটি লম্বা সফরের প্রাক্কালে গভীর রাত্রে স্বপ্নিল পূর্ণ প্রস্তুতির শেষ তুলির আঁচড় হিসেবে নিজের লাগেজ চেক করে নিচ্ছে, ভোরেই তাদের শুভযাত্রা। এমন সময় স্বপ্নিলের মুঠোফোনে ভেসে উঠলো জয়দেবের নম্বর। এখন কেন জয়দেবের ফোন আসবে তার কারণ ভেবে পায় না স্বপ্নিল। ফোন রিসিভ করে জিজ্ঞাসু কণ্ঠে সে বললো, “কী হলো এখন আবার?”

স্বপ্নিলের মায়াবী মুখশ্রী নিমিষেই পাংশু হয়ে গেলো। এমন আশঙ্কার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি সে। এক নির্মম বাস্তবতার আবর্তে ঘুরতে লাগলো তার সকল পরিকল্পনা। তাদের এই ফোনালাপে সমাধি রচিত হলো এক ভ্রমণ বিলাসের।

তাদের কথপোকথনের সার সংক্ষেপ ছিলো এরূপ--‘জয়দেবের পিতা শ্রী মনীন্দ্র ভট্টাচার্য মহাশয় আজ সন্ধ্যা বেলা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঐদিকে সুদূর মনোহরপুরের একটি মন্দিরে তার পৌরোহিত্য করার পাকা কথা রয়েছে। একদম শেষ মুহূর্তে সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মহত্যার সামিল। তাছাড়া কথা দিয়ে কথা না রাখতে পারলে তাদের কাছ থেকে নেয়া অগ্রিম সম্মানীর অর্থ ফেরত দিতে তো হবেই, প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে চিরতরে বন্ধ হবে সেখানে পৌরোহিত্য করার সুবর্ণ সুযোগ। এই অবস্থায় জয়দেবের বিশেষ অনুরোধ--স্বপ্নিল যেন তার পিতার সহযোগী হিসেবে মনোহরপুরে যায় এবং তাদেরকে এই মহা বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে সহায়তা করে।’

বাল্যবন্ধুর এহেন বিপদে কোমলমতি স্বপ্নিল হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। দুধের মাছি হওয়া তার স্বভাব নয়। তাই তো বন্ধুদ্বয়ের মহাপরিকল্পনা পায়ে দলে বন্ধুপিতার সাথে মনোহরপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে স্বপ্নিল। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়